ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

চকরিয়ায় বালি উত্তোলন চলছেই, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ঝুকিঁপূর্ণ মাতামুহুরী সেতু 

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: ব্যস্ততম চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার চিরিঙ্গায় বিদ্যমান মাতামুহুরী সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এই অবস্থায় যান চলাচল সচল রাখতে এবং স্থায়িত্ব ধরে রাখতে সেতুটির কাছে নদীর উজান এবং ভাটির এক কিলোমিটার এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন ও মাটি কাটা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন ছয় লেনের দ্বিতীয় মাতামুহুরী সেতুর প্রকল্প পরিচালক। এ সংক্রান্ত একটি পত্র কক্সবাজার জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করেছেন প্রকল্পর ব্যবস্থাপক (পূর্ব) সুপ্তা চাকমা। প্রেরিত পত্রে বিষয়টি অতীব জরুরি এবং এই তৎপরতা অব্যাহত থাকলে অবকাঠামোগত দিক দিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলেও অবহিত করা হয়।
পত্রটি গত এপ্রিল মাসের ১৮ তারিখ ইস্যু করা হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এসব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে। গত বুধবার বিকালে সেতুর একেবারে কাছ থেকে এস্কেভেটর দিয়ে অবৈধভাবে বালি ও মাটি কেটে ১০ চাকার ৩০ টন ওজনের ডাম্পার ভর্তি করে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর ওপর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
প্রেরিত পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, জাইকার অর্থায়নে ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (বাংলাদেশ) আওতায় মাতামুহুরী নদীর ওপর নতুন সেতু নির্মাণের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। বর্তমানে সেতু নির্মাণের স্থানে নদীশাসন ও নদীর নাব্যতা রক্ষার জন্য নিয়োজিত ঠিকাদার কর্তৃক যথাযথ ডিজাইন অনুসরণ করে কনসালটেন্ট ও সওজের প্রতিনিধির নির্দেশনা মোতাবেক বালি উত্তোলন বন্ধ ও নদী খননসহ অন্যান্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কিন্তু কতিপয় লোকজন কনসালটেন্ট ও সওজের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সেতুর সন্নিকটে বালি উত্তোলন করছে এবং মাটি কেটে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে; যা সেতুটির জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
উল্লেখ্য, একই পত্রে সেতুর এক কিলোমিটার উজান এবং ভাটির মধ্যে বালি উত্তোলন ও মাটি কাটা অবকাঠামোগত দিক দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এমতাবস্থায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়কে অবস্থিত এই গুরুত্বপূর্ণ মাতামুহুরী সেতুর নিরাপত্তার স্বার্থে উজান এবং ভাটির এক কিলোমিটার করে এলাকা থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বালি উত্তোলন ও মাটি কাটা বন্ধ করাসহ প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আশরাফুল আফসার দৈনিক আজাদীকে বলেন, মাতামুুহুরী নদী থেকে বালি উত্তোলনের জন্য কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। ছয় লেনের মাতামুহুরী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক কর্তৃক দেওয়া পত্রটি হস্তগত হওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, কোনো অবস্থাতেই অবৈধভাবে বালি উত্তোলন ও মাটি কাটতে দেওয়া হবে না। এজন্য কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, মাতামুহুরী সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে প্রায় চার বছর আগে। তখন সেতুর মাঝখানের একটি গার্ডারে ফাটল ধরলে দেবে যায় সেতুটি। এই পরিস্থিতিতে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথমে বালির বস্তার ঠেস ও পরে স্টিলের পাইপ দিয়ে কোনোভাবে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করে সওজ। ওইসময় সওজ সেতুটির স্থায়ীত্ব ধরে রাখতে ১০ টনের বেশি যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এভাবেই চার বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করে আসছিল। কিন্তু গত দুই মাস ধরে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটির ওপর দিয়ে অত্যধিক ভারী যানবাহন (৩০ টন পর্যন্ত) চলাচল করায় নতুন করে আরেকটি গার্ডারে বড় ধরনের ফাটল দেখা দেয়। এমনকি সেতুর একেবারে কাছ থেকে প্রভাবশালী ব্যক্তি কর্তৃক অবৈধভাবে তোলা বালি ও মাটি ৩০ টন ওজনের ১০ টাকার ডাম্পারভর্তি করে পরিবহন করা হচ্ছে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর ওপর দিয়ে। এতে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের বিপর্যয় তথা ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে ১০ টনের অধিক ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে সেতুটির একাধিক গার্ডারে বড় ধরনের ফাটল ধরায় সেখানে স্টিলের বড় পাইপের ঠেস দিয়ে ফাটল ঠেকানোর চেষ্টা করেছে সওজের ক্রস বর্ডার ইমপ্রুভমেন্ট বিভাগ। অনেকটাই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়া ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুর ওপর দিয়ে ১০ টনের অধিক ভারী যানবাহন চলাচল বছর চারেক আগে থেকেই নিষিদ্ধ থাকলেও কার্যত তা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
সেতুটির দেবে যাওয়া অংশে লাল পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দুই শ্রমিক জানান, ১০ টন বা কম ওজনের যানবাহন যখন সেতুর ওপর চলে তখন কোনো সমস্যা হয় না। যখন প্রায় ৩০ টন ওজনের ভারী পণ্য বা মালবাহী গাড়ি সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করে তখন পুরো সেতুতে কাঁপুনি শুরু হয়। এই অবস্থায় তারাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী চকরিয়া নিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারভুক্ত প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে চারলেনে রূপান্তর। এর আগে সড়কের মাতামুহুরী নদীর চকরিয়া অংশে ছয়লেনের মাতামুহুরী সেতুর নির্মাণযজ্ঞ দৃশ্যমান হয়েছে। কিন্তু কারো ব্যক্তিস্বার্থে এবং অবৈধভাবে বালি উত্তোলন ও মাটি কাটার কারণে এই বিদ্যমান সেতু এবং নতুন সেতুর নির্মাণকাজ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়বে তা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। প্রশাসনের সহায়তায় অচিরেই এসব অপতৎরপতা বন্ধ করা হবে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, ছয় লেনের মাতামুহুরী সেতু নির্মাণের প্রকল্প ব্যবস্থাপক কর্তৃক দেওয়া পত্রটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আমার কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পাঠকের মতামত: