ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাবার লাশ রেখে এসএসসি পরীক্ষায় অংশনেয়া সেই তাওসিফ পেয়েছেন জিপিএ-৫

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::

চলতিবছরের ৭ ফেব্রুয়ারী ভোরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার স্কুলশিক্ষক মৌলভী নাজিম উদ্দীন। ওইদিন সকাল ৯টার কিছু আগে মরদেহ চমেক থেকে আনা হয় গ্রামের বাড়ি উপজেলার পূর্ব গোঁয়াখালীতে। ওইসময় পরিবার সদস্য ছাড়াও প্রতিবেশিসহ আগত আত্মীয় স্বজনের মাঝে ছিল শোকের ছায়া।

বেদনাবিদুর পরিবেশ কাটিয়ে পরিবার সদস্যরা স্কুলশিক্ষকের নামাজে জানাযা ও দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ওইসময় একজনের একটি ছোট্ট অনুরোধে পরিবারের সবাই থমকে দাঁড়ান। কারণ কী জানতে চান প্রতিবেশিসহ বাড়িতে আগত স্বজনরা। তখন তাদেরকে বলা হয়, বাবা পৃথিবীতে বেঁেচ নেই, তবে মরদেহ বাড়িতে আছে। তাই দাফনের বিষয়টি আরো একটু দীর্ঘায়িত করতে হবে। এই আর্জি মেঝ ছেলে ইফতি আকবর তাওসিফ’র। কারণ ওইদিন ছিল তাওসিফ’র এসএসসি ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা। সেইজন্য তাওসিফ পরিবারের অন্যদের কাছে একটু সময় চান, অন্ততপক্ষে তাঁর পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাবার লাশ বাড়িতে রাখতে হবে। পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরলেই পরিবারের অন্যদের সঙ্গে বাবার নামাজে জানাযায় শরীক হবেন তাওসিফ।

ছোটছেলের প্রতি সহানুভুতি দেখিয়ে পরিবার সদস্যরা বাবা স্কুলশিক্ষক নাজেম উদ্দিনের লাশ বাড়িতে রেখে দেন। এরপর পরীক্ষা কেন্দ্রে ছুটে যান ছেলে ইফতি আকবর তাওসিফ। প্রতিদিনের মতো ওইদিনের ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষাও সাবলীলভাবে দিয়েছেন এই কৃতি শিক্ষার্থী। তাঁর প্রমাণ মিলেছে সোমবার ৬ মে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড থেকে প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে অবশেষে সেই তাওসিফ জিপিএ-৫ পেয়েছে। ইফতি আকবর তাওসিফ পেকুয়া উপজেলার শিলখালী উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। তার বাবা ছিলেন একই উপজেলার পূর্ব গোঁয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

চমেক হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনার পর সেদিন বাবার লাশ একনজর দেখে পরীক্ষা দিতে যান ছেলে ইফতি আকবর তাওসিফ। তিনমাস পর সোমবার ফল প্রকাশের পর অনুভূতি জানাতে গিয়ে কৃতি শিক্ষার্থী তাওসিফ বলে, প্রাইমারী স্কুলে পড়ার সময় বাবা ক্লাসে সব সময় বলতেন, আর্দশবান মানুষ হতে গেলে, বাড়িতে কেউ মারা গেলেও লাশ রেখে ক্লাসে যেতে হবে, লেখাপড়া করতে। জীবিত বাবার সেই উক্তি আমাকে মৃত বাবার দাফনের সময় বেশি অনুপ্রাণিত করেছে। সেইজন্য আমি বাবার লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষা দিতে যাই। আল্লাহ পাক আমার প্রতি সহায় হয়েছেন। ভালো ফল পেয়েছি। এইজন্য শুকরিয়া জানাচ্ছি।

প্রয়াত স্কুলশিক্ষক মৌলভী নাজেম উদ্দিনের চার ছেলে সন্তানের মধ্যে মেঝছেলে তাওসিফ এর আগে জেএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ সহ বৃত্তি পেয়েছে। তার বড় ভাই ফয়জুল আকবর তোয়াহা চট্টগ্রাম বিএএফ শাহীন কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত। তৃতীয় ভাই তাহফিমুল আকবর চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছেন। সবার ছোট চারবছরের ইসরাক বিল্লাহ এখনো মায়ের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছে। #

পাঠকের মতামত: