ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ড্রেনের পানি ঘরে ঘরে, অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে দখলদারদের হুঁশিয়ারি প্যানেল মেয়রের

ইমাম খাইর, কক্সবাজার :কক্সবাজার পৌরসভার নালা-নর্দমা, ড্রেন দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে বসতবাড়ি ও দোকানপাট। তাতে পানি চলাচল করতে না পেরে বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ছে ময়লাযুক্ত পানি। সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে জমে থাকছে পানি। এসব অবৈধ দখলদারদের কারণে একদিকে যেমন জনদুর্ভোগ বাড়ছে, অন্যদিকে স্বাস্থ্যকর নগরীর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হচ্ছে দিনদিন।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দূর্বলতার সুযোগে দখলদাররা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এলাকাবাসী বারবার তাগাদা ও অভিযোগ করলেও কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।
শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে বৃষ্টির কারণে কক্সবাজার শহরের এন্ডারসন রোড, পান বাজার সড়ক, বাজারঘাটা, রুমালিয়ারছড়াসহ প্রায় এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শহরের রুমালিয়ারছরায় পানিতে উল্টে গেছে সিএনজি অটোরিক্সাসহ বেশ কয়েকটি ছোটখাটো যানবাহন। একই ঘটনা ঘটেছে বাজারঘাটায়।
কক্সবাজার শহরের নুরপাড়ার বেহাল অবস্থা। শহরের অভ্যন্তরের এই ওয়ার্ডটিতে যেন কোন অভিভাবক নেই। এলাকাবাসীর দুঃখ, নাকে তেল মেখে ঘুমাচ্ছে জনপ্রতিনিধিরা। তাদের ভোটের আগের পরের চরিত্রের কোন মিল নেই।
নুরপাড়ার ড্রেনে শহরের অধিকাংশ ছোট বড় ড্রেন মিলেছে। আইবিপি রোড, হাসপাতাল সড়কসহ উপরের সব পানি এই ড্রেন দিয়ে চলাচল করে।
নুর পাড়ায় প্রবেশপথ তথা উমিদিয়া মাদ্রাসার সামনে দিক থেকে ড্রেনটি গিয়ে সোজাসুজি বাঁককালিতে পড়েছে। এক সময় এই ড্রোনটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও গভীর থাকলেও এখন অনেকটা ভরে গেছে। ড্রেন দখল করে নির্মিত হয়েছে দোকানপাট ও বসতবাড়ি। ড্রেনের জমে থাকা ময়লা-আবর্জনাগুলো দীর্ঘদিন পরিষ্কার করা হচ্ছে না। যে কারণে বর্ষা মৌসুম আসলেই এখানকার বাসিন্দাদের অবর্ণনীয় ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধাগ্রস্ত হয় জীবন চলা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ড্রেনের দক্ষিণ মাথা থেকে শেষ পর্যন্ত অন্তত ১৫ জন দখলদার নির্মাণ করেছে বসতবাড়ি ও দোকানপাট। তারা পৈত্রিক জমির মতো ভোগ করছে পৌরসভার ড্রেনের জায়গা। এসব অবৈধ স্থাপনার কারণে ড্রেন দিয়ে পানি চলাচল করতে না পেরে ময়লা পানি বসতবাড়িতে ঢুকছে। চলার পথে জমে থাকছে ময়লা-আবর্জনা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি।
দেখা গেছে, নূরপাড়ার উত্তর মাথায় স্লুইচগেট এলাকায় ড্রেনের জায়গার উপর নির্মিত হয়েছে কয়েকটি বসতবাড়ি। এ কারণে উপর থেকে আসা পানি নিচে নামতে পারছে না। স্বাভাবিক চলাচলের পথ বাধাগ্রস্ত হয়ে আশপাশের বসতবাড়ি ও আঙ্গিনায় ঢুকে পড়ছে ড্রেনের পানি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শনিবার ভোর থেকে বৃষ্টির কারণে নুর পাড়ার প্রধান সড়কটি জলমগ্ন ছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। ব্যাহত হয় স্বাভাবিক চলাচল। এ নিয়ে তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।
এদিকে, এলাকাবাসীর এমন দুর্দশার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কক্সবাজার পৌরসভার ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র শাহেনা আকতার পাখি। স্থানীয়দের সংবাদের ভিত্তিতে তিনি ছুটে যান। স্বচক্ষে দেখেন দখলবাজির কারণে করুণ পরিণতি। এলাকাবাসীর মুখ থেকে দুঃখ দুর্দশার কথা শোনেন।
এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন জুনু, নুরুল আবছার সিকদার, ডাক্তার ওয়াহিদুল আলম, কামরুল হাসান আজাদসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। তারা কাউন্সিলর শাহেনা আকতার পাখিকে অতি দ্রুত সমস্যা নিরসনের আহ্বান জানান। ভোগান্তির শিকার মানুষের অনুরোধের প্রেক্ষিতে শাহেনা আকতার পাখি পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানের সাথে আলাপ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করেন। সেই সঙ্গে ড্রেন দখল করে স্থাপনাকারীদের আগামী দুই দিনের মধ্যে দখল ছেড়ে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। অন্যথাই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের শাস্তি প্রদানেরও হুঁশিয়ারি দেন।
প্যানেল মেয়র শাহেনা আকতার পাখি গণমাধ্যমকে জানান, নুরপাড়ার ড্রেন দখল করে ঘরবাড়ি, দোকানপাট করেছে অনেকে। তাতে পানি চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। স্বাভাবিক গতিপথ বাধাগ্রস্ত হয়ে ড্রেনের পানি সড়কে চলছে। সমস্যা সমাধানে শুধু পৌর কর্তৃপক্ষ নয়, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

পাঠকের মতামত: