ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ায় কোটি টাকা বরাদ্দের সড়ক সংস্কারে অনিয়ম দূর্নীতি!

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::   কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় এবার কোটি বরাদ্দের সড়ক সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। উপজেলা প্রকৌশলী জাহেদুল আলম চৌধুরীর সাথে আঁতাত করে কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদার সড়ক সংস্কারে এ ধরনের অনিয়ম দূর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ রাজাখালী আরবশাহ্ বাজার থেকে টৈটং এবং মৌলভীবাজার হয়ে পেকুয়া যাওয়ার সড়ড়টি সংষ্কারের জন্য প্রায় কোটি টাকা বরাদ্দের বাজেটে এলজিইডি থেকে কার্যাদেশ পান চকরিয়ার ঠিকাদার ফরিদুল আলম নামের এক ব্যক্তি। কিন্তু সড়ক সংস্কারের শুরু থেকেই অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছিলেন ঠিকাদার। এ নিয়ে স্থানীয়রা কয়েকবার পেকুয়া উপজেলা প্রকৌশলী জাহেদুল আলম চৌধুরী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবদুল আলীমকে মৌখিকভাবে অবহিত করলেও তারা সড়ক সংস্কাওে অনিয়ম বন্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। গত এক মাস পূর্বে ঠিকাদার রাজাখালী আরবশাহ বাজার সড়কে দায়সারাভাবে কার্পেটিং ও সড়কের সাইটে ব্লক বসানোর কাজ শেষ করে। সড়কে কার্পেটিংয়ের পাশাপাশি সড়কের পাশে ব্লকও বসানো হয়েছে শিডিউল বহির্ভূতভাবে। ব্লক তৈরীতেও নি¤œমানের উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। শিডিউলে উল্লেখিত সাইজের ব্লকও তৈরী করে বসানো হয়নি।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, কার্যাদেশ প্রাপ্ত ঠিকাদার চকরিয়ার ফরিদুল আলম ঘুষের বিনিময়ে পেকুয়া উপজেলার বিতর্কিত প্রকৌশলী জাহেদুল আলম চৌধুরীকে ম্যানেজ করায় সড়ক সংষ্কারে ব্যাপক অনিয়ম হলেও তিনি নিরব রয়েছেন। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, রাজাখালী আরবশাহ বাজার-নাপিতখালী ব্রীজ পর্যন্ত সংস্কারকৃত সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ফাটল ধরেছে। নি¤œমানের পাথর, বালু ও উপকরণ ব্যবহার করায় সড়কের কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান। সড়ক সংষ্কারের কাজ শেষ হতে না হতেই সড়কে ফাটল-ধস ও কার্পেটিং উঠে যাওয়ায় স্থানীয়রা পেকুয়া এলজিইডির ঘুষখোর ও দূর্নীতিবাজ প্রকৌশলী জাহেদুল আলম চৌধুরীর দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলাকে দায়ী করেছেন। সরকারী দায়িত্বে পালনে অবহেলা করে ঠিকাদারকে সড়ক সংস্কাওে দূর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকায় পেকুয়া এলজিইডির ঘুষখোর ও দূর্নীতিবাজ প্রকৌশলী জাহেদুল আলম চৌধুরীর অপসারণসহ তাকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করার দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

এ সব বিষয়ে জানার জন্য ১৯ জুলাই বিকালে এ প্রতিবেদকের মুঠোফোন থেকে পেকুয়া উপজেলা প্রকৌশলী জাহেদুল আলম চৌধুরীর ব্যবহৃত ০১৮১৩-৬৯২৯৪০ ও ০১৭০৮-১৬১২৭৬ নাম্বারে বহুবার ফোন বক্তব্য নেওয়ার জন্য চেষ্টা করা হলেও তিনি প্রতিবেদকের ফোন রিসিভ না করা বক্তব্য সংযুক্ত করা সম্ভব হয়নি।

রাজাখালী ইউনিয়নের আরবশাহ বাজার এলাকার বাসিন্দা আরশাদ উল্লাহ ইস্পাত অভিযোগ করে জানান, রাজাখালী আরবশাহ বাজার-নাপিতাখালী সড়কে নিম্নমানের উপকরণ সামগ্রী ব্যবহার করে রাস্তার কাজ করা হয়েছে। পুরানো রাস্তার বিটুমিন মাখানো পাথর তুলে তাতে নতুন করে বিটুমিন দিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া প্রয়োজনের তুলনায় কম বিটুমিন ব্যবহার করে কার্পেটিং করা হয়েছে। সড়ক সংষ্কারে লোনা পানি ব্যবহার ও নি¤œমানের উপকরণ ব্যবহার করায় সড়কের মাঝখান থেকে কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। হালকা ওজনের একটা গাড়ি গেলে দেবে যাচ্ছে সড়ক।

সড়ক সংষ্কারে এ ধরনের অনিয়মের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পেকুয়া এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবদুল আলীম জানান, রাজাখালী আরবশাহ বাজার-নাপিতখালী-মৌলভীবাজার সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। তিনি সরেজমিনে গিয়ে এসবের ছবিও উঠিয়েছেন। তিনি আরো জানান, সম্প্রতি বৃষ্টিপাতের কারণে বিভিন্ন পয়েন্টে কার্পেটিং উঠে যাওয়ায় তা পুন:সংস্কারের জন্য তিনি ঠিকাদারকে জানিয়েছেন।

এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলা এলজিইডি অফিসে উপজেলা প্রকৌশলী পদে জাহেদুল আলম চৌধুরী যোগদান করার পর যেসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে, সবকটি কাজ অনিয়ম হয়েছে। কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারের কাছ থেকে কাজের বিল দেওয়ার সময় নির্দিষ্ট হারে কমিশন নেওয়ায় ঠিকাদারগণ নি¤œমানের কাজ করতে বাধ্য হন বলে কয়েকজন ঠিকাদার জানিয়েছেন। পেকুয়া এলজিইউডির উন্নয়ন কাজ তদরাকীতে চরম অবেহলা করে সরকারের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন করছেন প্রকৌশলী জাহেদুল আলম চৌধুরী।

পাঠকের মতামত: