ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়া-পেকুয়া ও লামায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি স্বামী-স্ত্রীসহ নিহত ৪, আহত ৬

মো. সাইফুল ইসলাম খোকন, চকরিয়া ॥ মাতামুহুরী নদীর দু’ তীরবর্তী বান্দরবনের লামা ও কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ায় সমুদ্রে পূর্নিমার জোয়ার থাকার কারণে অস্বাভাবিক ভাবে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ৩ উপজেলার নিন্মঞ্চালে বসবাসরত হাজার হাজার বন্যার্থ মানুষের দূর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

দেখা গেছে, অধিকাংশ এলাকায় খাবার পানির নলকূপ পানিতে ডুবে থাকায় বিশুদ্ধপানির তিব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রামীণ অভ্যান্তরিন সড়ক গুলো পানিতে ডুবে থাকায় মানুষের কষ্টের শেষ নেই। আজ রোববার (১৪ জুলাই) রাত ২টায় লামা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড পশ্চিম মধুঝিরি এলাকায় পাহাড় ধসে বসতবাড়িতে মাটি চাপা পড়লে নুরজাহান বেগম (৫৫) নামে এর নারী মারা যায় ও একই পরিবারের ৬ জন আহত হয়েছেন।

অপরদিকে চকরিয়া উপজেলার পূর্ববড়ভেওলার আটারকুম এলাকায় সকাল ১০টায় পানিতে ভেসে আসা কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে রিয়াজ উদ্দিন (২২) নামে এক যুবক পানিতে ভেসে মারা গেছে। ভেসে যাওয়া যুবক ওই ইউনিয়নের দেয়ারচর এলাকার জামাল উদ্দিনের পুত্র। তার লাশ এখনো পাওয়া যায়নি।

এছাড়া উপজেলার দূর্গম পাহাড়ী এলাকা বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ডের বমুরকুল এলাকায় পাহাড় ধসে একই পরিবারের স্বামী ও স্ত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার গভীর রাত দুই টার দিকে ঘটনাটি ঘটে।

পাহাড় ধসে নিহতরা হলেন, বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ডের বমুরকুল এলাকার দিনমুজুর মোহাম্মদ ছাদেক (৩৬) ও তাঁর স্ত্রী ওয়ালিদা বেগম (২২)। নিহত ছাদেক পেশায় একজন দিনমজুর। তিনি কয়েক বছর আগে আলীকদম উপজেলা থেকে বমুরকুল এলাকায় গিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসতঘর গড়ে তোলেন।

বমুবিলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মতলব পাহাড় ধসে স্বামী-স্ত্রী নিহতের ঘটনার সত্যতা চকরিয়া নিউজকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, টানা কয়েকদিন ধরে পাহাড়ে ভারী বৃষ্টি হচ্ছিল। রবিবার ভোর রাতেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। শনিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে ইউনিয়নের বমুরকুল এলাকায় পাহাড় ধসে একটি বসতঘরের ওপরে পড়ে। এ সময় ঘুমন্ত অবস্থায় মাটি চাপা পড়ে ওই পরিবারের স্বামী-স্ত্রী মারা যান। স্থানীয় লোকজন মাটি সরিয়ে তাঁদের লাশ উদ্ধার করে। পাহাড় ধসের সময় বসতঘরটিতে স্বামী-স্ত্রী ছাড়া আর কেউ ছিলেন না বলে জানাগেছে।

টানা বর্ষণে ২য় বারের মত বড় ধরনের বন্যায় প্লাবিত হয়েছে বান্দরবানের লামা-কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ায় উপজেলা। রোববার ভোররাত থেকে অস্বাভাবিক গতিতে বাড়তে থাকে মাতামুহুরী নদী ও ছড়া খালের পানি। লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল জানান, মুহুর্তে উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজারের অধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। লামা বাজার সহ আশপাশের সকল এলাকায় পানিতে ডুবে যায়।

নিহত পরিবারের মাঝে সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ তার পরিবারকে নগদ ২৫ হাজার টাকা ও আহত হিসেবে তার ছেলে ও ছেলের বউকে ৫ হাজার করে ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া তাদের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

অপরদিকে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ৬লাখ মানুষের মধ্যে নিন্মঞ্চালের বসবাসরত প্রায় ১লাখ মানুষ বন্যা ও বৃষ্টিতে জমে থাকা পানিতে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

পেকুয়া উপজেলার ৭ ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার এখন পানি বন্দি। এ দু’উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে সামান্য শুকনো খাবার ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের মাঝে যে পরিমান চাল বিতরণ করা হয়েছে তা খুবই নগণ্য বলে বলে বন্যার্তরা জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত: