ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

সাগরে মাছ শিকারে নামছে কক্সবাজার জেলার ৫ হাজার বোট ও অর্ধ লক্ষাধিক জেলে

বিশেষ প্রতিবেদক ::

বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা ২৩ জুলাই রাত ১২টায় শেষ হচ্ছে। ২৪ জুলাই থেকে সমুদ্রে মাছ ধরতে পারবে কক্সবাজার জেলার ৫০ হাজারের বেশি জেলে এবং ৫ হাজার বোট মালিক।এদিন থেকেই সকল কাঠ বডি ট্রলারসহ সব ধরনের নৌযান সমুদ্রে মাছ ধরতে যাবে।

সামুদ্রিক মত্স্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে,কয়েক বছর ধরে শুধু বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাখা হতো। তবে চলতি মৌসুম থেকে সব ধরনের নৌযানের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। সমুদ্রে মাছের প্রজনন মৌসুম সামনে রেখে মাছের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন বাড়াতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়। উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত ২০ মে থেকে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।

ইলিশের জাটকা নিধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সফলতাকে অনুসরণ করে বঙ্গোপসাগরে মৎস্যসহ মূল্যবান প্রাণিজ সম্পদের ভান্ডারের সুরক্ষায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি চিংড়ি, কাঁকড়ার মতো ক্রাস্টেশান আহরণও রয়েছে এই নিষেধাজ্ঞার আওতায়। সমুদ্রে মৎস্য আহরণ নিষেধাজ্ঞার ফলে মাঝি-মাল্লারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুইমাস পর্যন্ত মৎস্য খাতের উপর নির্ভরশীল মানুষকে নিদারুন কষ্টভোগ করতে হয়। অবশেষে সেই দুইমাসের সময় সীমা শেষ হয়েছে। এখন জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা প্রস্তুত হযেছে। ২৪ জুলাই থেকে সাগরে মাছ আহরনে যাবে সব জেলে ও মাঝি। মাছ ধরার ট্রলারগুলো আগে থেকে রয়েছে প্রস্তুত।

জেলা ফিসিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক মোস্তাক আহমদ বলেন, অর্ধ লক্ষাধিক জেলে হলেও জেলায় মৎস্য সেক্টরে জড়িত রয়েছে ৫ লক্ষাধিক মানুষ। এই ৫ লাখ মানুষ দীর্ঘ দুইমাস অপেক্ষা করেছে, ধৈর্য্য ধরেছে। এখন সবাই আশা করছেন আগের চেয়ে মাছ আহরণ বেশি হবে। তা না হলে দুইমাসে কষ্ট লাগব হবেনা। আর নিষেধাজ্ঞার সময় সীমা শেষ হওয়ায় দুই মাস পর মাছ আহরন না করার কারনে সাগর থেকে বেশি মাছ পাওয়া যাবে এমন বড় আশায় বুক বেধেছেন জেলারা। কিন্তু ‘জলদস্যু’ নিয়ে অধিকাংশ জেলে আতঙ্কে। মাছ ধরে উপকূলে ফেরার সময় একাধিক জলদস্যু বাহিনী লুটপাট চালাতে পারে।

কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছটার জেলে আবদুল খালেক জানান, ৬৫ দিন মাছ আহরণ বন্ধ থাকায় মাছের মজুত ও আকৃতি দুটোই বেড়েছে।কক্সবাজার উপকূল এখন ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছে ভরপুর।আর তাই সাগরে জাল ফেললেই ধরা পড়বে ইলিশ, লাক্ষ্যা, কোরাল, পোপা, গুইজ্যাসহ নানা প্রজাতির মাছ।সেই মাছ বিক্রির টাকায় দূর হবে আমাদের জেলেপল্লীর অভাব-অনটন।তাই আমাদের লক্ষ্য এখন ইলিশ ধরা।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট পরিচালিত গবেষণামতে মে মাসের শেষের দিক থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে বিচরণরত মাছসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণির প্রজননকাল। একারণেই সাগরের মৎস্যসহ বিভিন্ন মূল্যবান প্রাণিজ সম্পদ রক্ষার পাশাপাশি ভা-ার বৃদ্ধিতে দীর্ঘসময় মাছ আহরণের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকার। এরই আলোকে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস.এম. খালেকুজ্জামান জানান, আগে সমুদ্রে বিভিন্ন প্রকার বড়বড় মাছ পাওয়া যেত। যা এখন পাওয়া যায়না। এসব মাছের প্রজনন সময় ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয় । দীর্ঘ দুইমাস মাছ আহরণ বন্ধ থাকায় এখন সাগর মৎস্য ভান্ডারে পরিণত হয়েছে। বড় আকারের মাছসহ প্রচুর মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি বলেন, জেলায় ৪৮ হাজার ৩৯৩ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। এছাড়াও অনিবন্ধিত জেলে রয়েছে অনেক। দুই মাস মাছ আহরণ বন্ধ থাকার কারনে এসব জেলেসহ সংশ্লিষ্ট সবাই উপকৃত হবেন। ইতিমধ্যে অনেকে প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছেন। জেলেরা প্রাপ্তবয়স্ক মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরলে বাজারের মাছের সংকট দূর হবে।

পাঠকের মতামত: