ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউপির উপ-নির্বাচন কাল: প্রার্থীদের যত ভয় আজ রাতকে ঘিরে

ছবির ক্যাপশন- নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের পক্ষে প্রচারণায় কক্সবাজার-১ আসনের এমপি জাফর আলম।

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::

কক্সবাজারের চকরিয়ার আলোচিত ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত চার বারের ভোট নিয়ে বহু অভিজ্ঞতা রয়েছে মানুষের। কোনবারই পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারেনি ভোটাররা। মানুষের মাঝে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। হয়তো ভোটের আগের রাতে না হয় ভোটের দিন সকালের মধ্যেই ভোট শেষ হয়ে গিয়েছিল ওইসব নির্বাচনে। তখনকার নির্বাচন গুলোতে প্রভাবশালী এক প্রার্থী বার বার কারচুপির মাধ্যমে জন রায় ছিনিয়ে নিয়েছিলে। এ কারণে ক্ষুদ্ধ ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের মানুষ। এই অবস্থায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই উপ-নির্বাচনেও একই প্রভাবশালী ব্যক্তি সরকার দলের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন।

ইতোমধ্যে প্রচার হয়ে গেছে, যে কোন উপায়ে প্রশাসনের সহায়তায় তাকেই নির্বাচিত করবেন। কারণ তার সাথে রয়েছেন কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য। তিনিও গত কয়েকদিন ধরে যথেষ্ট কষ্ট করছেন তার বলয়ের নৌকার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিনকে যে করেই হউক জিতিয়ে আনতে। এ কারণে অন্যান্য প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীদের মনে ভয় ও আতঙ্ক কাজ করছে।

উপ-নির্বাচনে আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাইন উদ্দিন মুহাম্মদ শাহেদ ও মোটর সাইকেল প্রতীকের ফরিদুল আলম অভিযোগ করেছেন, ৯ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে যাদেরকে নিয়োগ করা হয়েছে তারা সকলেই সরকারি কর্মকর্তা। তাই এসব প্রিসাইডিং অফিসার এমপি এবং প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের অনুগত। মূলত তাদের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ শুরুর আগের রাতে (আজ) এবং ভোট চলাকালীন যে কোন সময় প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট কারচুপির নীলনক্সা করে রেখেছেন বলে আশংকা করা হচ্ছে।

তারা জানান, এসব বিষয় কয়েকদিন আগে থেকে নির্বাচন কমিশন, জেলা প্রশাসক, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। দাবি করা হয়েছিল, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতি কেন্দ্রে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ব্যালট পেপার ভোট শুরুর আগেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে সরবরাহ করতে। কিন্তু তাদের এই দাবির কোনটিই পূরণ করা হয়নি। এতে এখানে আদৌ সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কী-না তা নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা কাজ করছে তাদের মাঝে।

তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘ভোট হবে উৎসবমুখর পরিবেশে। রাতে বা দিনের বেলায় কোন কারচুপির সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না। এর পরও যদি এ ধরণের ঘটনা ঘটে তাহলে সাথে সাথেই ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করে দেওয়া হবে। সেভাবেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দায়িত্বপালনে নিয়োজিত প্রিসাইডিং অফিসারদের।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সরকারি কর্মকর্তারা। তাই তাদেরকে দেওয়া কঠোর নির্দেশনা পালনে ব্যর্থ হলে সেই দায় তাদেরই এবং সেভাবেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে তাদের বিরুদ্ধে।’

তারা বলেন, ‘আগের মতো রাতের আঁধারে বা দিনের বেলায় প্রকাশ্যে ভোট কারচুপি করা এখানে হলে আইন-শৃক্সক্ষলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটবে। যা কোন অবস্থাতেই কাম্য নয়।’

নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, নির্বাচনে মোট ৮জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। ইউনিয়নের ৯টি ভোট কেন্দ্রের ৩২টি বুথে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ১৫০১০ জন নারী-পুরুষ ভোটার। নির্বাচনে একজন বিচারিক ও ৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এক প্লাটুন বিজিবি সদস্য নিয়ে দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া পুলিশের তিনটি স্ট্রাইকিং ফোর্স কেন্দ্রের বাইরে এবং প্রতিকেন্দ্রে একজন অফিসারের নেতৃত্বে ৫ জন পুলিশ ও ১২জন আনসার সদস্য স্থায়ীভাবে নিয়োজিত থাকবেন। এদিকে একইদিন কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য পদে অনুষ্ঠিত হবে উপ-নির্বাচন। এখানে ইভিএমএর মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ।

পাঠকের মতামত: