ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

চকরিয়ায় দালালদের দখলে সরকারী হাসপাতাল সড়ক : প্রতারিত হচ্ছেন রোগীরা

এম মনছুর আলম, চকরিয়া ::  কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতাল সড়ক এখন একাধিক সংঘবদ্ধ দালাল চক্রের দখলে। বিভিন্ন ল্যাব ও ফার্মেসী গুলোতে অখ্যাত চিকিৎসকদের চেম্বারকে ঘিরে এখানে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে অন্তত অর্ধ শতাধিক দালাল চক্র। এসব দালালদের বাঁধা টপকিয়ে সরকারি হাসপাতালে কিংবা বেসরকারী হাসপাতাল-ক্লিনিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে কোন রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে যেতে পারছেন না বলে অভিযোগ ভোক্তভোগীদের। ডাক্তার দেখালে দিব্যি তাঁরা রোগী নিয়ে টানাটানিতে প্রতিযোগীতায় নেমে পড়েন। এমনকি বিভিন্ন প্রকার ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য ভাল মানের ল্যাব খুঁজতে গেলে সেখানেও বিপাকে পড়েছেন রোগী ও স্বজনরা। এ অবস্থায় সচেতন মহল হাসপাতাল সড়ক থেকে দালাল মুক্ত করতে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি তুলেছেন। ভুক্তভোগী রোগী ও স্বজনদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কয়েকদিন ধরে চকরিয়া সরকারি হাসপাতাল সড়কে সরেজমিন ঘুরে দেখে এসব তথ্যের সত্যতা চোখে পড়েছে।

জানা গেছে, কক্সবাজার স্বাগতিক উপজেলা চকরিয়া। সর্বসাধারণের চিকিৎসার জন্য এখানে ১০০শয্য বিশিষ্ট সরকারী হাসপাতাল। চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, লামা ও আলীকদমসহ ৬টি উপজেলার ৩০লাখ মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসার ভরসা এটি। সরেজমিনে দেখা গেছে, এই হাসপাতালটি ঘিরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বৈধ ও অবৈধ ফার্মেসী, ল্যাব ও ক্লিনিক। এসব প্রতিষ্ঠানে বসেন খ্যাত-অখ্যাত চিকিৎসকরা।

জানা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসকদের ঘিরে অসংখ্য দালাল চক্র। সাধারণ রোগীরা তাদের কাঙ্খিত চিকিৎসক বা প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা সেবা নিতে আসলেই প্রথমেই দালাল চক্রের বাধার সম্মুখিন হতে হয়। রোগী যেখানে যেতে চান সেখানে নিবে বলে দালালে নিয়ে যায় অন্য চিকিৎসকে কাছে।

তবে অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা শহরে চিকিৎসাখাতে ব্যাপক অগ্রযাত্রা হলেও এখানে কিছু কিছু অখ্যাত চিকিৎসক ও নিন্মমানের প্যাথলজি সেন্টারের কারনে সফলতা ভেস্তে যেতে চলছে। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতাল সড়কের ফার্মেসী গুলোতে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা অখ্যাত চিকিৎসকদের চেম্বারকে ঘিরে চলছে রমরমা চিকিৎসা বাণিজ্য। অভিযোগ রয়েছে, এসব ফার্মেসীতে রোগী ভাগিয়ে নিতে বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে অন্তত অর্ধ শতাধিক দালাল। প্রায় প্রতিদিনই দালাল চক্রের সদস্যরা ব্যস্ত থাকেন রোগী নিয়ে টানাটানিতে। দালালদের খপ্পরে পড়ে প্রতিদিন কোন না কোন রোগী সর্বশান্ত হয়ে বাড়ি ফিরছে।

ভুক্তভোগী অনেক রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, তাঁরা সরকারি হাসপাতালে কিংবা বেসরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা নিতে গিয়ে হরখামেশা দালালদের টানাটানি শিকার হওয়ার পাশাপাশি শারীরিকভাবে অনেককে লাঞ্চিতও হচ্ছেন। এমনকি ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য ভাল মানের কোন ল্যাবে যাওয়ার চেষ্ঠা করলেও দালালদের বাঁধা ও প্রলোভনের ফাঁেদ পড়ে নিন্মমানের প্যাথলজি গুলোতে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বেশির ভাগ রোগী ভাল মানের চিকিৎসা পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ করছেন। দালালদের উৎপাত ও হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে চকরিয়া সরকারী হাসপাতাল সড়কে দালাল চিহ্নিত করে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার জোর দাবি করেছেন সচেতন মহল।

চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মুহাম্মদ মাইন উদ্দিন মোরর্শেদ বলেন, হাসপাতাল সড়কে রোগী নিয়ে টানাটানির ঘটনাটি অনেক পুরানো। এ ধরণের অপতৎপরতা বন্ধ হওয়া উচিত। কারন রোগী ও স্বজনদের ইচ্ছা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে তাঁরা চিকিৎসা নেবে। কিন্তু টানাটানির কারনে তাকে বাধ্য হয়ে অখ্যাত চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়। তিনি বলেন, এ বিষয়টি স্থায়ীভাবে সমাধান করতে হলে অবশ্যই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে হবে।

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোহাম্মদ শাহবাজ বলেন, ‘হাসপাতালে একটি দালাল চক্র চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের বিভ্রান্ত করে নানা বিড়ম্বনায় ফেলে। এতে করে রোগীদের অর্থ অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘রোগী কোন ডাক্তারের কাছে যাবে, ডাক্তার কোনো পরীক্ষা দিলে তা কোন ল্যাবে করতে হবে, প্রেসক্রিপশনে লেখা ওষুধ কোন ফার্মেসি থেকে কিনতে হবে তা নির্ধারণ করে দেয় এসব দালালরা। এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে দালাল চক্রকে আটকও করা হয়ে ছিল। তবে তারা প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে সহজেই ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। তিনি খুব শিঘ্রই এ ব্যাপারে হাসপাতাল থেকে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া হবে।’#

পাঠকের মতামত: