ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজার মহাসড়ক দখল করে ‘ট্রাক টার্মিনাল’ ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থী ও পথচারীদের যাতায়াত

নিউজ ডেস্ক ::

দেশের ব্যস্ততম মহাসড়কগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অন্যতম। পর্যটন নগরী বান্দরবান, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিনের অবস্থান দেশের দক্ষিণে হওয়ায় এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ১০ হাজারেরও অধিক ছোট বড় ও বিলাস বহুল যানবাহন চলাচল করে। অথচ এ মহাসড়কের চন্দনাইশ উপজেলার বিজিসি ট্রাস্ট থেকে সাতকানিয়ার বিওসি মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ ১৩ কিলোমিটারজুড়ে সড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে স্থায়ী ট্রাক টার্মিনাল গড়ে তুলেছে এক শ্রেণির অসাধু চালকরা। দীর্ঘ এ সড়কের কোথাও বাস টার্মিনাল না থাকায় বিভিন্ন বাজার এলাকায় সড়কের উপর দাড়িয়েই রীতিমতো যাত্রী উঠা-নামা করানো হয়।এদিকে চকরিয়াসদর থেকে ফাসিয়াখালীর হাসেরদিঘী পর্যন্ত মহাসড়কের উপর বিভিন্ন প্রকারের গাড়ি দাড় করে রাখায় পথচারীসহ ছোট-বড় যান চলাচলের মারাত্বক ব্যাঘাত সৃষ্টি হলেও দেখার কেউ নেই বললেও চলে।
উপজেলার রওশনহাট, বাদামতল, জোয়ারা রাস্তারমাথা, খানহাট, গাছবাড়িয়া কলেজ গেইট, কলঘর, বাগিচাহাট, খান বটতল, বড়পাড়া, দেওয়ানহাট, দোহাজারী পৌরসভা, পার্শ্ববর্তী সাতকানিয়ার বিওসি মোড়, দোহাজারী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সামনে এবং মৌলভীর দোকান এলাকায় এ সমস্যাটি বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এসকল স্থানে স্থায়ী টার্মিনাল গড়ে তুলেছে বাস, সিএনজি, পিকআপসহ বিভিন্ন পরিবহনের চালকরা। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার দোহাজারী শঙ্খব্রিজ সংলগ্ন দোহাজারী হাইওয়ে থানা থেকে শুরু করে দোহাজারী বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের কার্যালয় পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কোন ধরনের বাঁধাহীনভাবে রাখা হয় ট্রাকগুলো। এমনকি মহাসড়কের উপরই আবার এসব ট্রাক ধোয়ামোছা করা এবং বিকল যানবাহনগুলো মেরামত করা হয়।
এদিকে দোহাজারী হাইওয়ে থানা কর্তৃক আটককৃত দুর্ঘটনা কবলিত বাস, ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহনগুলোও রাখা হয় মহাসড়কের পাশ ঘেঁষেই। বিশেষ করে দোহাজারী সড়ক বিভাগ কার্যালয়ের সামনে স্থায়ী ট্রাক টার্মিনাল গড়ে তোলা হয়েছে। এ স্থানে দিনরাত ২৪ ঘন্টাই মহাসড়কের দু’পাশ দখল করে দাঁড়িয়ে থাকে সারি সারি ট্রাক। যা এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
অথচ এ মহাসড়ক দিয়ে যাতায়ত করে দোহাজারী জামিজুরী আহমদুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়, দোহাজারী-জামিজুরী জামালুর রহমান খান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি স্কুল এন্ড কলেজ, দোহাজারী বালিকা বিদ্যালয়, জামিজুরী রজবিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা, জাফর আহমদ চৌধুরী ডিগ্রি কলেজ, আলী আহমদ প্রাণহরী উচ্চ বিদ্যালয় ও রসুলাবাদ ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার হাজার হাজার কোমলমতী শিক্ষার্থীরা। মহাসড়ক দখল করে এমনভাবে ট্রাক ও বাসগুলো রাখা হয় কোন বিকল্প পথ না থাকায় সড়কের উপর দিয়েই স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও পথচারীদের যাতায়াত করতে হয়। এ অবস্থায় একটু এদিক সেদিক হলেই ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। পাশাপাশি যানজটে পড়ে যাতায়তকৃত পর্যটকদেরও পড়তে হয় মহা বিড়ম্বনায়।
বিওসি মোড় এলাকার কয়েকজনের সাথে আলাপ করে জানা যায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের মধ্যে বিওসি মোড় এলাকায় তাদের সমিতির কার্যালয়। তাই কার্যালয়ের আশপাশে গাড়িগুলো পার্কিং করে রাখা হয়। রাতের বেলা পার্কিং করে রাখা গাড়িগুলো পাহারা দেওয়ার জন্য পাহারাদারও থাকে। প্রতিটি ট্রাক ও বাস প্রতিরাত পাহারা দেওয়ার জন্য ৪০/৫০ টাকা দেওয়া হয় বলেও জানা যায়।
এ সড়ক দিয়ে যাতায়তকারী দোহাজারী জামিজুরী আহমদুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র মো. তানভীর হাসান বলেন, এই মহাসড়ক ছাড়া স্কুলে যেতে তাদের কোন বিকল্প রাস্তা নেই। নানা বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে তাদের স্কুলে যেতে হয়। বিশেষ করে বিওসি মোড় এলাকায় গড়ে উঠা ট্রাক টার্মিনালটি তাদের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে। সড়কের উভয় পাশ ঘেঁষে ট্রাকগুলো এমনভাবে রাখা হয় সড়কের পাশ দিয়ে যাওয়ার কোন জায়গা থাকে না। তাই বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়কের উপর দিয়ে হেটে যেতে হয়। এতে ভয় হয় কখন দ্রুতগতির যান এসে চাপা দিয়ে যায়।
মহাসড়ক দখল করে ট্রাক ও বাস টার্মিনাল গড়ে তোলার ব্যাপারে দোহাজারী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজাদীকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে সাতকানিয়া-চন্দনাইশ ট্রাক শ্রমিক বহুমুখী সমবায় সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে একাধিকবার বৈঠকে বসেও কোন সমাধান পাওয়া যাচ্ছেনা। এ বিষয়টি নিয়ে গত বছর তাদের সাথে পুলিশের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষও হয়। এক কনস্টেবলকে পিঠিয়ে রক্তাক্তও করে স্থানীয় চালকরা। এখন সমিতির নতুন নেতৃবৃন্দদের সাথে পুনরায় এ বিষয়ে কথা হয়েছে। তারা বিষয়টি সমাধান করার আশ্বাস দিলেও এখনো পর্যন্ত কোন কাজ হচ্ছে না। তারা ট্রাকগুলো সড়কের উপরই দাঁড় করিয়ে রাখে। সড়কের পাশে রাখা প্রত্যেকটি ট্রাকই লোড থাকে। ফলে এগুলো টেনে আনাও সম্ভব না। ভারী গাড়ীগুলো টেনে আনার যে রেকার দরকার তা তাদের নেই বলেও জানান তিনি।
সাতকানিয়া-চন্দনাইশ ট্রাক শ্রমিক বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ওসমান জানান, এ অঞ্চলে নির্দিষ্ট কোন ট্রাক টার্মিনাল না থাকায় বাধ্য হয়ে সড়কের পাশেই ট্রাকগুলো রাখতে হয়। কিছু সময়ের জন্য সড়কের পাশে ট্রাকগুলো রাখলেও তারা সড়কে যানজট হতে দেননা। তারা চেষ্টা করছেন ট্রাকগুলো অন্য কোথাও সরিয়ে রাখার।
সাবেক দোহাজারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বেগ বলেন, সড়কে চলাচলকারী জনসাধারণের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি হয়ে উঠেছে মহাসড়ক দখল করে গড়ে উঠা ট্রাক ও বাস টার্মিনালগুলো। এই সমস্যাটি সমাধান করতে হলে দোহাজারী ও কালিয়াইশ ইউনিয়নের মধ্যখানে একটি স্থায়ী টার্মিনাল নির্মাণ ছাড়া কোন বিকল্প নেই। এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিতে হবে।

পাঠকের মতামত: