ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

টিএন্ডটি পাহাড় কেটে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে জেলা প্রশাসকসহ ১৫ জনকে বেলার আইনী নোটিশ

বিশেষ প্রতিবেদক ::
কক্সবাজারের টিএন্ডটি পাহাড় হিসেবে পরিচিত ঝিলংজা মৌজার সংরক্ষিত বনভূমির আরএস ৮০০১ দাগের পাহাড় কর্তন, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ ও নির্মিত সকল স্থাপনা উচ্ছেদের দাবীতে ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গনপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কউক চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ১৫ জনকে আইনী নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। সোমবার রেজিস্ট্রি ডাকযোগে পাঠানো এ নোটিশে পাহাড় ও বনভূমি ধ্বংসের সাথে জড়িত দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানানো হয়। এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ নোটিশ প্রেরণের ৭ দিনের মধ্যে অবহিত করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় এলাকাবাসীর পরিবেশগত অধিকার ও জনস্বার্থ রক্ষার স্বার্থে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুশিয়ারি দেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেলা ও সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ কবীর।
নোটিশে বলা হয়েছে, ‘দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী পাহাড় বা টিলা কাটা/মোচন করা নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পাহাড় কেটে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার ক্ষতি সাধন করা জরিমানা যোগ্যও বটে। তাছাড়া আদালতের একাধিক নির্দেশনা প্রতিপালন সাপেক্ষে জিলনজা মৌজায় বিদ্যমান পাহাড় ও বনভূমি সংরক্ষণ না করা, উল্লেখিত মৌজায় বিদ্যমান সকল স্থাপনা উচ্ছেদ না করা এবং দোষী ব্যক্তিদের যথাযথ শাস্তি প্রদান না করা দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম অবজ্ঞা ও আদালত অবমাননার শামিল। আইন অনুযায়ী পাহাড় ও বনভূমি সংরক্ষণ করে দেশের পরিবেশ, প্রতিবেশ ব্যবস্থা ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা সংশ্লিষ্ঠদের দায়িত্ব হলেও তা পালনে তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।’
যাদের কাছে নোটিশ পাঠানো হয়েছে তারা হলেন, ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গনপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, প্রধান বন সংরক্ষক, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক, কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড কক্সবাজার উপবিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক (টেলিকম)।
নোটিশে বলা হয়, পরিবেশগত তাৎপর্য বিবেচনায় কক্সবাজার জেলার সমুদ্র সৈকত ও সংলগ্ন সবুজ পাহাড়ী বনভূমি সরকার কর্তৃক ১৯৯৯ সালে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত সংকটাপন্ন এলাকার মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলাধীন ঝিলংজা মৌজা। ইতোপূর্বে ১৯৩৫ সালে সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জিলনজা মৌজার আর, এস ৮০০১ দাগের ১২৪.৩৫ একর ভূমি রক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করে। মনুষ্যসৃষ্ট নানা কর্মকা-ের দরুন পরিবেশগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ এ জেলাটি পাহাড় ও বন হারিয়ে তার আকর্ষণ সম্পূর্ণরূপে হারাতে বসেছে। রক্ষিত ঘোষিত ১২৪.৩৫ একর বনভূমি, পাহাড় ও বনজ সম্পদ ধ্বংসের বিরুদ্ধে ও কর্তনরোধে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) হাইকোর্ট বিভাগে ১১২১০/০৬ নং রীট মোকদ্দমা দায়ের করে। বেলার মামলার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিভাগ গত ৮ জুন, ২০১১ তারিখে রক্ষিত ও প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষিত আর এস ৮০০১ দাগে অবস্থিত পাহাড় ও বনভূমি রক্ষার আদেশ দেন। উল্লেখিত মামলা ছাড়াও একই মৌজার ভিন্ন ভিন্ন পাহাড় রক্ষায় নোটিশকারী সংগঠন একাধিক মামলা দায়ের করে। মামলার প্রাথমিক ও চুড়ান্ত শুনানি শেষে উচ্চ আদালত পাহাড় বা পাহাড়ের অংশ বিশেষ কর্তন না করার নির্দেশ দিয়ে রায় বা ক্ষেত্রমতে আদেশ প্রদান করেন। একই বিষয়ে আদালতের একাধিক নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও সম্প্রতি জিলনজা মৌজার আর, এস ৮০০১ দাগের ১২৪.৩৫ একর রক্ষিত বনভূমি কেটে স্থাপনা নির্মাণ করছে মর্মে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড কক্সবাজার উপবিভাগের ক সহকারী ব্যবস্থাপক (টেলিকম) কর্তৃক ০৬ মে, ২০১৯ তারিখে প্রেরিত এক পত্রে উল্লেখ করা হয়। বেলা প্রতিনিধি এলাকাটি সরেজমিন পরিদর্শন করে। কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল উল্লেখিত রক্ষিত বনভূমির পাহাড় কেটে বহুতল ভবন ও টিনসেড স্থাপনা নির্মাণ করছে মর্মে পরিদর্শনে প্রতীয়মান হয়।’
কক্সবাজারের পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) এর নির্বাহী পরিচালক ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, ‘রক্ষিত ঘোষিত ১২৪.৩৫ একর বনভূমি, পাহাড় ও বনজ সম্পদ ধ্বংসের বিরুদ্ধে ও কর্তনরোধে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) মামলা দায়ের করেছিলো ২০১১ সালে। ওই মামলার পর সেখানে আরও দুই শতাধিক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে আরও কিছু স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগের।’

পাঠকের মতামত: