ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

জলবায়ু সংকটের মুখে কক্সবাজার, মোকাবিলায় তারুণ্যের অঙ্গীকার!

নিউজ ডেস্ক ::
কক্সবাজারে এক নেটওয়ার্কিং কর্মশালার আলোচনায় বক্তারা জলবায়ু সুরক্ষায় তরুণ প্রজন্মকে আরো সোচ্চার এবং অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করার আহব্বান জানিয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় যুবরাই প্রধান ভূমিকা রাখবেন। কারণ, তাদের ভবিষ্যতের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের বড় প্রভাব পড়বে। কক্সবাজারের স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন মিছিলের আয়োজনে জলবায়ু ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় তরুণদের সাথে অনুষ্ঠিত নেটওয়ার্কিং কর্মশালার বক্তারা এসব কথা বলেন।

‘‘নিরাপদ বিশ্ব সবুজ অরণ্য, নিশ্চিত করবে দুর্জয় তারুণ্য’’ সেøাগানকে সামনে রেখে রবিবার (১৬ জুন) বিকাল ৪ টায় কক্সবাজার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম হল রুম কক্ষে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আয়োজক সংগঠন মিছিলের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন তূর্জ’র সভাপতিত্বে এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অনুপ বড়–য়া অপু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মডেল ইয়ুথ পার্লামেন্ট’র নির্বাহী প্রধান সোহানুর রহমান, নারীনেত্রী ও সংগঠক মমো আহমেদ, উন্নয়ন সংস্থা ইপসার প্রকল্প সমন্বয়ক ইউসুফ আলী প্রমুখ। বাংলাদেশ মডেল ইয়ুথ পার্লামেন্ট এবং ইয়ুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এর যৌথ সহযোগিতায় আয়োজিত কর্মশালাটিতে মিছিলসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের অর্ধশত তরুণ মুক্ত আলোচনা পর্বে অংশ নেয়।

যুব সংগঠক ওমর ফারুক জয়ের সঞ্চালনায় আলোচনায় নিয়ে বক্তারা বলেন, জলবায়ুগত সংকটের কারণে কক্সবাজার-টেকনাফ উপকূলীয় অঞ্চলের জনসাধারণের উপর চরম দুভোর্গ নেমে এসেছে। কক্সবাজারের মহেশখালী, হাতিয়া, কুতুবদিয়া ও বেশ কয়েকটি এলাকা ব্যাপক ঝুঁকিতে রয়েছে। বহু মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়ে পড়ছে। কক্সবাজার শহরে ‘কুতুবদিয়া পাড়া’ নামক এলাকায় বহু সংখ্যক মানুষ স্থান্তরিত হয়েছে। যাদের সকলেই তাদের মূল বাসস্থান ‘কুতুবদিয়া’ হতে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বাসস্থান হারিয়ে এ পাড়ায় পরিবেশ উদ্বাস্তু হিসেবে বাস করছে। বিভিন্ন সমীক্ষায় অনুমান করা হয়েছে, প্রতি ২ সেন্টিমিটার সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে উপকূলীয় তটরেখা গড় ২-৩ মিটার স্থলভাগের দিকে অগ্রসর হলে ২০৩০ সাল নাগাদ মূল ভূ-খন্ডের ৮০ থেকে ১২০ মিটার পর্যন্ত অতিক্রম করবে এবং কালক্রমে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। একই সাথে হারিয়ে যাবে দেশের সব চেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র, যা বিদেশে দেশের পরিচিতি আনে এবং অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখে।

এছাড়া বিশ^ ব্যাংকের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, কক্সবাজার জেলার মানুষের জীবনযাত্রার মান ১৮ শতাংশের নিচে নেবে যাবে। কারণ সংঘাতের মুখে মিয়ানমার থেকে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার আগমনে জেলার জীববৈচিত্র্য ঝুঁকির মধ্যে আছে। এছাড়া কক্সবাজারে বসবাসকারী প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা শিশুর অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। ঘুর্ণিঝড় বা পাহাড়ধস থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য বাঁশ এবং ‘প্লাস্টিক’ (পলিথিন, ত্রিপল) ছাড়া কিছুই নেই তাদের। এই সংকট থেকে উত্তরণে তরুণ প্রজন্মকে উপযুক্ত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, মানবিক মূল্যবোধ ও স্বদেশপ্রেমের সমন্বয়ে তাদেরকে সচেতন করে তুলতে সমন্বিত কর্মপন্থা গ্রহণ করার উপরও গুরুত্বারোপ করেন বক্তারা।

কর্মশালার প্রধান আলোচক বাংলাদেশ মডেল ইয়ুথ পার্লামেন্ট’র নির্বাহী প্রধান সোহানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু ঝুঁকির মধ্যে থাকা ১০টি জেলার মধ্যে কক্সবাজার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। যদিও এই ঝুঁকির জন্য তারা দায়ী নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উন্নত রাষ্ট্রসমূহ দায়ী, যেহেতু উন্নত রাষ্ট্র সমূহের অত্যাধিক, অনিয়ন্ত্রিত কার্বন নিঃসরণের জন্য জলবায়ু পরিবর্তিত হয়ে থাকে। আর জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা সরকারের একার কাজ নয়। সরকারের পাশাপাশি নাগরিক সমাজ, যুবসমাজ, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও তরুণ উদ্যোক্তাদের সবাইকে উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে বাঁচাতে আমাদের সবাইকে সকল ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হতে হবে। আগামী প্রজন্মকে বিপদ থেকে বাঁচাতে আরো উদ্ভাবনী কর্মসূচি প্রয়োজন।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অনুপ বড়–য়া অপু বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ ঝুঁকির তুলনায় ততটা জলবায়ু সংকট সর্ম্পকে সচেতন নয়। আর এ বিষয়ে সঠিক ধারণা দেওয়ার লোকও কম। এতে করে যেকোনো সময় বড় ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো থেকে রেহাই মিলে না কক্সবাজারবাসীর। এটি অত্যন্ত ভালো সংবাদ যে আজকে তরুণরা জলবায়ু সম্পর্কে ভাবছে। এ সংকট থেকে পরিত্রাণের পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে।

নারীনেত্রী ও সংগঠক মমো আহমেদ বলেন, যেকোনো দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে নারী ও শিশুরা। ফলস্বরূপ দুর্যোগের পূর্বে, দুর্যোগকালীন সময় এবং পরবর্তী সময়ে নিজেদের করণীয় সর্ম্পকে নুন্যতম জ্ঞান না থাকায় বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্তা বৃদ্ধিসহ নানান অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি সম্মুখে এসে পড়ে। গ্রাম থেকে উপজেলা কিংবা বিভাগীয় পর্যায়েও জলবায়ুর প্রভাব ও ঝুকিঁ নিয়ে বাস্তব প্রশিক্ষণ প্রদান করলে কক্সবাজার তথা গোটা বাংলাদেশের পরিবেশ যথাযথভাবে থাকবে। আমাদের দরকার পরিবেশকে ভালোবাসা, বৃক্ষরোপন কর্মসূচি গ্রহণ ও উপকুলীয় এলাকায় শক্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণে উদ্যোগ গ্রহণ করা।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সাখাওয়াত হোসেন তূর্জ বলেন, কক্সবাজারের মানুষ প্রতিনিয়ত দুর্যোগের সাথে সংগ্রাম করে চলছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে এ অঞ্চলের জনগণ ব্যাপক ঝুঁকিতে আছে। সরকারি-বেসরকারি দাতা সংস্থা সহ সচেতন মহলকে কক্সবাজারের তরুণদের জলবায়ু সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে টেকনিক্যাল ট্রেনিং এর সুযোগ করে দেওয়া উচিত। জলবায়ুর প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতনমূলক উদ্যোগ নিতে হবে।

পাঠকের মতামত: