ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

উপকূলে প্যারাবন রক্ষা ও টেকসই বেড়িবাঁধ নিশ্চিত করতে হবে -কক্সবাজারে কোস্ট ট্রাস্টের প্রাক-বাজেট

বিশেষ প্রতিবেদক ::
উপকূলে প্যারাবন রক্ষা ও টেকসই বেড়িবাঁধ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় আগামীতে উপকূল নামে কোন এলাকাই থাকবেনা।
কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ক্ষতি হ্রাসের জন্য বাজেট বৃদ্ধি আবশ্যক শীর্ষক প্রাক-বাজেট সেমিনারে বক্তারা এমন মন্তব্য করেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সকাল ১১টায় কোস্ট ট্রাস্ট পরিচালিত জলবায়ু অর্থায়ন ও বাস্তবায়নের স্বচ্ছতা অর্জন কৌশল প্রকল্পের উদ্যোগে কক্সবাজার জেলা পরিষদ কনফারেন্স হলে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক।
চকরিয়া জলবায়ু ফোরামের সভাপতি এখলাছুল কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রতিপাদ্য বিষয় উপস্থাপন করেন কোস্ট ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক মকবুল আহমেদ।
প্রধান অতিথির ভাষণে আশেক উল্লাহ রফিক এম পি বলেন, আমি কক্সবাজার জেলার অনেকগুলি দ্বীপের এমপি এবং প্রতিনিধি; আমাকে প্রতিনিয়ত দ্বীপের ও দ্বীপের মানুষের সুরক্ষার কথা ভাবতে হয়। তিনি বলেন, বর্তমানে পৃথিবীর কোনো উন্নত দেশে মাটির বেড়িবাঁধ নেই, সবাই কংক্রিটের বাঁধ দিয়ে দীর্ঘস্থায়ী বেড়িবাঁধ তৈরি করে। বাংলাদেশে সরকারকেও টেকসই বেড়িবাঁধ করার জন্য কংক্রিটের বেড়িবাঁধ তৈরির পথে যেতে হবে।
এমপি আশেক উল্লাহ বলেন, এই সরকারের আমলে কোনো এমপি, কোনো নেতার নেতৃত্বে প্যারাবন দখল হয় নি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই প্যারাবন রক্ষা করতে হবে এবং প্যারাবন বৃদ্ধি করতে হবে।
কক্সবাজার জেলা সদরে এবং বিভিন্ন উপজেলায় খাবার পানির সংকট প্রসঙ্গ উঠলে সেমিনারের প্রধান অতিথি বলেন, প্রধানমন্ত্রি দেশের সকল মানুষকে নিজ নিজ বাড়িতে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার পরিকল্পনা গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, আমাদেরকে সরকারী-বেসরকারী সকলকে নিজনিজ বাড়িতে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার প্লান করতে হবে এবং তাতে অন্তত ছয় মাস আমরা বিশুদ্ধ বৃষ্টির পানি ব্যবহার করতে পারবো। তা যদি করতে পারি তা হলে আমরা ছয় মাস আন্ডার গ্রাউন্ড পানি তোলা থেকে বিরত থাকতে পারবো।
এমপি আশেক উল্লাহ রফিক কুতুবদিয়া দ্বীপের বেড়িবাঁধ নির্মানের স্থবিরতা প্রসঙ্গে বলেন, যাদের বেড়িবাঁধ নির্মানের অভিজ্ঞতা নেই এবং পুঁজি নেই তারাই বেড়িবাঁধ নির্মানের সাব-টিকাদার হিসেবে কাজ করছেন। তাই কাজের আশানুরূপ অগ্রগতি দেখতে পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, কাজের জন্য বাজেট বৃদ্ধির প্রয়োজন আছে কিন্তু তার চাইতে বেশি প্রয়োজন বাজেটের সদ্ব্যবহার। তিনি আরো বলেন, বাজেটের সৎ ব্যবহার ব্যতীত বাজেট বৃদ্ধিতে ফল পাওয়া যাবে না।
সেমনিারের সভাপতি এখলাছুল কবির বলেন, যে সিগারেট পান করলে মৃত্যু ডেকে আনে সেই সিগারেটের তামাক চকরিয়কে ঢেকে ফেলেছে। সেই সিগারেটের চুল্লীর জন্য চকরিয়া এলাকার গাছ কেটে পাহাড় উজাড় করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার যেখানে ইটের ভাটায় লাকড়ির বদলে বিকল্প জ্বালানীর কথা বলছে সেক্ষেত্রে সিগারেটের চুলা চকরিয়ায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি পরিবেশের স্বার্থে তামাক চাষ বন্ধ করার দাবি জানান।
উপস্থাপিত প্রবন্ধে কোস্ট ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক মকবুল আহমেদ বলেন, বৃটিশ কাউন্সিলের সহায়তায় এবং কোস্ট ট্রাস্টের উদ্যোগে কক্সবাজার জেলায় ‘জলবায়ু অর্থায়ন ও বাস্তবায়নের স্বচ্ছতা অর্জন কৌশল’ নামে একটি প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে। এই প্রকল্পের উদ্যোগে টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, চকরিয়া ও টেকনাফ উপজেলা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি সমন্বয়ে চারটি জলবায়ু ফোরাম এবং জেলা জলবায়ু ফোরাম গঠন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ ছাড়াও ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে কক্সবাজার জলবায়ু ইয়ুথ ফেরাম গঠন করা হয়েছে। তারা জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে জনসমাজে সচেতনতা তৈরির কাজ করছেন। তিনি কুতুবদিয়া, চকরিয়া, কক্সবাজার সদর ও টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে প্রাপ্ত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার নানা সুপারিশ সেমিনারে তুলে ধরেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির বিপদ সম্পর্কে প্রকৃতি বিজ্ঞানীরা ব্যবখ্যা দিচ্ছেন তা সেমিনারে তুলে ধরেন।
সেমিনারে আরো গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন- কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধুরুং ইউপি চেয়ারম্যান আকম শাহরিয়ার চৌধুরী, মহেশখালী রেঞ্জ অফিসার শামসুল হক, সিপিসি টিম লিড়ার মোহাম্মদ হোসেন, সাবেক পিটিআই সুপার মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, খুরুশকুলের সাবেক চেয়ারম্যান মাস্টার আবদুর রহিম, এক্সপাউরুলের নির্বাহী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার কানন পাল, ডেইলি স্টারের স্টাফ রিপোর্টার মুহম্মদ আলী জিন্নাত, কক্সবাজার আদালতের সিনিয়র আইনজীবী রমিজ আহমদ, মহেশখালীর কালারমারছড়ার সাবেক চেয়ারম্যান কবি রুহুল কাদের বাবুল, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সহসভাপতি মমতাজ উদ্দিন বাহারী, বাংলাশে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন যুগ্মসম্পাদক জিএএম আশেকউল্লাহ, হাসান কুতুবী, কামাল উদ্দিন রহমান পেয়ারু, আহমদ গিয়াস ও মো: ইলিয়াছ মিয়া প্রমুখ।

পাঠকের মতামত: