ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

বেপরোয়া হয়ে উঠেছে খরুলিয়ার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী পুতু বাহিনীর পুইত্যা

নিজস্ব প্রতিনিধি, কক্সবাজার ::

মাদক বিরোধী জোরালো অভিযানের মধ্যেও কক্সবাজার সদর থানাধীন ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া এলাকায় অপ্রতিরোধ্য গতিতে চলছে মাদক ব্যবসা। মাদক ব্যবসায়ীদের উৎপাতে আতঙ্কের মধ্যে দিনরাত পার করছে এলাকাবাসী। যুবক শ্রেণীকে নিয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে অভিভাবক মহল।

সম্প্রতি খরুলিয়া এলাকার ভুমিদস্যু এবং ছেলেদের বহু অপকর্মের আশ্রয়-পশ্রয়দাতা ইউসুফ আলীর ছেলে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী শওকত আলী পুতু (পুইত্যা ৩৭) ও তার স্ত্রী, এবং তার বাহিনীর দাগী সন্ত্রাসী রাজামিয়া, সাদ্দাম এবং মেহেদী ও অন্যান্য সহযোগীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। এ অবস্থায় দ্রুত চিহ্নিত এসব মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ আঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খরুলিয়া গরুর বাজারে দুর-দুরান্ত থেকে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাকে ডাকাতি, ছিনতাই ও জোরপূর্বক আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করে পুতু বাহিনী। তাছাড়া ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া বাজার পাড়া, হিন্দু পাড়া, নয়াপাড়া, মুন্সীর বিল, সিকদার পাড়া, ভুত পাড়া, কোনার পাড়া, মাষ্টার পাড়া, সুতারচর, ঘাটপাড়া ও চেযারম্যান পাড়া এলাকাসহ পুরো বৃহত্তর খরুলিয়ায় দীর্ঘ একযুগ থেকে মাদক সম্রাজ্য গড়ে তোলে পুতু ও বাহিনী।

বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা, মদ, গাঁজা, ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক দ্রব্যের ব্যবসা চালিয়ে আসছে তারা। মাদক ব্যবসা, আধিপত্য বিস্তার, ছিনতাই ও ডাকাতির ভাগভাটুয়ারা নিয়ে প্রায় সময় তাদের মধ্যে হামলা, সংঘর্ষ ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে এলাকার আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়। তাদের অত্যাচারে এলাকাবাসী আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। বর্তমানে ইয়াবায় সয়লাব হয়ে গেছে খরুলিয়া এলাকার অলিগলি।

হাত বাড়ালেই যে কেউ পাচ্ছে মরণ নেশা ইয়াবা। ফলে যুব সমাজকে নিয়ে চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন দিন কাটাচ্ছেন অভিভাবকরা। সম্প্রতি পুলিশের বিশেষ অভিযানে মাদক সম্রাট পুতু বাহিনীর দুই সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রালয়ের তালিকাভূক্ত মাদক সম্রাট ও কক্সবাজার মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেটের প্রধান লিয়াকত ও দেলোয়ার গ্রেপ্তার হলেও পুতু বাহিনীর প্রধান পুতু ও তার দুই সহযোগী রাজাইয়া, সাদ্দাইম্ম্যা উল্লিখিত আরোও সাঙ্গপাঙ্গরা এলাকাতে বেপরোয়া হতে দেখা গিয়েছে।

মাদক সম্রাট পুতু ও তার স্ত্রী অপ্রতিরোধ্য গতিতে অনেকটা নির্বিঘ্নে বাসায় বসে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসা চালিয়ে যচ্ছে। তাদের বর্তমানে প্রধান আস্তানা বাজারপাড়ার তার বাড়ি সহ আশপাশের এলাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, খরুলিয়া এলাকার একাধিক অভিভাবক সাংবাদিকদের জানান, প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে দু’-একজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করলেও পুতু বাহিনীর প্রধান পুইত্যা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা মাদক ব্যবসা অব্যাহত রাখেছে। ফলে মাদক ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তাছাড়া গ্রেপ্তাকৃত মাদক ব্যবসায়ীরা দু’-এক মাস জেল খেটে বেরিয়ে এসে পুনরায় মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। এসব মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন স্থানীয় অভিভাবকরা। সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে এসব মাদক ব্যবসায়ীকে প্রয়োজনে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলারও দাবি জানান স্থানীয়রা।

৮, ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুর রশিদ ও শরীফ উদ্দিন বলেন, খরুলিয়ার এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম পুতু বাহিনী, ডাকাতি, খুন, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা সবকিছুতেই সিদ্ধহস্ত তারা। পুতু ও তার লোকজন দিনদুপুরে মহাসড়কের উপরে ছিনতাই করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। শুধু তা নয়, দিনে দুপুরে মহাসড়কের পাশে তার বাড়িতে চলে ইয়াবা বেচাকেনা ও মাদকের আসর। কেউ কিছু বলার সাহস করেনা, কারণ যারা প্রতিবাদ করে পরে তাদের অমানবিক নির্যাতন করে। এবং বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। তারা আরোও বলেন, তাদের অত্যাচারের হাত থেকে বৃহত্তর খরুলিয়াকে বাঁচাতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর স্বারকলিপি দিয়েছি আমরা।

জানতে চাইলে ঝিলংজার ইউপি চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, ইয়ার প্রভাবে পুতু বাহিনীর প্রধান পুইত্যার উত্থানের যাত্রা হয়। আমি এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে একাধিকবার তাদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আটক করার চেষ্টা করি, উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়, মাদকবিরোধী অভিযানের প্রথমদিকে কিছুদিন গা ঢাকা দেয়, অভিযান ঝিমিয়ে পড়ায় ফিরে এসে আরোও বেপরোয়া হয়ে উঠে সে। জানা গেছে, সদর থানায় ডাকাতি, মাদক, ছিনতাই ও হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে পুতু ও তার বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে।

এবিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন চকরিয়া নিউজকে বলেন, জনপ্রতিনিধিদের সহযোগীতা ও ঘটনার সত্যতা পেলে তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি এ্যাকশন শুরু হবে।

পাঠকের মতামত: