ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ার খুটাখালীতে কোরবানি হাটে সারি সারি গরু আছে, ক্রেতা নেই!

সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁহ ::  ‘হ্যা ভাই লাল-কালা গরু, কত সুন্দর লাগের। আয়ুন ভাই-আয়ুন, গরুর বাজারত, চাই চাই লন ’ কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালীর গরুর বাজারে মাইকে এভাবেই সুর করে ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন বিক্রেতারা। রবিবার (৪আগষ্ট) বিকালে সরেজমিন গেলে বিক্রেতারা জানান, দিনভর মাইকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বাজারের উত্তর পাশে ব্রীজের গোড়ায় বেপারিরা হাজার বিশেক দেশি গরু-মহিষ বিক্রির জন্য মজুদ করলেও ক্রেতার দেখা নেই।
স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী ফরিদ জানান, খুটাখালীর কোরবানি পশুর হাটে বেশি আসছে দেশি গরু। বেচা কেনা তুলনামুলক কম।
তবে আগামী বুধবার থেকে পুরোদমে জমে উঠবে বাজার।
সদরের ইসলামপুরের হারুন অর রশিদ। তিনি পেশাদার খামারি। এবার কোরবানি উপলক্ষে বিক্রির জন্য বাজারে অর্ধশতাধিক মহিষ তুলেছেন। তার কর্মচারী হেলালের দাবি, দেশি গরু পর্যাপ্ত বলে সরকার দাবি করলেও এবার মিয়ানমার থেকে বেশি গরু আসছে।
সংকট না হলেও দামও বাড়তে পারে।
তবে খুটাখালী গরুর বাজারের ইজারাদার জানালেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, হাজার বিশেক বিভিন্ন জাতের গরু মহিষ আসছে। তবে কেউ কেউ দেশি গরুর সংকটের কথা বললেও তা মিথ্যাচার। বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ দেশি গরু আছে। দামও আশা করি বাড়বে না।
এছাড়াও বাজার এলাকার বাইরে ছোট বড় আকারের বেশকটি খামার রয়েছে।
ছোট খামারি দেশি গরু বিক্রেতা ছৈয়দ হোসেন বলেন, ‘৫টি বড় সাইজের হৃষ্টপুষ্ট গরু এনেছি। ১ টি খামার থেকে বিক্রি হয়ে গেলেও বাজারে এখনও ক্রেতার দেখা পাইনি।
তিনি আরো বলেন, মোটাতাজা করার জন্য কোনো ট্যাবলেট খাওয়ানো হয় না। আমার গরুগুলোকে দানাদার-পুষ্টিকর খাবার খাওয়াই।’
খুটাখালী কালাপাড়া থেকে আসা গরু বিক্রেতা জহির আহমেদ বলেন, মিয়ানমার থেকে গরু কম আসার খবরে দেশি গরুর বাজারে বেশ উত্তাপ বয়ে যাচ্ছে।
বাজারের বেপারি মোঃ আলী। লাল রঙের বিশাল একটি ষাঁড় দেখিয়ে তিনি বলেন ‘সকালে গোসল করিয়ে গা মুছে দেওয়া, সকাল, দুপুর এবং রাতে খাবার খাওয়ানো সব মিলিয়ে সারা দিন কেটে যাচ্ছে। ক্রেতার আনাগোনা নেই। তবে বুধবার থেকে বাজার জমবে বলে আশা করছি।
ইসলামপুর নতুন অফিসের খামারি আবদুর রহমান জানান, বাজারে অর্ধ শতাধিক গরু বেপারি আছেন। প্রত্যেকেই কমবেশি গরু তুলেছেন। নিজের খামারের গরুগুলোর দাম বেশ ভালো পাবেন বলে আশায় বুক বাঁধছেন রহমান। ‘আমার খামারের গরু দেশি জাতের। দামও নাগালের মধ্যে রাখছি’ বলেন রহমান।
ডুলাহাজারার গরুর খামারি ইলিয়াস বলেন, ‘এক বছর আগে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১০টি গরু কিনেছি। এসব গরু খামারে রেখে তিনবেলা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়াই। মিয়ানমার থেকে গরু কম এলে ক্রেতার কাছে দেশি গরুর কদর সবসময় বেশি থাকে।’
ব্যবসায়ীরা জানান, ছোট আকারের দেশি গরু ৫০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। মাঝারি আকারের ৮০ থেকে ১ লাখ টাকা কিংবা আরও বেশি। বড় গরু দেড় লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা।
গরুর দাম বেশি কি না জানতে চাইলে করিম নামে এক বেপারি বলেন, ‘কোরবানির পশুর দাম নির্ভর করে এর সৌন্দর্যে। ওজন বা বাজারে মাংসের দামের ওপর নির্ভর করে না।’
তবে কিছু ব্যবসায়ীর দাবি, সীমান্ত দিয়ে এখনও মিয়ানমার গরু দেশে আসছে।
তারপরও দেশি গরু যেন ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে থাকে সেই চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন বেপারিরা।
খুটাখালী গরুর বাজারের ইজারাদার জানান, বাজারে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে পুলিশ প্রশাসন। বসানো হয়েছে জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিন।
চকরিয়া থানা পুলিশ জানিয়েছেন, ক্রেতা-বিক্রেতা এবং পশুর নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। বাজার জুড়ে সাদা পোশাকের পাশাপাশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।

পাঠকের মতামত: