ঢাকা,সোমবার, ৬ মে ২০২৪

কক্সবাজার সৈকতে চলছে রাখাইনদের বর্ষা উৎসব

সুনীল বড়ুয়া, কক্সবাজার ::  সমুদ্র সৈকতের ঝাউবাগানে গোল করে বসে দলে দলে আড্ডায় মেতেছে অসংখ্য রাখাইন তরুণ-তরুণী। প্রতিটি দলেই আছে নানা রকম মুখরোচক খাবারের আয়োজন।শুধু খাওয়া-দাওয়া নয়,আছে,নাচ -গানসহ নানা আনন্দায়োজনে মজার সময় কাটছে সবার।
যেন সমুদ্র সৈকতের ঝাউবাগান জুড়ে আনন্দের বন্যা বইছে।
গতকাল শুক্রবার (৫ জুলাই) সৈকতের শৈবাল সংলগ্ন ঝাউবাগানে রাখাইনদের মনরাঙানো বর্ষা উৎসবে দেখা গেল এমন অনন্দ মুখর পরিবেশ।
গত ২৪ মে শুরু হওয়া এ উৎ’সব শেষ হবে আগামী শুক্রবার (১২ জুলাই)।
প্রতি বছরের মতো এবারও প্রায় দুইমাসব্যাপী সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার এ জনপ্রিয় এ উৎসব উদযাপন করবে রাখাইন সম্প্রদায়।
রাখাইন তরুণী এছেন নু, মংলায়াইনও মংখিনছেন জানান, এটি তাদের ধর্মীয় বা সামাজিক কোনো উৎসব নয়, সবাই মিলে মিশে বৃষ্টি এবং সাগরের জলে সিক্ত হয়ে মজা করা। সকল দ্বিধা-দ্বন্ধ,সংঘাত হানাহানি ভুলে সবাই মিলে সারাদিন আনন্দে মেতে থাকার জন্যই মূলত এ আয়োজন।
জানা গেছে, প্রতি বছর বৌদ্ধদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান তিনমাসব্যাপী আষাঢী পূর্ণিমার আগে (আষাড়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত) দুই থেকে আড়াইমাস সৈকতে এ উৎসব পালন করে থাকে রাখাইন সম্প্রদায়।
রাখাইন নেত্রী মাটিন টিন বলেন, প্রায় শতাব্দীকাল ধরে রাখাইন সম্প্রদায় এ উৎসব পালন করে আসছে। এক সময় হিমছড়ির অরণ্যে এ উৎসব উদযাপন করা হতো। রাখাইন তরুণ-তরুনীরা নানা রকমের খাবার দাবারসহ চলে যেতো সেখানে। গত কয়েক বছর থেকে সমুদ্র আর প্রকৃতিকে আরও নিবিড়ভাবে কাছে পেতে সৈকতের ঝাউবাগানে পালন করা হচ্ছে মন রাঙ্গানো এ বর্ষা উৎসব।
ড. আছিং বলেন,পড়াশুনার কারণে দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলাম। এর মধ্যে দেখছি উৎসবের রঙ বদলেছে। উৎসব আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি ঝাঁকজমকপূর্ণ। সবার মধ্যে প্রাণের স্পন্দন দেখে সত্যিই ভাল লাগছে। এখানে এসেই অনেক পুরনো বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দেখা হয়েছে।
‘আরো অবাক হচ্ছি,রাখাইনেরা শুধু মাত্র মজা করার জন্য এ উৎসব শুরু করলেও এখন এটি শুধু রাখাইনদের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। এটি সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিতে চলেছে।অভিভূত আমি। যোগ করেন ড. আছিং।
উৎসবে এসে কেমন লাগছে? এমন প্রশ্নে রাখাইন যুবক কেংগ্রী রাখাইনের জবাব,মূলত সবাই মিলে বৃষ্টি এবং সাগরের জলে সিক্ত হয়ে মন রাঙানোর জন্যই এখানে আসি।তবে বৃষ্টি বেশি হলে আরও ভাল লাগতো।
‘মজার মজার হরেক রকম খাবার-দাবার নিয়ে নাচে-গানে সৈকতে চলে পিকনিকের আয়োজন। তাই অনেকে এটিকে বরষাকালীন পিকনিকও বলে। আমি বলব,এ উৎসবের মধ্যদিয়ে বরষাকে বরণ করা। এভাবেই অনুভুতি ব্যক্ত করলেন রাখাইন তরুণী উমে রাখাইন। তিনি বলেন,বর্ষা উৎসবের শেষ আনন্দ সমুদ্র-স্নান। সারাদিন ঝাউবাগানে নেচে গেয়ে মন রাঙ্গিয়ে দিনের শেষ লগ্নে সমুদ্র স্নান শেষে বুকভরা প্রশান্তি নিয়ে বাড়ি ফেরা।
জানাগেছে,গত তিন দশক ধরে সমুদ্র আর প্রকৃতিকে আরও নিবিড়ভাবে কাছে পেতে সৈকতের ঝাউবাগানে পালন করা হচ্ছে মন রাঙ্গানো এ বর্ষা উৎসব। কিন্তু এখনেএ উৎসব শুধুমাত্র কক্সবাজারের রাখাইনদের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। জেলার গন্ডি পেরিয়ে বান্দরবান,রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন এ উৎসবে যোগ দেন।

পাঠকের মতামত: