ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ার উপকূলীয় ৭ ইউনিয়ন নিয়ে নতুন উপজেলা হচ্ছে মাতামুহুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::  কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলমের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা ছিল নির্বাচিত হলে চকরিয়ার উপকূলীয় সাত ইউনিয়নের সমন্বয়ে আলাদা একটি ‘মাতামুহুরী উপজেলা’ প্রতিষ্ঠা করবেন। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণসহ মাতামুহুরী স্বতন্ত্র উপজেলার বাসিন্দা হিসেবে এই অঞ্চলের মানুষ সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। সেই নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ হতে চলেছে উপকূলীয় দুই লক্ষাধিক মানুষের।তবে আধাসরকারি পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ হতে ২৪ অক্টোবর ২০০৪ এর ১৮৫(২৫০) নং স্মারকের (নীতিমালা) অনুযায়ী মাতামুহুরী নামক উপজেলা পরিষদ গঠনের প্রস্তাব বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম বরাবর প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল।’

ইতোমধ্যে এমপির পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদে প্রস্তাব উত্থাপন পরবর্তী আনুষ্ঠানিকভাবে দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে মাতামুহুরী উপজেলা বাস্তবায়নের কাজ। এতে উপকূলীয় সাত ইউনিয়ন সাহারবিল, পশ্চিম বড় ভেওলা, পূর্ব বড় ভেওলা, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, বিএমচর ও বদরখালীর মানুষের মাঝে খুশির আমেজ পরিলক্ষিত হচ্ছে।

বর্তমান চকরিয়া উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন থেকে উপকূলীয় সাত ইউনিয়নের সমন্বয়ে নতুন মাতামুহুরী উপজেলা গঠনকল্পে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ উপজেলা-১ শাখার উপসচিব নুমেরী জামান স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্র প্রেরণ করা হয় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে। অনুলিপি দেওয়া হয় কক্সবাজার-১ আসনের এমপি জাফর আলম ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কাছে।

১১ জুন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রেরিত পরিপত্রে বলা হয়, ‘উপর্যুক্ত বিষয়ে কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলমের আধাসরকারি পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ হতে ২৪ অক্টোবর ২০০৪ এর ১৮৫(২৫০) নং স্মারকের (নীতিমালা) অনুযায়ী নতুন উপজেলা, থানা এবং তদন্তকেন্দ্র স্থাপন সংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী মাতামুহুরী নামক উপজেলা পরিষদ গঠনের প্রস্তাব বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম বরাবর প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল।’

মাতামুহুরী নতুন উপজেলা বাস্তবায়ন বিষয়ে সংসদ সদস্য জাফর আলম চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন চলাকালে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ৭১ বিধিতে জনগুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে মাননীয় স্পিকারের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তব্য রেখেছিলাম। পরবর্তীতে নোটিশ এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই পরিপত্র জারি করা হয়েছে।’

জাফর আলম বলেন, ‘আমার নির্বাচনী ওয়াদা ছিল উপকূলীয় সাত ইউনিয়নের মানুষকে মাতামুহুরী নামে নতুন একটি উপজেলা উপহার দেব। এরই পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়ে গেছে। পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়ে গেলে সরকারি সব বরাদ্দ আলাদাভাবেই পাবে এই উপজেলা। যার সুফল ভোগ করবে এখানকার মানুষ।’

মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘উপকূলীয় সাত ইউনিয়নের মানুষের জন্য আলাদা একটি স্বতন্ত্র উপজেলা বাস্তবায়ন অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেটি না হওয়ায় এই অঞ্চলের প্রায় দুই লাখ মানুষকে সরকারি নানা সেবাগ্রহণ করতে যেতে হচ্ছে অনেক দূরের চকরিয়া পৌরসদরে। এতে সার্বিকভাবে এখানকার মানুষ যথাসময়ে অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। তাই বর্তমান এমপি জাফর আলম ভাই আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করতে চলেছেন। এজন্য আমরা বেশ খুশি।’

উপকূলীয় জনসাধারণের মতে, নতুন মাতামুহুরী প্রশাসনিক উপজেলা বাস্তবায়ন হলে প্রতিটা ইউনিয়নের গ্রামীণ অবকাঠামো, শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগসহ সর্বক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন হবে। উন্নয়নের ছোঁয়ায় পাল্টে যাবে অবহেলিত এলাকাগুলোও। উপকূলীয় ইউনিয়নগুলোর মানুষ খুবই উপকৃত হবে। বিশেষ করে চিংড়ি ও লবণ চাষিরা তাদের ন্যায্য অধিকার ভোগ করবে।

মাতামুহুরী উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির চৌধুরী বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলাম মাতামুহুরীকে আলাদা উপজেলা বাস্তবায়ন করতে। কিন্তু আমাদের আসনেরই বিএনপির সাবেক মন্ত্রী বা জাতীয় পার্টির এমপি বিষয়টিকে কোনো গুরুত্বই দেননি। তবে অনেক পরে হলেও আমাদের বর্তমান এমপি জাফর আলম যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে আমাদের মনে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। অচিরেই আমরা মাতামুহুরী উপজেলার বাসিন্দা হিসেবে পরিচয় দিতে পারব।’

 

পাঠকের মতামত: