ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

মাতামুহুরী সেতুর মাঝপয়েন্টে ফাটল যানবাহন চলাচল ফের বন্ধের আশঙ্কা

অতিরিক্ত ওজনের ভারী যান চলাচলের কারণে মাতামুহুরী সেতুর মাঝ পয়েন্টে ফাটল দেখা দিয়েছে।

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::

অতিরিক্ত ভারী ওজনের যানবাহন চলাচলের কারনে আবারও মাতামুহুরী সেতুর মাঝপয়েন্টে বড় ধরণের ফাটল তৈরী হয়েছে। এ অবস্থার কারনে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অধিক গুরুত্বপুর্ণ চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী সেতুটি যে কোন মুহুর্তে ভেঙে পড়ে যানবাহন চলাচল বন্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে সেতুর মাঝপয়েন্টের অংশ অত্যাধিক ঝুঁিকপুর্ণ হওয়ায় বুধবার রাতে সংস্কার কাজ শুরু করার কারণে হঠাৎ করে মাতামুহুরী সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ফলে বুধবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। রাতে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামুখী ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী সব ধরণের যানবাহন পেকুয়া হয়ে বিকল্প সড়ক দিয়ে চলাচল করে।ে ফলে যানবাহন চলাচলে তেমন বিঘœ ঘটেনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফের মাতামুহুরী সেতুতে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। যদিও সারাদিন সেতুর এক পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও অপর পাশে সংস্কার কাজ অব্যাহত থাকায় সেই অংশ বন্ধ রাখা হয়।

কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া মাতামুহুরী নদীর সেতুর মাঝখানের একটি অংশ দিয়ে গাড়ি চলাচলে কিছুটা সমস্যা ছিল। বর্তমানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সংস্কার কাজের অংশ হিসাবে এটি মেরামত করা হচ্ছে। তবে মেরামত কাজ সমাপ্ত হলে আজকালের মধ্যে সমস্যাটি কেটে যাবে।

জানা গেছে, প্রায় এগারমাস আগে ২০১৮ সালের জুন মাসে কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সংস্কার খাতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে আড়াই কোটি টাকার বিল পরিশোধ করেছেন। ব্যাপক ঢাকডোল পিটিয়ে ওইসময় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অধিক গুরুত্বপুর্ণ ও অধিক ঝুঁিকপুর্ণ চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা পয়েন্টের মাতামুহুরী সেতুর নীচে বালুর বস্তার ঠেস দিয়ে জোড়াতালির মাধ্যমে সেতুটির সংস্কার কাজও সম্পন্ন করেছিলেন। তারপর কয়েকমাস সেতু দিয়ে সব ধরণের যানবাহন চলাচল আগের মতো স্বাভাবিক হলেও চলতিবছরের ফেব্রুয়ারী মাসে কয়েকদফা বৃষ্টিতে ফের সেতুর সংস্কার করা অংশে (মাঝ পয়েন্টে) উপরে প্রলেপ লাগানো বিটুমিন গুলো উঠে পড়ে। এতে আবারও গর্তের সৃষ্টি হয় সেতুর বিভিন্ন অংশে।

এ অবস্থার কারনে এপ্রিল মাসের ২১ তারিখ ও সর্বশেষ ২২ মে রাতে হঠাৎ করে সংস্কার করা সেতুর ওই অংশের একটি বিশাল এলাকা নতুনভাবে ধসে পড়ে। এতে সেতুর একঅংশে দিয়ে ঝুঁিক নিয়ে যানবাহন চলাচলের কারনে তৈরী হয় তীব্র যানজট। পাশাপাশি চরম ঝুঁিকতে পড়ে সব ধরণের যানবাহন চলাচল।

অভিযোগ উঠেছে, ১০ টনের অধিক ভারী যানবাহন চলাচল করার কারণে মহাসড়কের চকরিয়ার চিরিঙ্গা মাতামুহুরী সেতুর বেশ কয়েকটি স্থানে বড় ধরনের ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সেতুটি। সেখানে লোহার বড় পাইপের ঠেস দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ক্রস বর্ডার ইমপ্রুভমেন্ট বিভাগ।

অবশ্য এর আগেও সেতুটির মাঝখানে দেবে গিয়ে বড় ধরনের ফাটল সৃষ্টি হয়। তখন সেতুর নিচে বালির বস্তার ঠেস দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। ওই সময় সেতুর দুদিকে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড দেওয়া হয়, ‘ঝুঁকিপূর্ণ সেতু, তাই ১০ টনের অধিক ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ’।

চকরিয়া উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি কোনো অবস্থাতেই বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে দেওয়া উচিত হবে না। ইতোমধ্যে সেতুটির বেশ কয়েকটি স্থানে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে আমরা আতঙ্কিত।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা পয়েন্টে মাতামুহুরী নদীর উপর পাকিস্তান আমলে নির্মিত সেতুটি ধসে পড়ার উপক্রম হয় চার বছর আগে। সেতুর উপরে-নিচে জোড়াতালি দিয়ে ধস ঠেকানোর কাজ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে চলতে গিয়ে একাধিক দুর্ঘটনায় অনেক প্রাণহানিও ঘটেছে।#

পাঠকের মতামত: