ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪

চকরিয়ায় মাতামুহুরী ড্রেজিংয়ে অনিয়ম, কোটি টাকার বালু লুটের অভিযোগ

জহিরুল ইসলাম, চকরিয়া ::  কক্সবাজারের চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদী ড্রেজিংয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। নদী ড্রেজিংয়ে যে নিয়ম রয়েছে এখানে তা মানা হচ্ছে না। নদী ড্রেজিংয়ের চেয়ে চলছে মূলত বালুর ব্যবসা। এ কাজটির কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদার নদী ড্রেজিংয়ের নাম দিয়ে ইতিমধ্যে কয়েক কোটি টাকার বালু তুলে বিক্রি করে দিয়েছেন। ড্রেজিং কাজ সম্পন্ন করার বেঁধে দেয়া সময়ের শেষ পর্যায়ে এসে সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন এখনও ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়নি।

অভিজ্ঞরা জানিয়েছেন, পরস্পর যোগসাজশ করে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হয়নি দেখিয়ে সময় বাড়িয়ে মূলত এ নদী থেকে আরও কয়েক কোটি টাকার বালু লুটের পাঁয়তারা করা হচ্ছে। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের মার্চ মাসে মাতামুহুরী নদীর চকরিয়া অংশে বেতুয়া বাজার ব্রিজ পয়েন্টে প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ কিলোমিটার নদী ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়। এ কাজটি সম্পন্ন করার কথা ছিল চলতি বছরের জুন মাসে। মাতামুহুরী নদী ড্রেজিং নামে এডিবির অর্থায়নে কক্সবাজার জেলাধীন ক্ষতিগ্রস্ত পোল্ডারগুলোর পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড এ প্রকল্পটি হাতে নেয়। এ প্রকল্পটির কার্যাদেশ পায় এসএস ন্যাশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

কার্যাদেশ পাওয়ার পরপরই ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু করে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির লোকজন নদীতে বড় বড় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নীতিমালা অনুসরণ না করে যেনতেনভাবে যেখানে বালু আছে সেখান থেকে উত্তোলন শুরু করেন। ড্রেজিং কাজ শুরু করার চার মাস সময়ের মধ্যে ৫০ থেকে ৫৫ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করে চকরিয়া পৌরসভার আমানচর এলাকায় স্তূপ করেন। ওই বছরের জুন মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে উত্তোলিত কয়েক কোটি টাকার সমুদয় বালু অবৈধভাবে বিক্রি করে দিয়ে ভাগবাটোয়ারা করে নেন। গত বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে মাতামুহুরী নদীর ড্রেজিং করা স্থানে বালু পড়ে আবারও ভরাট হয়ে যায়। গত বর্ষার পর একই স্থানে একইভাবে ড্রেজিংয়ের নামে মূলত বালু উত্তোলন শুরু করা হয়। ওই উত্তোলিত বালু থেকেও বেশিরভাগ বালু একইভাবে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ আছে। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র দাবি করেছে, এ পর্যন্ত এ কাজটির ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। জুনের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে না, তাই আরও এক বছর সময় বর্ধিতকরণের আবেদন করা হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে মাতামুহুরী নদী ড্রেজিং কাজে কোনো নীতিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে না। এ ড্রেজিং প্রকল্পের কাজটি যেন বালু লুটপাটের মহাপ্রকল্প হয়ে উঠেছে। যেখানে বালু পাওয়া যাচ্ছে সেখান থেকেই মূলত বালু উত্তোলন করে নেয়া হচ্ছে। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা জানান, এ ৩ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং কাজে প্রায় ৭৫ লাখ ঘনফুট বালু উঠবে বলে নির্ধারণ করা হয়েছে, যা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের কাছ থেকে বুঝে নেয়া হবে। ওই উত্তোলিত বালু জেলা রাজস্ব কর্মকর্তার পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করে বিক্রি করার প্রক্রিয়া চলছে।

এলাকাবাসী জানান, প্রতি বর্ষায় নদীতে পাহাড়ি ঢলে পানির সঙ্গে বালু চলে আসে। নদীর ড্রেজিং করা এলাকা আবারও বালুতে ভরে যায়, এতে ঠিকাদারের ব্যবসা হয়। সামনের বর্ষাসহ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার দুই বর্ষার সুযোগ নিচ্ছেন। সময় বাড়াতে পারলে আরও এক বর্ষার সুযোগ পাবেন। এতে ৭৫ লাখ ঘনফুট বালু রেখে দিয়ে আরও সমপরিমাণ বালু অবৈধভাবে বিক্রি করে দেয়া যাবে। এভাবে এ কাজে বরাদ্দ দেয়া ৬ কোটি টাকার সমপরিমাণ টাকা শুধু অবৈধভাবে বালু বিক্রি করে সংশ্লিষ্টদের পকেটে ঢুকছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ সম্পন্ন না দেখিয়ে মূলত বালু লুটের জন্য সময় বাড়ানোর পাঁয়তারা করছেন। তারা ইতিমধ্যে কয়েক কোটি টাকা বালু তুলে বিক্রি করে দিয়েছে, সময় বাড়াতে পারলে আরও কয়েক কোটি টাকার বালু তুলে বিক্রি করে দেয়ার সুযোগ পাবেন।

এলাকাবাসী আরও অভিযোগ করেন, গত বছর মাতামুহুরী নদীতে এ ড্রেজিং কাজটি শুরুর পর থেকে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বড় বড় ড্রেজার মেশিন নিয়ে তার নির্ধারিত এলাকার বাইরে গিয়েও মাতুমুহুরী নদী থেকে যত্রতত্র বালু তুলে যাচ্ছেন। সেই থেকে পুরো নদীতে যেন বালু লুটের মহোৎসব শুরু হয়ে যায়। এ ব্যাপারে এসএস ন্যাশনের ঠিকাদার নূরে বশির সয়লাব এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সব করছে একটি প্রভাবশালী মহল, নাম হয়ে যাচ্ছে আমার।

পাঠকের মতামত: