ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারের ৬ কোটি টাকা জলে

মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার ::  কক্সবাজার জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ সহ প্রজেক্টর দেওয়া হলেও তার ১০%ও ব্যবহার হচ্ছে না। ফলে নষ্ট হয়ে পড়ছে সরকারি এসব মূল্যবান যন্ত্রপাতি। আবার বেশ কিছু স্কুলে ইতিমধ্যে চুরি হয়ে গেছে। আবার কিছু স্কুলে ল্যাপটপ থাকে প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে যা শিক্ষার্থীরা কখনো চোখে দেখেনা। এছাড়া বেশ কিছু স্কুলে ল্যাপটপ দেওয়া হয়েছে ১ বছর আগে আবার প্রজেক্টর দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যে। তাই জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেওয়া ল্যাপটপ বা প্রজেক্টর খাতে দেওয়া প্রায় ৬ কোটি টাকা জলে গেছে বলে মনে করছেন জেলার সচেতন মহল।
বড় মহেশখালী জাগিরাঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল গফুর বলেন,আমাদের স্কুলে মাঝে মধ্যে ল্যাপটপ এবং প্রজেক্টরের ব্যবহার হয়। তবে যেহেতু গ্রামের স্কুল তাই সব সময় ল্যাপটপ দিয়ে পাঠদান করা সম্ভব না। এ সময় তিনি স্বীকার করেন মহেশখালীর বেশির ভাগ স্কুলে ল্যাপটপ বা প্রজেক্টর ব্যবহার করা হয় না।
উখিয়া মনখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সদ্য অন্য স্কুলে যোগদান করতে যাওয়া প্রধান শিক্ষক নুরুল হক বলেন, আমাদের স্কুলে ল্যাপটপ আছে ২ টি এর মধ্যে একটি অকেজো আরেকটি চালু আছে তবে ব্যবহার হয় না। আর প্রজেক্টরও ব্যবহার হয়না বললেই চলে। তিনি বলেন,গ্রামের স্কুলে বেশির ভাগ সময় বিদ্যূৎ থাকে না। আবার বিদ্যূৎ থাকলেও আমাদের এমন কোন শিক্ষক দেয়নি যারা এগুলো ভাল ভাবে মনিটর করতে পারবে তাই এগুলো কেউ চালাতে চায় না।
কক্সবাজার শহরের সেন্ট্রাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার বেগম বলেন, আমাদের স্কুলে ল্যাপটপ প্রজেক্টর সব কিছু ছিল কিন্তু গত রমজান মাসে যখন স্কুল বন্ধ ছিল তখন সব কিছু চুরি হয়ে গেছে। স্কুলের ১২ টি তালা ভেঙ্গে চোরের দল ল্যাপটপ থেকে শুরু করে পানির  গ্লাস পর্যন্ত নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে আমি থানায় সাধারণ ডায়রি করেছি।
পিএমখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেনীর অসংখ্য ছাত্র বলেন,আমরা কোন দিন ল্যাপটপ দিয়ে ক্লাস করতে দেখিনি। একবার বড় কর্মকর্তা এসেছিল তখন শুধু অল্প সময় সেটা দেখেছিলাম। বেশ কয়েক জন সহকারি শিক্ষকও একই কথা স্বীকার করেন।
রামু উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি খালেদ শহীদ বলেন,আমার জানা মতে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ এবং প্রজেক্টর আছে কিন্তু সেটার ১০%ও ব্যবহার হয় না। অনেক স্কুল আছে ল্যাপটপ নেওয়ার পর প্যাকেটও খুলেনি। আবার কিছু আছে ল্যাপটপ থাকে প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে যা শিক্ষার্থীরা চোখেও দেখেনা। আমার জানা মতে সরকার ল্যাপটপ দিয়েছে কিন্তু প্রশিক্ষন প্রাপ্ত শিক্ষক দেয় নি। আবার শিক্ষকরাও তেমন আন্তরিক না তারা ইচ্ছা করে সেটা শিখে ক্লাস করাতে আগ্রহী না। আমার মতে সরকার প্রতিটি স্কুলে ল্যাপটপ এবং প্রজেক্টর দিতে কমপক্ষে ৮০ হাজার টাকা ব্যয় করেছে সে হিসাবে সব টাকা জলে গেছে কারন এগুলো শিক্ষার্থীদের কোন উপকারে আসেনা।
টেকনাফ উপজেলা সুজন সাধারণ সম্পাদক এবিএম আবুল হোসেন রাজু চকরিয়া নিউজকে বলেন, আমার জানা মতে উখিয়া টেকনাফের অনেক স্কুলে ৩ টি পর্যন্ত ল্যাপটপ আছে,এখানে সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি প্রতিটি স্কুলে ল্যাপটপ দিয়েছেন, এনজিও সংস্থা থেকে একটি করে দিয়েছে। সরকারিভাবে একটি করে দিয়েছে। কিন্তু কোনটি শিক্ষার্থীদের কাজে আসেনা। কোন স্কুলে শিক্ষার্থীরা মাল্টিমিডিয়া ক্লাস করেছে এমন কেউ বলেনি। মূলত শিক্ষকদের আন্তরিকতা ছাড়া সরকার যতই চেস্টা করুক সফলতা আনতে কঠিন হবে।
এ ব্যাপারে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার চকরিয়া নিউজকে বলেন,জেলায় ৬৫৬ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রায় সব স্কুলে ল্যাপটপ প্রজেক্টর দেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে ২১২ টি স্কুলে দেওয়া হলেও বর্তমানে সব স্কুলে আছে। যেহেতু এটা নতুন বিষয় আমরা সব স্কুলে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। আসা করি পর্যায় ক্রমে সব স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস ভাল ভাবে হবে।

পাঠকের মতামত: