ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

জব্বারের বলীখেলায় চকরিয়ার জীবনকে হারিয়ে শাহজালাল নতুন চ্যাম্পিয়ন হল কিসের ভিত্তিতে !

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্রগ্রাম ::

‘ভাই ধর, ভালা গরি চিবি ধর, লতা পেজ দে, লেইংগা পেজ দে, উইটতো নদিস।’ এভাবেই চকরিয়ার তারেকুল ইসলাম জীবন বলীকে উৎসাহ যোগাচ্ছিলেন তারই এক শুভাকাঙ্ক্ষী। গতকাল জব্বারের বলীখেলায় ফাইনাল ম্যাচে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। এবারের ফাইনাল ম্যাচটি ছিল গত আসরের ফাইনালের রিপ্লে। তবে ফলাফলে এসেছে পরিবর্তন। এবার সেরার মুকুট উঠেছে শাহজালাল বলীর মাথায়। যিনি গত আসরে চকরিয়ার জীবন বলীর কাছে হেরেছিলেন। এবার সেই জীবনকে হারিয়েই নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করলেন শাহজালাল। তবে গত আসরের মত এবারের আসরেও ফলাফল নির্ধারিত হয়েছে একই পন্থায়। গতবারের মতো এবারও দুই ফাইনালিস্ট কেউ কাউকে হারাতে পারেননি। তাই পয়েন্ট কিংবা টেকনিকের দিক দিয়ে এগিয়ে ছিল বলে কুমিল্লার শাহজালাল বলীকে এবারের খেলায় চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করেন রেফারিরা। তবে কিসের ভিত্তিতে এই পয়েন্ট দেওয়া হয় তা স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তারা।
গত আসরের দুই ফাইনালিস্ট নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের লড়াইটি শুরু করেন বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে। দুই দফায় ২৩ মিনিট লড়াই করেন তারা। কিন্তু কেউ যেন কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। ঘাম আর বালিতে মিশে দুজন তখন যেন একাকার। প্রত্যেকেই কৌশল অবলম্বন করছিলেন নিজেকে বাঁচানোর। এভাবে সময় গড়িয়ে অন্ধকার নেমে আসছিল। ঠিক তখনই রেফারিরা শেষবারের মত একটা সময় বেঁধে দেন। আর ওই সময়ের মধ্যেই ম্যাচ শেষ করতে বলা হয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা! একই পথে হাঁটতে লাগলেন দুজন। মাঝখানে অবশ্য একবার শাহজালালকে আছাড় দিয়েছিলেন জীবন। কিন্তু সেটি ফাউল ছিল বলে বাতিল হয়ে যায়। শেষবারের মতো বেঁধে দেওয়া সময়ে কেউ কাউকে আছাড় দিতে না পারায় রেফারি আবদুল মালেক টেকনিক এবং পয়েন্টে এগিয়ে থাকার কথা বলে কুমিল্লার শাহজালাল বলীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। আর তাতে জব্বারের বলীখেলার এবারের আসরে সেরার মুকুট বদল হয় জীবনের মাথা থেকে শাহজালালের মাথায়।
এর মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলার ১১০তম আসরের চ্যাম্পিয়ন হন শাহজালাল বলী। বাংলাদেশ আনসার-ভিডিপির এই কুস্তিগীর ততক্ষণে মেতে উঠেন উল্লাসে। অন্যদিকে এভাবে হেরে যাওয়াটা যেন মেনে নিতে পারছিলেন না জীবন বলী। অবশ্য সেমিফাইনালেও জীবনের খেলাটি নিষ্পত্তি হয়নি। মহেশখালীর মোহাম্মদ হোসেন বলীর সাথে ১২ মিনিট লড়াই করেছেন জীবন সেমিফাইনালে। কিন্তু কেউ কাউকে হারাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত রেফারিরা টসের মাধ্যমে জীবনকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। আর তাতেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন মোহাম্মদ হোসেন। তিনি বলেন, টেকনিকের কথা যদি বলতে হয়, তাহলে আমি এগিয়েছিলাম। বিজয়ী ঘোষণা করতে হলে আমাকে করতে হবে। কিন্তু সেটা না করে লটারির মাধ্যমে আমাকে হারানো হয়েছে। এটি কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় ন।
এর আগে বলীখেলার এবারের আসরের চ্যাম্পিয়ন বাউটের জন্য ১৬ জনকে বাছাই করা হয়। তারা হলেন, তারেকুল ইসলাম জীবন, শাহজালাল, শাহজাহান, কাঞ্চন, নজরুল ইসলাম, বজল আহমদ, মাহবুব, শাহাবুদ্দিন, লিয়াকত আলি, বিঞ্চু, ইসলাম, মাহফুজ, সজিব, বাদশাহ, মোঃ হোসেন এবং লালু। প্রি কোয়ার্টার ফাইনাল শেষে যে ৮ জন কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেন, তারা হলেন- কাঞ্চন, শাহাবুদ্দিন, জীবন, লালু, মাহবুব, হোসেন, বজল, শাহজালাল। এদের মধ্যে প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে শাহাবুদ্দিন কাঞ্চনকে, জীবন লালুকে, মোহাম্মদ হোসেন মাহবুবকে এবং বজল আহমদকে হারিয়ে শাহজালাল জায়গা করে নেন সেমিফাইনালে। প্রথম সেমিফাইনালে শাহজালালের সাথে দাঁড়াতেই পারেননি শাহাবুদ্দিন। মহেশখালীর এই বলীকে মাত্র ৩ মিনিটে ধরাশায়ী করে ফাইনালে জায়গা করে নেন শাহজালাল বলী। তবে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মোহাম্মদ হোসেনকে হারাতে পারেননি জীবন। ১২ মিনিটের লড়াইয়ের পর লটারির মাধ্যমে ফাইনালিস্ট হিসেবে ঘোষণা করা হয় তারেকুল ইসলাম জীবনকে। আর ফাইনালেও ঘটল একই ঘটনা। এখানেও কেউ কাউকে হারাতে পারেরনি। ফলে বিজয়ী ঘোষণা করতে ‘টেকনিক আর পয়েন্ট’ কে বেছে নেওয়া হয়। কিন্তু সে টেকনিক আর পয়েন্টের মানদণ্ড জানা নেই কারোই!
এবারের বলীখেলায় ১১৩ জন বলী অংশ নেন। চ্যাম্পিয়ন বাউটের ১৬ জন ছাড়া বাকিরা একটি করে ম্যাচ খেলার সুযোগ পান। তাদেরকে ক্রেস্ট এবং নগদ এক হাজার টাকা করে অর্থ পুরষ্কার দেওয়া হয়। চ্যাম্পিয়নকে নগদ ২০ হাজার টাকা ও ট্রফি এবং রানার্সআপকে নগদ ১৫ হাজার টাকা ও ট্রফি প্রদান করা হয়। বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে বলীখেলার উদ্বোধন করেন পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান। পরে তিনি পুরস্কার বিতরণ করেন। উদ্বোধনী এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন গ্রামীণফোনের চিফ মার্কেটিং অফিসার অ্যান্ড ডেপুটি সিইও ইয়াসির আজমান। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, আয়োজক কমিটির সভাপতি জহর লাল হাজারী ও সাধারণ সম্পাদক শওকত আনোয়ার বাদল, পাথরঘাটা ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইসমাইল বালি, সাবেক কাউন্সিলর এম এ মালেক ও মুহাম্মদ জামাল হোসেনসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।

পাঠকের মতামত: