ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

বাঁকখালী নদীর অস্তিত্ব সংকট দূর করতে মাঠে নেমেছে দূদক

মহসীন শেখ, কক্সবাজার ::

কক্সবাজারের প্রধান নদী বাঁকখালী নদী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ দখল, ভরাট ও দূষণের কারণে অস্তিত্ব সংকট দূর করতে মাঠে নেমেছে দূর্নীতি দমন কমিশন(দূদক)। নদীর এ দুরাবস্থা দেখতে গতকাল বুধবার (২৯ মে) বাকখালী নদী পরিদর্শন করেছে দুর্ণীতি দমন কমিশ। কমিশনের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রতন কুমার দাসের নেতৃত্বে একটি দল এ পরিদর্শন করে।

পরিদর্শন শেষে সহকারী পরিচালক রতন কুমার দাস বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাকখালী নদী দখল ও দুষনের বিষয়টি দুদকের নজরে আসার পর নদীটি সরেজমিন পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আজকের এ পরিদর্শ।

দুদকের এ কর্মকর্তা বলেন, পরিদর্শনে বাকখালী নদী দখল ও দূষনের সত্যতা পাওয়া গেছে। তাই বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিশেষ করে পৌরসভার পক্ষ থেকে বর্জ্য ফেলার বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব দায়া হচ্ছে।

জানা গেছে, বাঁকখালী নদীর দৈর্ঘ্য ৯০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২৫ কিলোমিটার এলাকায় রয়েছে অবৈধ দখলদারদের বিভিন্ন স্থাপনা।

কক্সবাজার জেলার প্রধান নদী হওয়ায় বাঁকখালীর ওপর অন্তত সাত লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। অথচ জনগুরুত্বপূর্ণ এ নদী অবৈধভাবে দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলছে প্রভাবশালীরা। আবার অনেকেই নদী ভরাট করে আবাসন প্লট তৈরি করে বিক্রিও করছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে জেলা প্রশাসনের তৈরি করা তালিকায় প্রভাবশালীদের নাম নেই বলে অভিযোগ করেছেন পরিবেশবাদীরা।

পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, সম্প্রতি জেলা প্রশাসন যে তালিকাটি তৈরি করেছে, তা অনেকটা প্রভাবশালী অবৈধ দখলদারদের রক্ষার তালিকা। তাই তালিকাটি বাদ দিয়ে পুনরায় পূর্ণাঙ্গ আরেকটি তালিকা তৈরি করা প্রয়োজন। না হলে তালিকাটি যে উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে, সে উদ্দেশ্য পূরণ হবে না।

দখলের চিত্র: বাঁকখালী নদী ও নদীর দুই তীর দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে বসতবাড়ি, পাকা ও সেমিপাকা দোকানপাট, ময়দার কল, চিংড়িঘের, হোটেল, শৌচাগার, মুরগির খামার, লবণের গুদাম ও বরফকলের মতো স্থাপনা। এ নদীর আশপাশ এলাকায় পাহাড় কাটার কারণে বর্ষাকালে কাটা পাহাড়ের মাটি পানির স্রোতে বিভিন্ন নালা, খাল-বিল হয়ে নদীতে এসে পড়ছে। ফলে ভরাট হচ্ছে নদী। কোথাও কোথাও রাবার ড্যাম দিয়ে এর গতিপথ বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। ফলে বেড়ে গেছে লবণাক্ততা।

দূষণের চিত্র: দখলের পাশাপাশি চলছে নদীদূষণের প্রতিযোগিতা। দূষণের এ প্রতিযোগিতায় ব্যক্তিবিশেষের সঙ্গে যোগ হয়েছে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার পৌরসভাও। বাঁকখালী নদীর তিনটি স্থানে (পেশকারপাড়া, কস্তুরাঘাট ও বিআইডব্লিউটিএ কার্যালয়সংলগ্ন) প্রতিনিয়ত পড়ছে পৌরসভার বর্জ্য। শহরের হোটেল-মোটেলের বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে এ নদীতে।

পরিবেশ অধিদপ্তর এ নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা পানির নমুনা গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখেছে, পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেছে এবং অম্লতার (অ্যাসিডিটি) পরিমাণ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর সরাসরি প্রভাব পড়বে নদীতে থাকা জলজ প্রাণী ও জীববৈচিত্র্যের ওপর। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে নদীতে যখন পানি থাকে না, তখন রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকার বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে হচ্ছে তামাকের চাষ। তামাক চাষ করতে গিয়ে ছিটানো হচ্ছে বিষাক্ত কীটনাশক ও সার। পরবর্তী সময়ে সেচের মাধ্যমে পানির সঙ্গে কীটনাশক মিশ্রিত হয়ে তা নদীর পানি দূষিত করছে।

নদী রক্ষায় আদালতের নির্দেশনা: বাঁকখালী নদী রক্ষায় সামাজিক আন্দোলনের পাশাপাশি এগিয়ে এসেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দায়েরকৃত এক রিট (নং ৮৩২৫/২০১৪) মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে বাঁকখালী নদী দখলকারীর তালিকা তৈরি করে তাদের উচ্ছেদ ও দূষণের উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধ করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আদালত নদীতীর চিংড়ি বা তামাক কিংবা ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে ইজারা প্রদান করা থেকে বিরত থাকতে একটি রুলও জারি করেন। এ রুলে নদীটিকে কেন প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করার নির্দেশ দেয়া হবে না বা কেন প্রাথমিক প্রবাহ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণপূর্বক তা রক্ষা করার নির্দেশ প্রদান করা হবে না এবং নদীর উভয় তীরের উপকূলীয় বন ফিরিয়ে আনার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন আদালত।##

পাঠকের মতামত: