ঢাকা,বুধবার, ১৫ মে ২০২৪

চকরিয়ায় কিশোর আনাস খুনের রহস্য উদঘাটন, ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা: গ্রেপ্তার-১, জানাযা সম্পন্ন

[checklist]মগবাজার পৌর কমিউনিটি সেন্টার মাঠে অনুষ্ঠিত হয় আনাস ইব্রাহিমের নামাজে জানাযা। এতে হাজারো শোকাহত মানুষ অংশনেন।

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::

কক্সবাজারের চকরিয়ায় ক্রিকেট খেলার বিরোধের জেরে ছুরিকাঘাতে আনাস ইব্রাহিম (১৮) নামের এক ছাত্রলীগ কর্মী খুন হয়েছেন। শনিবার দিবাগত রাত দশটার দিকে চকরিয়া পৌরশহরের বিপনী বিতান ওয়েস্টার্ণ প্লাজার ভেতরে একটি দোকানের জুতার দোকানের সামনে ঘটেছে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় বন্ধু আনাসকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছে একই এলাকার আবদুল্লাহ নামের আরেক কিশোর। নিহত আনাস ইব্রাহিম চকরিয়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিনামারা গ্রামের হাফেজ নেছার আহমদের ছেলে। সে সদ্য এসএসসি পাশ করেছেন। পরীক্ষার ফলাফলেও জিপিএ-৫ পেয়েছে আনাস। পাশাপাশি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন আনাস। বর্তমানে চকরিয়া পৌর ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী। তবে ইতোপুর্বে পৌরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।

নিহত আনাসের বাবা হাফেজ নেছার আহমদ চট্টগ্রামের কাপাসগোলা জামতলা শাহী জামে মসজিদের খতিব। তাঁর মা তছলিমা জান্নাত চকরিয়া পৌরসভার নিজপানখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। এদিকে হত্যাকা-ের এ ঘটনায় গতকাল রোববার চকরিয়া থানায় নিহতের বাবা হাফেজ নেছার আহমদ বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা রুজু করেছেন। মামলার এজাহারে ৬ জনের নাম উল্লেখ ও আরো ৫-৬জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করেছেন। এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন চকরিয়া পৌরসভার ৭নম্বর ওয়ার্ডের কাশেম মাস্টার পাড়ার জসিম উদ্দিনের ছেলে শোয়াইবুল ইসলাম রুবেল, রফিকুল ইসলামের ছেলে সোহেল, জাকের আহমদের ছেলে মোহাম্মদ বাবু, নাজিম উদ্দিনের ছেলে সালাহ উদ্দিন, ইসমাইল বাবা অজ্ঞাত ও সামসুল আলমের ছেলে মোহাম্মদ রিয়াজ। তাদের মধ্যে পুলিশ ঘটনার পরপর অভিযান চালিয়ে এজাহারনামীয় আসামি মোহাম্মদ রিয়াজ নামের একজনকে গ্রেফতার করেছেন।

নিহতের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার রাতে নিহত আনাস ইব্রাহিম ঈদের শপিং করার জন্য তার বন্ধু আবদুল্লাহকে নিয়ে চকরিয়া পৌরশহর চিরিঙ্গায় আসেন। তারা রাত দশটার দিকে চকরিয়া শহরের ওয়াপদা সড়কের বিপনী বিতান ওয়েস্টার্ণ প্লাজায় ঢুকছিলেন। এ সময় আগে থেকে সেখানে ওঁৎ পেতে থাকা ৮-১০ জনের একটি দুর্বৃত্তল দল তাদের গতিরোধ করে অতর্কিত ধারালো ছুরি নিয়ে আঘাত করতে থাকে আনাস ইব্রাহিম ও আবদুল্লাহকে। এতে আনাসের পেটে ছুরিকাঘাতে নাড়ি-ভুরিও বের হয়ে যায়। আর আবদুল্লাহকে পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা।

নিহত আনাসের স্বজনরা জানায়, পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পালাকাটা কাশেম মাস্টার পাড়ার রুবেলের সঙ্গে আনাসের মধ্যে ক্রিকেট খেলার একটি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। এনিয়ে সম্প্রতি দুইজনের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটে। সেই যাত্রায় আনাস বেঁচে যায়। কিন্তু রুবেল তখন থেকেই সুযোগ খুঁজছিল আনাসকে মারতে। সেই ধারাবাহিকতায় আনাস ঈদের শপিং করতে চিরিঙ্গা আসলে দলবল নিয়ে রুবেল সশস্ত্র অবস্থায় হামলে পড়ে আনাস ও তার বন্ধু আবদুল্লাহর ওপর।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এলাকায় ক্রিকেট খেলার বিরোধের জের ধরে হামলার ঘটনাটি ঘটে। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। পুলিশ তাৎক্ষনিক অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় জড়িত একজনকে গ্রেফতার করেছে।

ওসি বলেন, হত্যাকা-ের এ ঘটনায় নিহতের বাবা হাফেজ নেছার আহমদ বাদি হয়ে গতকাল থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করেছেন। মামলার অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে।

অপরদিকে চকরিয়া থানা পুলিশের পাশাপাশি কিশোর আনাস খুনের নৈপথ্য উৎঘাটন ও ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে নেমেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কক্সবাজার জেলা ইউনিটের একটি দল। পরির্দশক মেজবাহ আহমদের নেতৃত্বে পিবিআই পুলিশের একটিদল গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরে তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও চকরিয়া থানা পুলিশের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন।

এদিকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল দুপুরে গ্রামের বাড়িতে আনা হয় কিশোর আনাস ইব্রাহিমের মরদেহ। এরপর বিকাল চারটার দিকে উপজেলা পরিষদের পাশে মগবাজার পৌর কমিউনিটি সেন্টার মাঠে অনুষ্ঠিত হয় তাঁর নামাজে জানাযা। এতে দলমত নির্বিশেষে হাজারো শোকাহত মানুষ অংশনেন। পরে তাকে স্থানীয় মসজিদ কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। নামাজে জানাযা শেষে সমবেত সকলস্তরের জনতা কিশোর আনাস ইব্রাহিম হত্যাকা-ে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার পুর্বক আইনের মাধ্যমে ফাঁিসর দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। মিছিলটি চকরিয়া উপজেলা পরিষদ থেকে শুরু হয়ে চকরিয়া থানা পয়েন্টে এসে শেষ হয়।

পাঠকের মতামত: