ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ফায়ার সার্ভিসের ৯২০০ স্বেচ্ছাসেবক: নিরাপদ আশ্রয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি, ঝুঁকিতে সন্দ্বীপ

নিজস্ব প্রতিবেদক ::

ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবিলায় চট্টগ্রামে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ৯ হাজার ২০০ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক জসিম উদ্দিন।

তিনি চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘আমরা এমনিতেই সার্বক্ষণিক দুর্যোগ দুর্ঘটনা মোকাবিলায় সতর্ক থাকি। ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবিলায় আমরা বিশেষভাবে সতর্ক রয়েছি। চট্টগ্রামে আমাদের ৮ হাজার ২০০ স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। একেবারে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে আমাদের স্বেচ্ছাসেবক টিম ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবিলায় কাজ করবে। এর বাইরে কক্সবাজারে এক হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করবেন জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক  চকরিয়া নিউজকে আরো বলেন, ‘ইউনিয়ন ও উপজেলা এলাকার স্বেচ্ছাসেবকদের স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিসের চৌকস সদস্যদের নিয়ে ১০০ সদস্যের একটি স্পেশাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি। জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আগ্রাবাদে আমাদের ১০০ চৌকস সদস্যকে নিয়ে স্পেশাল টিম রেডি করে রিজার্ভ রাখা হয়েছে? তাদের সঙ্গে স্পেশাল সব ইক্যুইপমেন্ট রয়েছে। কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ওই এলাকার টিমের সঙ্গে এই রিজার্ভ টিমের সদস্যরাও উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেবেন।’

‘ফণী’ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে বুধবার জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা করেছেন বলে জানিয়েছেন জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে সব ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছি।’

ঘাটগুলোতে ফিশিং ট্রলারের ভিড় :: ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আঘাত হানার আশঙ্কায় নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরতে শুরু করেছেন বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত জেলেরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার নিয়ে নগরের ফিশারিঘাটসহ কর্ণফুলী তীরবর্তী বিভিন্ন ঘাটে আশ্রয় নেন মাঝি-মাল্লারা। এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়।

নগরের ফিশারিঘাটে আশ্রয় নিতে আসা ট্রলারের জেলে রমিজ উদ্দিন চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘বেশির ভাগ ফিশিং ট্রলার নিরাপদে আশ্রয়ে চলে আসলেও এখনো সাগরে অনেক ট্রলার রয়েছে। তারা বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে সবাই নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরবেন।’

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ সামান্য উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর/উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। বৃহস্পতিবার সকালে ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার যা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর বিক্ষুব্ধ অবস্থায় রয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত ও উত্তর/উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে আজ শুক্রবার বিকেল নাগাদ ভারতের উড়িষ্যা উপকূলে অতিক্রম করেছে। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছাতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

সন্দ্বীপে প্রস্তুতি : ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় উপকূলীয় সন্দ্বীপে প্রশাসন আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে নিরাপত্তাজনিত কারণে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে সন্দ্বীপের সঙ্গে সকল নৌ-যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ‘ফণী’র প্রভাবে সাগরের উত্তাল ঢেউ ক্রমশঃ বাড়ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা চেয়ারম্যান মাস্টার শাহজাহানের সভাপতিত্বে বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা ও উপজেলার সকল ইউপি চেয়ারম্যানদের নিয়ে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা পরিষদে জরুরি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। উপজেলার ৬০টি আশ্রয় কেন্দ্র ইতোমধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে জনসাধারণের জন্য প্রস্তুত রাখার কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুল হুদা। তিনি জানান, এসব আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়া আরও শতাধিক স্কুল কাম শেল্টার রয়েছে, যেগুলোতে জরুরি সময়ে মানুষকে আশ্রয় দেওয়া যাবে। সকল ইউপি চেয়ারম্যান এলাকায় আসন্ন দুর্যোগের বিষয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য জরুরি বৈঠক করেছেন।

এদিকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন সকল প্রাইমারি স্কুলের ভবন দুর্যোগের সময় খুলে রাখতে প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশ দিয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজলুল করিম দ্বীপের হেলথ ও ইউপি কমপ্লেক্স ছাড়াও এখানকার ৩৯টি কমিউনিটি ক্লিনিককে জরুরি চিকিৎসা প্রদানের জন্য প্রস্তুত রাখার কথা জানান। প্রত্যন্ত এলাকায় জনসচেতনতা সৃষ্টিতে মাইকিংসহ আপৎকালীন সময়ে মানুষকে সাইক্লোন শেল্টারে নেওয়াসহ বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদান করতে রেডক্রিসেন্টের ২২২১ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ শুরু করেছেন বলে জানান উপজেলা টিম লিডার মশিউর রহমান বেলাল। তবে নানা প্রস্তুতির মাঝেও ঝুঁকিতে রয়েছেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ইউনিয়নের ৪০ হাজার মানুষ। সাগর মোহনায় মেঘনা চ্যানেলে সৃষ্ট এ দ্বীপ ইউনিয়নটির চতুর্দিকে কোনো বেড়িবাঁধ নেই। আর আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে মাত্র ৭টি।

পাঠকের মতামত: