ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

মাতামুহুরী সেতুর একাধিক গার্ডারে ফাটল অতিরিক্ত ওজনের গাড়িতে ঝুঁকিপূর্ণ, সংস্কার শুরু, যান চলাচল সীমিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::   ১০ টনের অধিক ভারী যানবাহন চলাচল করার কারণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার চিরিঙ্গা মাতামুহুরী সেতুর বেশ কয়েকটি স্থানে বড় ধরনের ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সেতুটি। সেখানে লোহার বড় পাইপের ঠেস দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ক্রস বর্ডার ইমপ্রুভমেন্ট বিভাগ। এদিকে, গতকাল রাত ৮টায় সেতুটির সংস্কার কাজ শুরু করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এছাড়া এতে যান চলাচল সীমিত করা হয়েছে।
এর আগেও সেতুটির মাঝখানে দেবে গিয়ে বড় ধরনের ফাটল সৃষ্টি হয়। তখন সেতুর নিচে বালির বস্তার ঠেস দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। ওই সময় সেতুর দুদিকে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড দেওয়া হয়, ‘ঝুঁকিপূর্ণ সেতু, তাই ১০ টনের অধিক ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ’। অভিযোগ উঠেছে, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত চলমান রেললাইন প্রকল্পের কাজে ব্যবহারের জন্য মাতামুহুরী নদীর চিরিঙ্গা সেতু পয়েন্টের চর থেকে বেশ কয়েকটি এক্সকেভেটর দিয়ে অবৈধভাবে বালি তোলা হচ্ছে। বালি উত্তোলনের পর প্রায় ৩০ টন ওজনের ১০ চাকার গাড়িতে করে নেওয়া হচ্ছে নির্দিষ্ট স্থানে। এ জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠা মাতামুহুরী সেতুটি। বালিভর্তি এসব গাড়ি যখন সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করে তখন পুরো সেতুতে দুলুনি শুরু হয়। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে সেতুটি। সেতুর মাঝখানে দেবে যাওয়া অংশে সতর্কতামূলক মিনি সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। আর সেখানে দুজন শ্রমিক দুই পাশ থেকে আসা যানবাহনগুলোকে সারিবদ্ধভাবে চলতে সহায়তা করছে।
দুই শ্রমিকের একজন মিনহাজ উদ্দিন বলেন, আমাদেরকে এখানে নিয়োজিত করেছে ক্রস বর্ডার ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্প থেকে। ১০ টন বা কম ওজনের যানবাহন যখন সেতুর উপর চলে তখন কোনো সমস্যা হয় না। যখন প্রায় ৩০ টন ওজনের বালিভর্তি বা অন্য কোনো ভারী পণ্যবাহী ডাম্পার বা গাড়ি সেতুর উপর দিয়ে চলাচল করে, তখন পুরো সেতুতে কাঁপুনি শুরু হয়।
আরেক শ্রমিক মোবারক হোসেন বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে এখানে দায়িত্ব পালন করছি। এ সময় দেখেছি, তমা গ্রুপের ১০ চাকার বড় ডাম্পার গাড়িগুলোতে করে দিন-রাত শত শত গাড়ি বালি পরিবহন করা হচ্ছে। এ জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুটি। এতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের চকরিয়া উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী আবু আহসান মো. আজিজুল মোস্তফা চকরিয়া নিউজকে বলেন, এই সেতুটি বর্তমানে আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। এটি এখন ক্রস বর্ডার ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের আওতায় আছে। তাই সেতুটির ভালো-মন্দ সবকিছু দেখভাল করবেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এরপরও সেতুটির বেশ কয়েকটি স্থানে বড় ধরনের ফাটলসহ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, ছয় লেনের নতুন মাতামুহুরী সেতু নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত পুরনো সেতুর উপর দিয়েই যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হবে। এ জন্য কোনো অবস্থাতেই ১০ টনের বেশি ভারী যানবাহন চলাচল করতে না দিতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলব।
চকরিয়া উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী চকরিয়া নিউজকে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি কোনো অবস্থাতেই বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে দেওয়া উচিত হবে না। ইতোমধ্যে সেতুটির বেশ কয়েকটি স্থানে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে আমরা আতঙ্কিত। নিষেধাজ্ঞা না মেনে ৩০ টনের বেশি ওজনের ডাম্পারভর্তি করে ঝুঁকিপূর্ণ মাতামুহুরী সেতুর উপর দিয়ে বালি পরিবহনে জড়িত তমা গ্রুপের রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প ব্যবস্থাপক বিমল কুমার সাহার বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। তবে মেসেজ পাঠিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন বলে জানান।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ক্রস বর্ডার ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের ম্যানেজার নির্বাহী প্রকৌশলী সুপ্তি চাকমাকে ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
মাতামুহুরী নদীর উপর পাকিস্তান আমলে নির্মিত সেতুটি ধসে পড়ার উপক্রম হয় চার বছর আগে। সেতুর উপরে-নিচে জোড়াতালি দিয়ে ধস ঠেকানোর কাজ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে চলতে গিয়ে একাধিক দুর্ঘটনায় অনেক প্রাণহানিও ঘটেছ। এলাকাবাসী বিক্ষোভ-মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করে। রেট্রোফিটিং ডিজাইন অনুযায়ী সেতুর নিচে দুর্বল পিলারগুলো মেরামত, স্টিল পাইপ বসানো এবং সেতুর উপরের ভাঙা অংশের মেরামত করে সেখানে স্ল্যাব বসিয়ে বিদ্যমান সেতুর মতো সমান করে দেওয়া হলেও এর স্থায়ী সুফল মিলছে না।

পাঠকের মতামত: