ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়া-পেকুয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বানের পানিতে ভাসছে ৩ লাখ মানুষ, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি ::  একটানা কয়েকদিনের বর্ষণ ও পার্বত্য অববাহিকার মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। গতকাল সকালের দিকে পানি একটু কমে আসলেও আজ ১৩জুলাই সকাল থেকে ফের পানি বাড়তে শুরু করেছে।   এতে দুই উপজেলার প্রায় ৩ লাখ মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায় দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছেন। উপজেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো কয়েকফুট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায়।

এ অবস্থায় রান্নাবান্না করতে না পারায় তীব্র খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছেন এসব মানুষ। কোন কোন ইউনিয়নে সড়ক ও বেড়িবাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে গেছে দুই উপজেলার দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ভেসে গেছে বিভিন্ন পুকুরের মৎস্যভাণ্ডার ও তলিয়ে গেছে প্রায় ৩০ হাজার একর জমির সবজিসহ বিভিন্ন রকমারী ফসলের ক্ষেত।

সরেজমিন জানা গেছে, পাঁচদিন একনাগাড়ে বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে দুই উপজেলার নিম্নাঞ্চলে আঘাত হানলেও বুধবার রাত থেকে অতি ভারী বর্ষণের কারণে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুই উপজেলার অন্তত ২০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার সিংহভাগ বানের পানিতে তলিয়ে যায়। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পতিত হয়েছেন প্রায় ৩ লাখ মানুষ।

কাকারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শওকত ওসমান জানান, অতি ভারী বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি ছিকলঘাট-কাকারা-মানিকপুর ও প্রপার কাকারা-মেনিবাজার মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল ইসলাম ছিদ্দিকী সড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে এসব সড়কের বিভিন্নস্থানে ভেঙে গিয়ে হু হু করে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে বানের পানি। এই অবস্থায় ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে সময় পার করছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো ধরণের ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়নি।

সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম চকরিয়া নিউজকে বলেন, মাতামুহুরীর বানের পানির প্রথম ধাক্কাটি এসে লাগে আমার ইউনিয়নে। বুধবার রাতের অতি ভারী বর্ষণের কারণে আমার ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো ৫ থেকে ৬ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ।

লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের গোলাম মোস্তফা কাইছার, কৈয়ারবিলের মক্কী ইকবাল, বরইতলীর জালাল আহমদ সিকদার, হারবাংয়ের মিরানুল ইসলাম মিরান চকরিয়া নিউজকে জানান, মাতামুহুরী নদী ও বিভিন্ন ছড়াখালের পানিতে তাদের ইউনিয়নের অন্তত অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। তীব্র সংকটে ভুগছেন খাবার ও বিশুদ্ধ পানির।

বরইতলীর চেয়ারম্যান জানান, তার ইউনিয়নের সবকটি অভ্যন্তরীণ সড়ক দিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় রসুলাবাদ, ডেইঙ্গাকাটা, পহরচাঁদাসহ ১০টি গ্রামের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে জানান, পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দিগরপানখালী ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কোচপাড়া পয়েন্টে মাতামুহরী নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে অসংখ্য বসতবাড়ি। ওই এলাকার এক নম্বর গাইড বাঁধটি হুমকির মুখে পড়ায় নদীতীরের মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

অপরদিকে পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়ন, রাজাখালী, মগনামাসহ সবকটি ইউনিয়নের অন্তত লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিরা নিশ্চিত করেছেন।

চকরিয়ার ইউএনও নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, ইতিমধ্যে বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা সরজমিন পরিদর্শন করেছি। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বন্যা মোকাবেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে সিপিপি সদস্যরা কাজ করছে।

চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী চকরিয়া নিউজকে বলেন, বন্যাসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। সার্বক্ষণিক খোঁজ নেওয়া হচ্ছে কোথায় কি অবস্থা। যেসব এলাকা বানের পানিতে তলিয়ে গেছে সেখানকার মানুষ যাতে খাবার ছাড়া না থাকে সেজন্য জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার ১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম চকরিয়া নিউজকে বলেন, চকরিয়া ও পেকুয়ার বানভাসী একটা মানুষও যাতে অভুক্ত না থাকে সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বন্যাকবলিত এলাকায় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি বিতরণের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তবে একটু ধৈর্য সহকারে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে আমাদের সকলকে।

পাঠকের মতামত: