ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

ধান-চাউল ক্রয়ে দূর্নীতি: আরো ২৭৩১ টন ধান কিনছে সরকার

মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার ::
কক্সবাজারে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ন্যায্য মূল্যে প্রথম পর্যায়ের ধান কিনা শেষে আবারো দ্বিতীয় পর্যায়ে ধান কিনবে সরকার। তবে কৃষকদের অভিযোগ দালাল আর নির্দিষ্ট পরিমান ঘুষ ছাড়া ধান বিক্রি করতে পারছেনা তারা। খাদ্য অফিস গুলো তাদের নির্দিষ্ট দালাল,ডিলার এবং মিল মালিকদের কাছ থেকেই বেশির ভাগ ধান কিনছে বলে জানান সাধারণ কৃষকরা। চাহিদামত টাকা না দিলে ধানে চিটা আছে বা মান নি¤œ বলে ফেরত দিচ্ছে কৃষকদের। এছাড়া অনেক কৃষকদের ধান বিক্রির টাকা উঠাতে ব্যাংকে বাড়তি টাকা দিতে হয় বলে জানান অনেকে।
কৃষকদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য দেওয়ার লক্ষ্যে এবারই প্রথম সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তারি অংশ হিসাবে গত ২৩ মে থেকে সারা দেশের মত কক্সবাজারে ধান কেনার কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। প্রথম ধাপে জেলায় ১৬৩৯  মেট্রিকটন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছিল সরকার। সেই লক্ষ্যমাত্রার এখন বেশির ভাগ পূরণ হয়েছে এখন নতুন করে আরো ২৭৩১ টন ধান কিনবে সরকার। ইতি পূর্বে প্রতি কেজি ২৬ টাকা করে আগে যে সব ধান কিনেছে কিন্তু সেখানে ধান বিক্রি করতে চরম হয়রাণির শিকার হচ্ছে কৃষকরা। তাদের দাবী খাদ্য অফিসের নিদিষ্ট দালাল ছাড়া ধান কিনেনা কর্মকর্তারা। আর তাদের চাহিদা অনুযায়ী ঘুষ না দিলে ফিরিয়ে দেয় কৃষকদের। এ ব্যাপারে পিএমখালী ঘাটকুলিয়া পাড়ার শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন,আমি ধান বিক্রি করতে কক্সবাজার সদর খাদ্য অফিসে গিয়েছিলাম কিন্তু আমার ধান মান ভাল নয় বলে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে এ সময় আমাকে স্থানীয় কয়েকজন বলেছে তাদের সাথে চুক্তি করলে তারা কেনার ব্যবস্থা করবে। তবে আমি রাজি হইনি। কারন ঈদের আগে নাকি টাকা পাব না, তাই আমি ঘুষ দিয়ে ধান বিক্রি করতে রাজি হইনি। ঝিলংজা মুহুরি পাড়ার আবদু শুক্কুর বলেন,আমার কৃষি কার্ড আছে সে অনুযায়ী আমি ধানের নমুনা নিয়ে গেছি কিন্তু সেখানে কর্মকর্তা কর্মচারীরা ধান দেখে আমাকে বলেছে আমার ধানে বেশি চিকা এবং কম শুকানো। তাই ভাল করে শুকিয়ে ঝেড়ে আনতে বলেছে। আমি বের হয়ে আসতেই ২ জন আমার কাছে এসে বলে প্রতি কেজি সরকারি দাম ২৬ টাকা কিন্তু সেখান থেকে তাদের ৩ টাকা করে দিলে সে কেনার ব্যবস্থা করবে। আর তাদের সাথে কর্মকর্তাদের চুক্তি আছে তারাই তাকে পাঠিয়েছে বলে জানান। এদিকে কয়েকদিন আগে গিয়ে জানা গেছে ২০৩ টন ধান কেনা শেষ হয়েছে তবে বেশির ভাগই ডিলার,মিল মালিক এবং দালালদের কাছ থেকে কিনেছে। এতে তারা ভাল কমিশন পেয়েছে। একই ভাবে রামু মেরুংলোয়া এলাকার কৃষক আমির হোসেন,চাকমারকুল ইউনিয়নের বশির আহামদ সহ অনেকে একই অভিযোগ করেন তাদের দাবী সাধারণ কৃষকদের কাছ থেকে কোন ধান কিনা হয়নি বরং দালাল ছাড়া ধান কিনেনা তারা।
এদিকে চকরিয়া পহরচাঁদা এলাকা থেকে কৃষক আলী মিয়া অভিযোগ করেন আমার জানা মতে সবার আগে চকরিয়াতে ধান কেনা শুরু হয়েছে। প্রথমে নামমাত্র-লোকদেখানো কিছুটা কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনলেও পরে কোন তদবির বা দালাল ছাড়া ধান কিনেনি। আর আগে যাদের কৃষি কার্ড ছিল না তারা এখন রাতারাতি কৃষি কার্ড করে নিয়ে আসছে। ফলে এখন প্রভাবশালীরাই ধান বিক্রি করতে পারছে কোন সাধারণ কৃষক ধান বিক্রি করতে পারছে না।চকরিয়া খাদ্য গুদামে প্রকৃত ধান চাষীরা ধান বিক্রি করতে না পারলেও সক্রিয় দালালদের মাধ্যমে খাদ্য গুদামে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ধান ক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে জানান, চকরিয়া খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা অনিক বাবুর সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার সাথে সাথে ব্যস্ত আছি অফিসে এসে কথা বলেন একথা বলে ফোন কেটে নেয়।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা খাদ্য কর্মকর্তা দেবদাশ চাকমা বলেন, যাদের কৃষি কার্ড কাছে তাদের কাছ থেকে ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে ধান কিনার কোন নিয়ম নেই। তাই কৃষি কার্ড যাদের আছে তারাই ধান বিক্রি করবে সে যদি কোন রাজনৈতিক নেতাও হয় আমাদের করার কিছুই নাই। প্রতি কৃষক সর্বোচ্চ ৩ হাজার কেজি ধান বিক্রি করতে পারবে। আর কোন অভিযোগ থাকলে আমাকে জানালে আমি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। তবে খুশির খবর হচ্ছে সরকার আরো ধান কিনবে এবার শুধু কক্সবাজার জেলায়  ২৭৩১ মেট্রিক টন ধান কিনবে তাই হতাশ হওয়ার কোন কারন নেই সব কৃষক ধান বিক্রি করতে পারবে। এবারে নতুন ভাবে কক্সবাজার সদরে ৩৩৮ মেট্রিক টন, চকরিয়া উপজেলায় ৯২৬ টন, পেকুয়া উপজেলায় ৩৫১ টন, কুতুবদিয়ায় ১২৩ টন, মহেশখালীতে ৩৩২ টন, রামুতে ৩০৩ টন, উখিয়াতে ৩০২, টেকনাফ উপজেলায় ৫৬ টন ধান কিনবে সরকার।

পাঠকের মতামত: