ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

ঈদে সক্রিয় শতাধিক হুন্ডি চক্র কক্সবাজারে

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::   ঈদকে সামনে রেখে জমজমাট হুন্ডি ব্যবসা। জেলার বিভিন্ন এলাকায় দেদারছে বিচরণ করছে এসব ব্যবসায়িরা। শুধুমাত্র রমজানের মাসেই প্রতি বছর চলে ৫০ কোটি টাকার অধিক হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন। দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড ধংসকারি এ ব্যবসায়িদের বিরুদ্ধে প্রশাসন সজাগ না থাকায় প্রতিবছর সরকার বিপুল রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ মানি লন্ডারিং আইনে হুন্ডি ব্যবসায়ির ৬ বছর পর্যন্ত জেল ও অর্থদন্ডের বিধান থাকা সত্বেও অনেকটা প্রকাশ্যেই চালিয়ে যাচ্ছে এ ব্যবসা। ইয়াবা ব্যবসার চেয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠছে হুন্ডি ব্যবসা। শুধুমাত্র কক্সবাজার শহরের অভ্যন্তরেই রয়েছে ২ ডজন হুন্ডি সিন্ডিকেট যারা নিয়ন্ত্রণ করছে জেলার শতাধিক ছোট খাট সিন্ডিকেটকে।
হুন্ডির মাধ্যমে ঈদের বাজারে জাল টাকা ছড়াতে তৎপর রয়েছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। অনেকটা কৌশল পাল্টিয়ে বাজারে নেমেছে হুন্ডি সিন্ডিকেটের সদস্যরা। বাজারে চলমান ব্যাংক লেনেদেনের চেয়ে কিংবা বিকাশের চেয়ে কম রেটে টাকা দ্রত পৌছে দেওয়ার কারনে প্রবাসিরা হুন্ডির দিকে ঝুঁকছে বেশি। ফলে সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব।
জানাযায়, শহরের বাজার ঘাটা, বড়বাজার, পেরৈসভা মাকের্ট, আইবিপি মাঠসহ কয়েকটি নামকরা মার্কেটের নামকরা ব্যবসায়ি সরাসরি হুন্ডি ব্যবসার সাথে জড়িত। অনেকে হুন্ডির মাধ্যমে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যাওয়ার পর ও দেদারছে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে ৫ জন ব্যবসায়ি হুন্ডি ব্যবসা চালাচ্ছে যুগের ও বেশি সময় ধরে। মুদির দোকানের আড়ালে চালানো হুন্ডির টাকা চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়িদের সাথে আতাঁত করে টাকা এনে জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় বিতরণ করছে। টাকা বিতরণ করতে গিয়ে প্রবাসির স্ত্রী- কন্যার সাথে অনৈতিক সম্পর্কের খবর ও পাওয়া গেছে।
এদিকে শহরের নামকরা মুদি দোকানদার যারা পরিচিত পাইকার বিক্রেতা হিসাবে তারা সকলেই হুন্ডি ব্যবসার মাধ্যমে রাতারাতি বিত্ত বৈভবের মালিক বনে গেলে ও তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা অজ্ঞাত কারনে।
শহরের এ সব ব্যবসায়ির হুন্ডির টাকা অনেকটা মোবাইল ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে প্রবাসিরা পাঠালে সিন্ডিকেটরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পেমেন্ট করতে দেখা গেছে।
জেলার সদরের পিএমখালী , ঝিলংজা, ঈদগাও, ইসলামাবাদ, ভারুয়াখালী, ইসলামপুর, খুরুস্কুল, জালালাবাদ, পোকখালী, রামুর ফতেখারকুল, রাজারকুল, চাকমারকুল, জোয়ারিয়ানালা, দক্ষিণ মিঠাছড়ি, গর্জনিয়া, উখিয়ার রাজাপালং, হলদিয়াপালং, টেকনাফের সাবরাং, টেকনাফ সদর, বাহারছড়া, হ্নীলা, চকরিয়ার ভেউলা মানিকচর, কাকারা, বরইতলিসহ জেলার ৭১ টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রবাসি অধ্যুষিত বেশিরভাগ এলাকায় হুন্ডির মাধ্যমে শুধুমাত্র ঈদ উপলক্ষে অন্তত ৫০ কোটি টাকার অধিক লেনদেন হয় বলে জানা গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হচ্ছে সদরের পিএমখালী, ঝিলংজা, খুরুস্কুল, ঈদগাও, ভারুয়াখালী এবং ইসলামাবাদ ইউনিয়নে।
জেলার বিভিন্ন এলাকার প্রবাসি বিশেষ করে সৌদিয়া, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, কাতার, নেপাল, মালদ্বীপসহ মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরতরা হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন করে থাকে। তাদের হুন্ডি থেকে সরকারিভাবে ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করাতে পারলে দেশের রেমিটেন্স বহুগুনে বৃদ্ধি পাবে। দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড ধংসকারি হুন্ডি ব্যবসায়িদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা গেলে দেশের রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ার পাশাপাশি অর্থনীতির মেরুদন্ড মজবুত হবে।

পাঠকের মতামত: