ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় আবারো বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি, ডুবে গেছে বসতঘর

চকরিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির রূদ্রমূর্তি ধারণ করেছে। ডুবে গেছে বসতঘর। ছবিটি পৌরসভার ভাঙ্গারমুখ এলাকা থেকে তোলা।

এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া

লাগামহীণ ভারী বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের চকরিয়ায় আবারো ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে বন্যা। এতে অব্যাহত রয়েছে ভারী বর্ষণ। আশংকা রয়েছে পাহাড় ধসের। বন্যা পরিস্থিতির ঘটেছে চরম অবনতি। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ ১৭টি অভ্যান্তরীণ সড়কের উপর দিয়ে ঢলের পানি প্রবাহিত হওয়ায় যান চলাচল বিঘিœত হচ্ছে।

মাতামুহুরীতে ঢলের পানির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার কারনে গতকাল থেকে ফের উপজেলার অন্তত ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঢলের পানিতে তলিয়ে অভ্যন্তরীন সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। পানি প্রবেশ করায় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্টান অঘোষিত বন্ধ রয়েছে। ঢলের ভেসে নিখোঁজ রয়েছে এক যুবক। গতকাল রোববার বিকাল পাঁচটার দিকে মাতামুহুরী নদীর ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার প্রায় এক মিটার উপর দিয়ে ঢলের পানি প্রবাহিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা শাখা কর্মকর্তা (এসও) এসএম তারেক বিন সগীর।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে চকরিয়া উপজেলার লাখো মানুষ পানিবন্দি ছিলো ৩দিন। শনিবার পানি নামতে শুরু করেছিলো। কিন্তু শনিবার দিবাগত রাতে পার্বত্য উপজেলার লামা ও আলীকদমে অতি বর্ষণ হলে রবিবার ভোররাতে ভয়াবহ ঢল নামে চকরিয়ায়। মাতামুহুরী নদীর দু’কুল উপচিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ কার পানি বসতঘরে ডুকতে শুরু করে রাত দেড়টা থেকে। মাত্র দু’ঘন্টার মধ্যেই পাহাড়ি গ্রাম ছাড়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও চকরিয়া পৌরসভার সিংহভাগ অংশে বসত বাড়িতে কয়েক ফুট পানি উঠে।

রোববার দুপর থেকে বিকাল পর্যন্ত উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের নীচু এলাকার শত শত বাড়িতে ৪-৫ ফুট পানি উঠে। চকরিয়া পৌরসভার ভাঙ্গারমুখ মজিদিয়া মাদরাসার পাশের এলাকায় অন্তত ৩০ থেকে ৪০টি বসতঘর পানিতে ডুবে গেছে। পাশাপাশি দু’উপজেলার অভ্যন্তরীন সকল সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় ঢলের পানিতে সড়ক ডুবে যাওয়ায়।

সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, চকরিয়ার বমুবিলছড়ি, সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, চিরিংগা, সাহারবিল, পূর্ব ভেওলা, পশ্চিম বড় ভেওলা, বিএমচর, কোণাখালী, ডুলাহাজারা-খুটাখালী, ঢেমুশিয়া, বদরখালী ও চকরিয়া পৌরসভা এবং পেকুয়ার উজানটিয়া, মগনামা, সদর ইউনিয়ন, শিলখালী, বারবাকিয়া, টৈটং ও রাজাখালী ইউনিয়নের পাহাড়ি গ্রাম ছাড়া সমতলের সিংহভাগ ঘরে পানি উঠেছে।

বানের পানিতে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী ও হারবাং এলাকা। চকরিয়া-পেকুয়ার সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্টান অঘোষিত বন্ধ হয়ে পড়েছে ঢলের পানি প্রবেশ করায়। তন্মধ্যে চকরিয়া সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ আকম গিয়াস উদ্দিন কলেজের ভিতরে-বাইরে প্লাবিত হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম পানি না কমা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন।

কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শওকত ওসমান বলেন, এই ইউনিয়নটি পাহাড়ি ঢলে হিট পয়েন্টে পড়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে প্রপার কাকারায়। বেড়িবাঁধ ও গাইডওয়াল ভেঙ্গে ও লোটনী-হাজিয়ান দিয়ে মাতামুহুরীর পানি পাড়া গায়ে প্রবেশ করে।

শুধুমাত্র কয়েকটি পাহাড়ের বাসিন্দা ব্যতিত এই ইউনিয়নের অন্তত অর্ধ লক্ষ মানুষ এখ পানিবন্দি। কার্পেটিং, ব্রিকসলিং, প্লাডসলিং ও গ্রামের কাঁচা-রাস্তাগুলো ঢলের তুড়ে কমবেশি ভেঙ্গে গেছে। পানি কমলে ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। এরই মধ্যে এই ইউনিয়নে প্রায় ৪ হাজার ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে।

কোনাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার বলেন, প্লাবিত এলাকায় টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ায় ও ঘরের পানি উঠায় রান্না করতে না পেরে খাবার ও পানীয়জলের সংকট দেখা দিয়েছে। ওপোষ রয়েছে অত্যাধিক পানি উঠা গ্রামের মানুষ।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, মাতামুহুমী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী দু’দিন পর বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

কক্সবাজারের আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘন্টায় স্থানীয় আবহাওয়া অফিস ৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। অব্যাহত ভারী বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসের সতর্কতাও জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিং করতে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। প্রথম দফার বন্যায় প্লাবিত পরিবারগুলোর জন্য জেলা প্রশাসন থেকে বরাদ্দপ্রাপ্ত চাল-ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বন্যার ভয়াবহতা জানিয়ে গতকাল জেলা প্রশাসনের কাছে দূর্গত মানুষের জন্য আরো ত্রাণ সাহায্য নিশ্চিত করতে অবগত করা হয়েছে। আশাকরি বরাদ্দ পাওয়া গেলে আমরা দূর্গত জনপদের প্রতিটি এলাকায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবো। #

পাঠকের মতামত: