ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

মাঠেই পড়ে আছে লবণ, দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে চাষিরা

ন্যায্য দাম না পেয়ে মাঠের গর্তে স্তূপ করে রাখা হয়েছে উৎপাদিত লবণ। ছবিটি চকরিয়ার দরবেশকাটা এলাকা থেকে তোলা। ছবি : চকরিয়া নিউজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::

চলতি বছর দেশে ভোক্তা ও শিল্পখাতে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ১৮ লক্ষ টন। কয়েক দফা বৈরী আবহাওয়ার পরও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায় উৎপাদন। কিন্তু মিল মালিকেরা সিন্ডিকেট করে এবং বিদেশ থেকে লবণ আমদানি চেষ্টায় হঠাৎ মাঠে উৎপাদিত লবণের দাম পড়ে যায়। এতে দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদনকারী অঞ্চল কক্সবাজারের ৬ উপজেলা এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার উপকূলের অন্তত ৪ লক্ষ লবণ চাষি ও শ্রমিক আর্থিকভাবে ‘দেউলিয়া’ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

লক্ষ্যমাত্রার চাইতে উদ্বৃত্ত লবণ উৎপাদন করেও সঠিক দাম না পাওয়ায় উৎপাদিত লবণ মাঠের গর্তেই পড়ে রয়েছে। এই অবস্থায় লবণের ন্যায্যমূল্য পেতে চাষিরা সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

লক্ষ্যমাত্রা ও উৎপাদনের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ, কক্সবাজার সদরসহ কক্সবাজারের উপকূল এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালীর উপজেলায় লবণ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে ৪ লাখের বেশি চাষি ও শ্রমিক। তারা চলতি মৌসুমে দেশে লবণের ১৬ লাখ ৬৫ হাজার টনের চাহিদা পূরণ করেছে। ভোক্তা ও শিল্পখাতের এ চাহিদার বিপরীতে বিসিক লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ১৮ লক্ষ টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে উদ্বৃত্ত লবণ উৎপাদন করে।

বিসিক কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-মহাব্যবস্থাপক দিলদার আহমদ চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘লবণ উৎপাদন মৌসুম শুরু হয় ডিসেম্বর মাসে। এর পর থেকে সাম্প্রতিক সময়ে বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১৮ লক্ষ মেট্রিক টনের বেশি লবণ দেশে উৎপাদন হয়েছে।’

চকরিয়ার খুটাখালী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া পাহাড় গ্রামের বাসিন্দারা লবণ চাষে জড়িত। তানভীর হাসানসহ কয়েকজন দাবি করেন, মিল মালিক তথা বড় বড় কম্পানিগুলো লবণের দাম কমিয়ে দেওয়ায় মাঠপর্যায়ের চাষিরা দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ধার-দেনা করে বিনিয়োগ ও কঠোর পরিশ্রম করে উৎপাদিত লবণ মাঠের গর্তেই পড়ে রয়েছে। বর্তমানে দিগন্তজোড়া মাঠজুড়ে বড় বড় গর্ত করে স্তূপ করে পলিথিন মুড়িয়ে রাখা হয়েছে উৎপাদিত লবণ।’

লবণ চাষি তানভীর হাসান চকরিয়া নিউজকে জানান, অন্যান্য বছর প্রতিমণ লবণ যেখানে বিক্রি হত ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়, সেখানে বর্তমানে দাম দেওয়া হচ্ছে মাত্র ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। এই টাকায় লবণ বিক্রি করলে যে আয় হবে, তাতে শ্রমিকের খরচই উঠবে না।

লবণ চাষিরা জানান, শীতকাল থেকে তাঁরা লবণ চাষ শুরু করেন। বৃষ্টি শুরু হলে চাষ বন্ধ হয়ে যায়। এ বছর পর্যাপ্ত পরিমাণ রোদ ও কম বৃষ্টিপাত থাকায় তাদের লবণ উৎপাদন ভালো হয়েছে। বর্ষা আসছে, সবাই এখন লবণ বিক্রি শেষ করবেন। কিন্তু এমন সময় হঠাৎ লবণের দাম কমে যাওয়ায় ডিলাররা লবণের দাম প্রায় অর্ধেক বলছেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে তাঁদেরকে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘কক্সবাজার অঞ্চলের চাষিরা লবণ উৎপাদন করে সারাদেশের মানুষের এবং শিল্পখাতের লবণের চাহিদা পূরণ করে। কিন্তু বরাবরের মতোই লবণ চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। তাই সংসদে বিষয়টি উত্থাপন করে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে।’

পাঠকের মতামত: