ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

একটি ‘হকার কার্ড’ নিয়ে তোলপাড়, অবৈধ দখলদারদের পাল্টা সমাবেশ ঘোষণায় ক্ষোভ

শাহেদ মিজান, সিবিএন ::   কয়েকদিন ধরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে অবৈধ দোকান নির্মাণ নিয়ে বেশ সমালোচনা চলছে। সৈকত দখল করে গড়া অবৈধ দোকান নিয়ে সুশীল শ্রেণির লোকজনের সমালোচনার প্রেক্ষিতে নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসনও। এই নিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনায় পর্যটন সেলের ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল আশরাফ জয়কে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই ‘আগুনে ঘি’ পড়লো জেলা জাসদের সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুলের নামে ইস্যুকৃত একটি হকার কার্ড প্রকাশ নিয়ে। গত তিন ধরে এই কার্ডটি ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই নিয়ে তোলপাড় চলছে সর্বত্র। চলছে সমালোচনার ঝড়।

তথ্য মতে, ঈদুল ফিতরের ছুটির প্রাক্কালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে রাতের আঁধারে গড়ে তোলা হয় অধশতাধিক অবৈধ হকার দোকান। এই ঘটনার খবর প্রকাশ হলে কক্সবাজারে সুশীল সমাজ ক্ষোভে পড়ে। সমালোচনার ঝড় সর্বত্র। সমালোচনার মুখে জেলা প্রশাসন দুই দিনের মাথায় দোকানগুলো উচ্ছেদ করে। এই ঘটনা বেশ স্পর্শকাতর হলে সুশীল সমাজের লোকজন এই নিয়ে আন্দোলন ঘোষণা করেছে। সেই সাথে অবৈধ দোকান নির্মাণের সাথে জড়িতের বিরদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জোর দাবি তুলে এবং সমুদ্র সৈকতকে দখলমুক্ত করতে আল্টিমেটাম দেয়।

অনুসন্ধানের বেরিয়ে এসেছে, সৈকতে গড়া অবৈধ হকার দোকান বরাদ্দ পেয়েছেন কক্সবাজারের বেশ ক’জন উচ্চ শ্রেণির লোক। প্রকাশ পায় এই তালিকায় রয়েছে- রাজনৈতিক নেতা, সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ও সিনিয়র সাংবাদিক, আমলা ও তাদের আত্মীয়-স্বজন ও অনুগত লোকজনন। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন ও সুশীল মহলে বেশ কানাঘুষা চলছে কয়েকদিন ধরে। হকার দোকান বরাদ্দ পাওয়া উচ্চ শ্রেণির এসব লোকজনের নাম নিয়ে কানাঘুষা চললেও প্রকাশ্যে আসেনি। তবে শেষ মুহূর্তে আকস্মিক ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে জেলা জাসদের সভাপতি ও সুশীল সমাজের নেতা খ্যাত নঈমুল হক চৌধুরীর নামে একটি হকার দোকান বরাদ্দের কার্ড। এই কার্ডের ছবিটি ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। এই নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সর্বত্র চলছে তীব্র সমালোচনা ঝড়। বর্তমানে বিষয়টি ‘টক অব দ্য টাউন’ এ পরিণত হয়েছে। নঈমুল হক চৌধুরীর মতো ধনাঢ্য লোককে হকার কার্ড ইস্যু করায় জেলা প্রশাসনও সমালোচনার মুখে পড়ে।

সুশীল সমাজের লোকজন বলছেন, এতো দিন ধরে কক্সবাজারের সাধারণ মানুষ জানতো নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল একজন সুশীল রাজনীতিবিদ। তিনি কক্সবাজারের স্বার্থ রক্ষায় বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ করে আসছেন। জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সেমিনারে জ্বালাময়ী বক্তব্য দেন। সেই মানুষ কিভাবে সমুদ্র সৈকত দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হকার দোকান বরাদ্দ নেন? এই প্রশ্নটি এখন শহরের সুশীল শ্রেণির মানুষের মুখে মুখে। এই জন্য টুটুলকে সর্বস্তরের মানুষ মুখোশধারী ‘খাদক’ হিসেবে অবহিত করছেন।

এ ব্যাপারে ‘আমরা কক্সবাজারবাসী’ সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক নাজিম উদ্দীন বলেন, ‘কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্যই গঠন করা হয়েছে ‘বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি’। কিন্তু এই কমিটির লোকজন তার উল্টো করছে। যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তুলতে চেষ্টা করছে সেখানে বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি সৈকতকে অবৈধভাবে ঝুপড়ি দোকান বসিয়ে বস্তিতে পরিণত করছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘খোদ বীচ যেখানে বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য নঈমুল হক চৌধুরী তার ‘জ্বলন্ত’ প্রমাণ। তিনি কমিটির সদস্য হয়েও নিজের নামে হকার কার্ড বরাদ্দ পেয়েছেন। এটা একটা সেলুকাস! রক্ষক যেখানে ভক্ষণের ভূমিকার নেন সেখানে কিভাবে বীচ রক্ষা পাবে? আমরা তার নামে ইস্যুকৃত হকার কার্ড বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি।’

সুশীল সমাজের প্রতিনিধি কলিম উল্লাহ বলেন, ‘বর্তমান বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির কাছে কক্সবাজার সৈকত নিরাপদ নয়। যেখানে বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য নিজের নামে অবৈধ হকার দোকান বরাদ্দ পায় সেখানে আমরা কী-ই আশা করতে পারি। আমরা অবৈধ দখলদারদের হটিয়ে কক্সবাজার সৈকতকে অবৈধ জঞ্জালমুক্ত করার আন্দোলন অব্যাহত রাখবো।’

এই ব্যাপারে জানতে চাইলে নইমুল হক চৌধুরী টুটুল বলেন, ‘দেশের একজন নাগরিক হিসেবে সৈকতে দোকান বরাদ্দ নিতেই পারি। এখানে লুকোচুরির কিছু নেই। ভ্রাম্যমাণ হকারের কথা বলে খোদ সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা এই দোকান কেন বরাদ্দ নিয়েছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমিটির সভার সিদ্ধান্তমতেই তা হয়েছে।’

অন্যদিকে সুশীল খ্যাত আরেক ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শাহাজানও হকার কার্ড বরাদ্দ পেয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেছেন, ‘সৈকতে অবৈধ দোকান কোনো মতেই বসতে দেয়া হবে না। সম্প্রতি রাতের আঁধারে যারা অবৈধ বসিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এই নিয়ে কিছু ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে।

এদিকে আগামীকাল ২৪ জুন কক্সবাজার সৈকতের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ পুরো সৈকতের সৌন্দর্য্য বর্ধনের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে ‘আমরা কক্সবাজারবাসী’ সংগঠন। কিন্তু একই দিন তাদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের বিরুদ্ধে পাল্টা সমাবেশের ঘোষণা দিেেয়ছে অবৈধ দখলদাররা। এই ঘটনায়ও তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন- কাদের ইন্ধনে বা বলে অবৈধ দখলদাররা এই দুঃসাহস দেখায়?

পাঠকের মতামত: