ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভারী বৃষ্টিপাত হলেই পাহাড় ধসের আশঙ্কা

সৈয়দুল কাদের, কক্সবাজার ::
তীব্র তাপদাহের পর ভারী বৃষ্টিপাত হলেই জেলায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই পাহাড়ে বসবাসকারীরা সতর্ক না হলে ভয়াবহ বিপর্যয় আসতে পারে। অপরদিকে  প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা থাকলেও তা পরিপুর্ন বাস্তবায়ন না হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতির সংখ্যা আরো বেড়েছে।
বঙ্গবন্ধু সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যাপক জাফর আলম জানান, কোন বাধা ছাড়াই পাহাড়ে বসতি গড়তে পারাই দিনদিন ঝুঁকিপূর্ণ বসতবাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। কক্সবাজারের অধিকাংশ পাহাড় এখন ন্যাড়া হয়ে গেছে। যেদিকে চোখ যায় সর্বত্রই বসতবাড়ি। অনেকেই পাহাড় দখল করে ব্যবসায় নেমেছে। প্লট বানিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে পাহাড়ি জমি। প্রভাবশালীদের দৃষ্টি এখন পাহাড়ের দিকে। পাহাড়ে যে বসতবাড়ি রয়েছে তার অধিকাংশই পাহারাদাররা বসবাস করে। মালিক পরিবর্তন হলে পাহারাদারও পরিবর্তন হয়।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় জেলায় পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারির সংখ্যা ৮ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। গত ৭ বছরে পাহাড় ধ্বসে প্রায় ২০০ জন মানুষ মারা গেছে।। ২০১০ সালের ১৫ জুন ভোরে টানা বৃষ্টির কারণে জেলাব্যাপি ব্যাপক জলাবদ্ধতার পাশাপাশি ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটে। এতে রামু উপজেলার হিমছড়ি এলাকার ১৭ ইসিবি সেনা ক্যাম্পের ৬ জন সেনা সদস্যসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধ্বসে মারা যায় ৬২ জন। ২০১৩ সালের ৪ ও ৬ জুলাই টেকনাফে ফকিরা মুরা ও টুন্যার পাহাড় ধসের একই পরিবারের চারজনসহ ১৩ জনের মৃত্যু হয়। ২০১২ সালে ২৬ ও ২৭ জুন পাহাড় ধসের ঘটনায় মারা গেছে ২৯ জন। একই ভাবে ২০০৯ ও ২০০৮ সালেও পাহাড় ধ্বসে মারা যায় ১৯ জন লোক।
সৈকত পাড়ার রমজান আলী বলেন- ‘আমরা সবাই জানি পাহাড় সরকারী খাস জমি। কিন্তু খাস জমি যে যুগ যুগ ধরে প্রভাবশালীরা দখল করে বেচা বিক্রি করছে তখন প্রশাসন কোথায় ছিল? প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল পাহাড়ে ঘর বাধার আগেই তা নজরে আনা। এখানে ১ গন্ডা জমি ২/৩ লাখ টাকায়ও কিনে মানুষ বসবাস করছে । এখন তার ক্ষতি পূরন বা তাদের জীবনের মূল্য কে দেবে।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন- মূলত পাহাড়ে শুরুতে ছোট ঘর তৈরি করে। পরে আস্তে আস্তে পাহাড় কেটে সব জমি নিজেদের দাবী করে। আমি সব সময় বলি পাহাড় কাটা বন্ধ হলে শহরের অর্ধেক সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। তাই অবৈধভাবে পাহাড়ে বসবাসকারিদের সরিয়ে নিতে সরকার যে পদক্ষেপ নিচ্ছে তা মানুষের উপকারের জন্য এটা সকলের বুঝা উচিত। কক্সবাজারের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলেন, তাপদাহ আরো কয়েকদিন বাড়তে পারে । মাত্র আষাঢ় মাস শুরু হয়েছে। এখনো যা বৃষ্টি হয়েছে তা ভারী বর্ষণ বলা যায় না। ভারী বর্ষণ হলে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের চেয়ারম্যান ডঃ মুহিবুল্লাহ জানিয়েছেন কক্সবাজার ভুমিকম্প ঝুঁকি প্রবণ এলাকা। পাহাড়ে বসতি গড়তে পাহাড় কাটতে হয়। এ ছাড়া তীব্র তাপদাহে সর্বত্র শুকিয়ে গেছে। বিগত সময়ে কক্সবাজারে অনেকবার পাহাড় ধস হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যথা সময়ে বৃষ্টি হচ্ছে না। অসময়ে বৃষ্টি হলে পাহাড় ধসের ঝুকি বাড়ে। তাই তীব্র তাপদাহের পর ভারী বৃষ্টিপাত হলে পাহাড় ধসের ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়।
জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, মানবিকতা ভিন্ন বিষয়। জীবনের নিরাপত্তা সর্বাগ্রে বিবেচনা করতে হবে। আবেগ দিয়ে নয় বাস্তবতা বুঝা উচিত। সহায় সম্পদ ঘর বাড়ি মানুষ চাইলে আবার অর্জন করতে পারবে। কিন্তু জীবন চলে গেলে তা আবার আসবে না। এজন্য সারা জীবন কান্না করতে হবে। তিনি বলেন সরকারী জমিতে বসবাস অপরাধ। সে অর্থে জেলা প্রশাসন তার দায়িত্ব পালন করছে। কক্সবাজারের পাহাড়ে ঝুকিপূর্ণ বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

পাঠকের মতামত: