ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

আজ ফাসিয়াখালী-কৈয়ারবিল ইউপির উপনির্বাচন, প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতি, ভোটার ১৬৮৮১জন, কৈয়ারবিলে ইবিএম পদ্ধতি ও ফাসিয়াখালীতে ব্যালটে ভোট গ্রহন

গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী সাংবাদিক মাইন উদ্দিন শাহেদ (আনারস) ও ফরিদুল আলম চৌধুরী (মোটরসাইকেল)।

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::

আজ বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে ও কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদের ৯নম্বর ওয়ার্ডে মেম্বার পদে অনুষ্ঠিত হবে উপ-নির্বাচন। ফাসিয়াখালীতে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ৮জন ও কৈয়ারবিলের একটি ওয়ার্ডে মেম্বার পদে নির্বাচনে আছেন চারজন প্রার্থী। ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রে ভোট দেবেন ১৫ হাজার ১০ জন নারী-পুরুষ ভোটার ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে ভোট দেবেন ১৮৭১জন নারী-পুরুষ ভোটার।

তবে চকরিয়া উপজেলায় প্রথমবারের মতো কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ওই একটি কেন্দ্রে ইবিএম পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে ভোট গ্রহন। ফাসিয়াখালীর ৯টি কেন্দ্রে ব্যালটের মাধ্যমে চেয়ারম্যান পদে ভোট দেবেন সাধারণ ভোটাররা।

নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রির্টানিং কর্মকর্তা ও চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ফাসিয়াখালীতে রয়েছেন মোট ৮জন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। ইউনিয়নের ৯টি ভোটকেন্দ্রের ৩২টি বুথে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ১৫০১০ জন নারী-পুরুষ ভোটার। পুরো ইউনিয়নে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন একজন জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ও ৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। তাদের তত্বাবধানে ভোট কেন্দ্রে নিয়োজিত থাকবেন ২০ সদস্যের এক প্লাটুন বিজিবি। এছাড়া পুলিশের তিনটি স্ট্রাইকিং ফোর্স কেন্দ্রের বাইরে এবং প্রতিকেন্দ্রে একজন অফিসারের নেতৃত্বে ৫ জন পুলিশ ও ১২জন আনসার সদস্য স্থায়ীভাবে নিয়োজিত থাকবেন।

তিনি বলেন, গতকাল বুধবার বিকালে ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সকল ধরণের সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে এসব সরঞ্জাম গ্রহণ করেছেন।

একইদিন কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য পদে অনুষ্ঠিত হবে উপ-নির্বাচন। এখানে ইভিএমএর মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ। সেখানেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।

এদিকে উপজেলার দুইটি ইউনিয়ন পরিষদের উপ-নির্বাচন উপলক্ষে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুদ্দিন মুহাম্মদ শিবলী নোমান। তিনি বলেন, সাধারণ ভোটাররা প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিরাপদ পরিবেশে যাতে পছন্দের প্রার্থীকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেইজন্য প্রশাসনের পক্ষথেকে সবধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠ নির্বাচন উপহার দিতে প্রশাসন বদ্ধপরিকার। তাই নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটার কিংবা প্রার্থীদেরকে বিচলিত হবার কোন কারণ নেই।

প্রশাসনের পক্ষথেকে সুষ্ঠ নির্বাচরে আশ^াস থাকলেও নিরাপদ পরিবেশে ভোটদান নিয়ে ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের সাধারণ ভোটারদের মাঝে একধরণের ভীতি ও শঙ্কা বিরাজ করছে। পাশাপাশি আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ব্যথিত অপর প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের মধ্যে যত ভয় তাঁড়া করছে ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের অতীতের নির্বাচনী ইতিহাসের পর্যালোচনা করে। প্রার্থীদের অভিযোগ, অতীতের নির্বাচন গুলো আমাদেরকে এখনো পীড়া দেয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার বহুল আলোচিত ইউনিয়ন ফাঁসিয়াখালী। এ ইউনিয়নের ইতোপূর্বের নির্বাচন নিয়ে মানুষের মাঝে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। হয়তো ভোটের আগের রাতে না হয় ভোটের দিন সকাল ১০টার মধ্যেই ভোট শেষ হয়ে গিয়েছিল ওইসব নির্বাচনে। তখনকার নির্বাচনগুলোতে প্রভাবশালী মহল কারচুপির মাধ্যমে জনরায় ছিনিয়ে নিয়েছিলে।

এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ফাসিয়াখালী ইউপির উপ-নির্বাচনেও সরকারি দলের প্রার্থী ছাড়া অন্যান্য প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীদের মনে ভয় ও আতঙ্ক কাজ করছে।

উপ-নির্বাচনে আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সাংবাদিক মাইন উদ্দিন মুহাম্মদ শাহেদ ও মোটর সাইকেল প্রতীকের ফরিদুল আলম অভিযোগ করেছেন, ৯ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে যাদেরকে নিয়োগ করা হয়েছে তারা সকলেই সরকারি কর্মকর্তা। তাই এসব প্রিসাইডিং অফিসার গুলো সরকারি দলের লোকজন ও প্রার্থীর অনুগত। মূলত তাদের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ শুরুর আগের রাতে (বুধবার) এবং ভোট চলাকালীন যে কোন সময় প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট কারচুপির নীলনক্সা করে রেখেছেন।

তারা জানান, এসব বিষয় কয়েকদিন আগে থেকে নির্বাচন কমিশন, জেলা প্রশাসক, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। দাবি করা হয়েছিল, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতি কেন্দ্রে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ব্যালট পেপার ভোট শুরুর আগেই কেন্দ্রে সরবরাহ করতে। কিন্তু তাদের এই দাবির কোনটিই পূরণ করা হয়নি। এতে এখানে আদৌ সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কী-না তা নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা কাজ করছে তাদের মাঝে।

তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ভোট হবে উৎসবমুখর পরিবেশে। রাতে বা দিনের বেলায় কোন কারচুপির সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না। এর পরও যদি এ ধরণের ঘটনা ঘটে তাহলে সাথে সাথেই ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করে দেওয়া হবে। সেভাবেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দায়িত্বপালনে নিয়োজিত প্রিসাইডিং অফিসারদের।’

তিনি বলেন, ‘প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সরকারি কর্মকর্তারা। তাই তাদেরকে দেওয়া কঠোর নির্দেশনা পালনে ব্যর্থ হলে সেই দায় তাদেরই এবং সেভাবেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে তাদের বিরুদ্ধে।’

চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, ফাসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের উপ-নির্বাচনে মোট ৮জন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। তাঁরা হলেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী সাংবাদিক মাইন উদ্দিন মুহাম্মদ শাহেদ (আনারস) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদুল আলম চৌধুরী (মোটরসাইকেল), ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মোঃ নাজমুল হাসান লিটন (ঘোড়া), সহ-সভাপতি হাসনাত মোহাম্মদ ইউসুফ (রজনীগন্ধা), যুবলীগ নেতা রিদুয়ানুল হক মজিদি (চশমা), ইউপি সদস্য রফিক আহমদ (টেলিফোন) ও মোঃ ইখতিয়ার উদ্দিন (অটোরিকসা)।

অপরদিকে কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের উপ-নিবাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চার প্রার্থী। তারা হলেন নুরুল ইসলাম (মোরগ), মো.সাইফুল ইসলাম (ফুটবল), নাছির উদ্দিন (তালা) ও মো.মনছুর আলম (টিউবওয়েল)।##

পাঠকের মতামত: