ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

হাইকোর্টের প্রেসক্রিপশন মানছে না চিকিৎসকরা!

বিশেষ প্রতিবেদক :
২০১৭ সালের ৯ জানুয়ারি হাইকোর্ট চিকিৎসকদের নির্দেশনা দেয় প্রেসক্রিপশন ক্যাপিটাল লেটারে অথবা এমনভাবে ব্যবস্থাপত্র লিখতে হবে যাতে তা সহজেই পড়া যায়। উচ্চ আদালতের সেই নির্দেশনার পর কেটে গেছে ২ বছর ৩ মাস। কিন্তু এরপরও কক্সবাজারের সরকারী হাসপাতালে কর্মরত অধিকাংশ চিকিৎসকরা তাঁদের ব্যবস্থাপত্র লিখছে দুর্বোধ্য ভাষায়। যা পড়তে হিমশিম খায় ফার্মাসিস্টরাও । ফলে ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ কিনতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন রোগি ও তাদের অভিভাবকগন।
এ বিষয়ে গতকাল কক্সবাজার সদর হাসপাতালে হাতের কব্জিতে ব্যথা নিয়ে চিকিৎসা নিয়ে আসা সালেহা বেগম নামের এক নারী বলেন, ডা. সুমনকে আমাকে দেখে প্রেসক্রিপশন লিখে দেয়। সেই প্রেসক্রিপশন নিয়ে আমি শহরের কমপক্ষে ১০ টি ফার্মেসীতে গিয়েছে। কিন্তু কোন ফার্মেসী থেকে ওষুধ সংগ্রহ করতে পারেনি। কারণ ফার্মাসিস্টরা দুর্বোধ্য ভাষায় ব্যবস্থাপত্র লেখায় ওষুধের নাম পড়তে পারেননি । পরে আমি আবার সেই প্রেসক্রিপশন নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে অন্য আরেকজন চিকিৎসক দেখায় । তিনি আলাদা কাগজে আমাকে স্পষ্ট ভাষায় ইংরেজীর বড় হাতের হরফে ওষুধের নাম লেখে দেয়। এরপর আমি ওষুধ কিনি।
প্রায় প্রতিদিনই চিকিৎসকের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র নিয়ে সালেহার চেয়ে করুন পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে জেলার আনাচে কানাচে থেকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে রোগীর স্বজনদের।
এ বিষয়ে বাজারঘাটার উদয়ন ফার্মেসীর স্বতাধিকারী বলেন, ২০ বছরেরও অধিক সময় ধরে ফার্মেসী চালাই।  ব্যবস্থাপত্র পড়তে না পারায় এই দীর্ঘ জীবনে কত শত প্রেসক্রিপশন ফিরিয়ে দিয়েছি তার কোন ইয়াত্তা নেই। প্রেসক্রিপশনের লেখাগুলো বাংলা নাকি ইংরেজি, নাকি উর্দু ভাষায় লেখা থাকে সেটাই বুঝতে পারি না। আমার মতো অভিজ্ঞ মানুষ যদি এখনও এই সমস্যায় পড়ে তাহলে যারা নতুন ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করেছে তাদের অভিজ্ঞতা আরও করুণ। ডাক্তাদের লেখা প্রেসক্রিপশন সম্পর্কে এমনটাই জানালেন
তিনি আরও বলেন, ‘এমনও হয়েছে, রোগী প্রেসক্রিপশন নিয়ে এসেছেন কিন্তু সেখানে কি কি ওষুধের নাম লেখা সেটা বোঝা যাচ্ছে না। তখন চিকিৎসককে ফোন দিয়ে সেই ওষুধের নাম জেনে তাকে ওষুধ দিয়েছি।’
তিনি আরো বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনার পর ভেবেছিলাম হয়তবা এবার পরিস্থিতি বদলাবে। কিন্তু কয়েকজন চিকিৎসক স্পষ্ট অক্ষরে প্রেসক্রিপশন লিখলেও অধিকাংশ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র এখনো দুর্বোধ্য।
ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বিপাকে পড়ে মোস্তফা কামাল নামের এক ব্যবসায়ী জানালেন, ‘ গতকাল আমি যখন প্রেসক্রিপশন নিয়ে ফার্মেসিতে গেলাম তখন ফার্মেসিতে থাকা ওষুধ বিক্রেতা কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। পরে চিকিৎসককে ফোন করে জেনে নিতে হলো ওষুধের নাম। কিন্তু সবার পক্ষে তো আর চিকিৎসককে ফোন দিয়ে ওষুধের নাম জানা সম্ভব নয়।’
এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ( আরএমও) শাহীন মোহাম্মদ আবদুর রহমান বলেন, বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন আবদুল মতিন বলেন, দুর্বোধ্য ভাষায় প্রেসক্রিপন লেখার বিষয়ে উচ্চ আদালতে নিষেধজ্ঞা রয়েছে। তারপরও যদি কোন চিকিৎসক তেমনভাবে প্রেসক্রিপশন লিখে তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

পাঠকের মতামত: