ঢাকা,শনিবার, ৪ মে ২০২৪

জেলায় পল্লী চিকিৎসকদের দৌরাত্ম্য

মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার :: নিম্নমানের অপ্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করছে পল্লী জেলার চিকিৎসকরা। শুধু মাত্র অখ্যাত ঔষধ কোম্পানী থেকে মোটা অংকের মাশোহারা আদায় এবং নিজেদের আখের গোছাতে গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করছে অধিকাংশ পল্লী ডাক্তার। ফলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গ্রামের সাধারণ মানুষের আর্থিক অপচয় হওয়ার পাশাপাশি শারিরিক ভাবেও মারাত্বক ঝুকির মধ্যে পড়ে যায় বলে মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। আর নিজের নামের আগে ডাক্তার এবং প্রেসক্রিপসন লেখার নিয়ম না থাকলেও তা না মেনে জেলার প্রায় ৩ হাজার পল্লী চিকিৎসক প্রতি নিয়তই সাধারণ মানুষকে ঠকাচ্ছেন বলে জানান তারা। আর সব কিছু জেনেই চোখ বন্ধ করে থাকেন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তর জেলা ঔষধ প্রশাসন। ফলে গ্রামের সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়তই চিকিৎসার নামে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে  আড়াই বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে ভর্তি আছেন খুরুশকুলের মোহছেনা বেগম কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,ছেলের কয়েকদিন ধরে গায়ে জ¦র,প্রথমে স্থানীয় গ্রাম্য ডাক্তারকে দেখালে তিনি দুটি এন্টিবায়োটিক সহ ৪ প্রকার ঔষধ দিয়ে বলেছেন এখনকার ভাইরাস জ¦র এন্টিবায়োটিক ছাড়া যাবেনা। সেই ঔষধ ৫ দিন খাওয়ার পর ছেলের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে ছেলের নড়াচড়াও বন্ধ হয়ে গেছে। পরে এখানে নিয়ে এসেছি এখানকার ডাক্তার বলেছে অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক খাওয়ার ফলে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ সময় আরো বেশ কয়েকজন একই অভিযোগ করে বলেন,গ্রামের ডাক্তার গুলো যে কোন বিষয়ের ঔষধ দেওয়ার আগে দামি এন্টিবায়োটিক দেয়। নীচে নেমে রামুর আবদুল্লাহ নামের একজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে তার মেয়ের চোখে ২ সপ্তাহ হচ্ছে চুনা পড়েছে। স্থানীয় এক ডাক্তারকে দেখালে সে একটি চোখের ড্রপ দিয়েছে। সেটা ব্যবহারের পরও কোন লাভ না হওয়াতে সদর হাসপাতালে এনেছি এখানে একজন পরামর্শ দিল বায়তুশ শরফে নিয়ে যেতে। এ সময় সমিতি পাড়ার আছিয়া খাতুন (৪৫) নামের এক মহিলা বলেন,বেশ কিছুদিন ধরে আমার পেট কামড়াচ্ছে, সমিতির পাড়ার স্থানীয় পল্লী ডাক্তার থেকে ঔষধ নিয়ে কয়েক বার খেয়েছি তিনি বেশ কয়েকটি এন্টিবায়োটিকও দিয়েছেন কিন্তু কোন কাজ হয়নি বরং পেট কামড়ানো বেড়েছে। পরে সদর হাসপাতালে টিকিট নিয়ে ডাক্তার দেখালে তিনি এন্টিবায়োটিক খাওয়াতে আমাকে বকা দিয়েছে,তিনি শুধু মাত্র কৃমির ঔষধ দিয়েছে ১০ টাকার সেটা খেয়ে এখন আমার খুব ভাল লাগছে। এখন আমার আরেক প্রতিবেশিকে নিয়ে এসেছি। তিনি বলেন গ্রাম্য ডাক্তার গুলো সবাই খারাপ আমি সেই কথা বলবো না তবে না বুঝে অনেক সময় ঔষধ দেয় এটা সত্য। এদিকে সদর হাসপাতালের বেশ কয়েকজন ভোক্তভোগীর সাথে আলাপ কালে তাৎক্ষনিক বেশ কয়েকজন পল্লী চিকিৎসকের নাম পাওয়া গেছে যারা অপ্রয়োজনীয় নি¤œমানের এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করে রোগিদের কাছ থেকে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এর মধ্যে সমিতির পাড়ার তুষার এবং প্রদীপ।কলাতলীর নিতাই চন্দ্র ধর,নুরে ইলাহী,নুর মোহাম্মদ,ঈদগাও এলাকার আবদুস সালাম,ঈদগাও মাইজ পাড়া এলাকার এরশাদ এবং তার ভাই খোকন,খুরুশকুল ইউনিয়নের টাইম বাজার এলাকার টিটু,পলাশ,একরাম,বঙ্গবন্ধু বাজার এলাকার মহিদুল আলম,সনজিৎ,মৃদুল এবং পাল পাড়া বাজারের মোহাম্মদ নুর।পিএমখালী ইউনিয়নের জুমছড়ি এলাকার গোরাঙ্গ দাশ, বাংলাবাজার এলাকার সুব্রত কুমার বিশ্বাস প্রকাশ আস্তক বাবু, বাংলাবাজার এলাকার জাফর, সুইস গেইট এলাকার আহামদুর রহমান,নুর মোহাম্মদ চৌধুরী বাজারের হারুনুর রশিদ,নুরুল ইসলাম,চেরাংঘাটা এলাকার যুগেস,শামসুল ইসলাম। মরিচ্যা বাজার এলাকার অরুপ শর্মা, টিপু,আবদু শুক্কুর ধেচুয়া পালং,নছরুল্লাহ মরিচ্যা বাজার। রামু চৌমুহনীর সুজিত শর্মা,আশোক কুমার বৈদ্য,কাজল মল্লিক,মহেশখালীর গোরকঘাটা এলাকার প্রদীপ কুমার দাশ,ফিরোজ খান আদালত সড়ক,বড় মহেশখালী নতুন বাজার এলাকার সিরাজুল হক সিরাজ,আমিনুল ইসলাম,গোরঘাটার ছলিমুল্লাহ খান।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার গ্রাম ডাক্তার কল্যাণ সমিতির সভাপতি ডাঃ চন্দন কান্তি দাশ বলেন, এটা সত্য স্বাস্থ অধিদপ্তর থেকে আমাদের কোন স্বীকৃতি নেই। তবে আমরা এল,এম,এফ কোর্স সম্পন্ন করে জেলা সিভিল সার্জন কর্তৃক সার্টিফিকেট নিয়েছি। এছাড়া আরো অনেক ধরনের সনদ আছে। সরকার সহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আমাদের বিনিত আহবান আমাদের কোন একটি গ্রহনযোগ্য সমাধান দেওয়া হওক। আমার কোথায় যাব কি লিখব বা কি করতে পারবো বা কি পারবো না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ শাহীন আবদুর রহমান বলেন,প্রতিদিন এরকম রোগি হাসপাতালে আসছে যারা ঔষধের কারনে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত। আর সব চেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে আল ফুয়াদ হাসপাতালের পাশে একজন চেম্বার খোলে বসেছে তার নাম শাহীন আবদুর রহমান। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি সে ৮ম শ্রেনীও পাস করেনি। অভিযান হলে পালিয়ে যায় আবার আসে। ঝিলংজা পাওয়ার হাউজের পাশে গিয়াস উদ্দিন কুতুবী এবং খুরুশকুলে একজন ভুয়া এমবিবিএস পদবী ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারনা করছে। তিনি বলেন, হাই কোর্টের নির্দেশনা মতে শুধু মাত্র এমবিবিএস এবং বিডিএস পাস ছাড়া কেউ নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারবে না। আর প্রেসক্রিপসন লিখতে পারবে না। কিন্তু কেউ সে আইন না মেনে প্রতিনিয়তই বীর দর্পে সব কাজ করে যাচ্ছে যা দেখার দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসনের।
রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মেজবাহ উদ্দিন আহামদ বলেণ,অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক ব্যবহার অবশ্যই শরীরের জন্য খারাপ। তার উপর যদি নি¤œমানের কোন অখ্যাত কোম্পানীর হয় তাহলে সেটা কোন কাজেই আসবে না। মূলত অনেকে গ্রামের সহজ সরল মানুষের সাথে প্রতারণামূলক ভাবে নি¤œমানের ঔষধ ধরিয়ে দিয়ে টাকা আয় করছে। এটা মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করার মত অপরাধ।
এ ব্যপারে বক্তব্য নেওয়ার জন্য জেলা ঔষধ তত্বাবধায়ক প্রিয়াংকা পালের মোবাইলে অসংখ্যবার চেস্টা করেও ফোন রিসিভ করেননি তিনি।

পাঠকের মতামত: