ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

লামায় ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিব কর্তৃক সড়কের ৪ শতাধিক গাছ লুপাট

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ::   বান্দরবানের লামার সরই ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিব কর্তৃক সড়কের দু’পাশের ৪ শতাধিক গাছ কেটে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। বিগত ১ মাস যাবৎ লামা-সুয়ালক সড়কের কম্পনিয়া হতে আন্ধারী হিমছড়ি হয়ে কেয়াজুপাড়া বাজার থেকে আমতলী পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কের দু’পাশ হতে এই গাছ কাটা হয়েছে। কাটা গাছের গোড়া গুলো এখনো কালের স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে।

গাছ কাটার বিষয়ে মঙ্গলবার (০৯ এপ্রিল) সকালে সরই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার জামাল উদ্দিন মুঠোফোনে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানালে তিনি সাথে সাথে চেয়ারম্যান ফরিদ উল আলমকে গাছ কাটা বন্ধ করতে নির্দেশ দেন।

স্থানীয়রা বলেন, সরকারি অনুমতি আছে এমন কথা বলে সরই ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদ উল আলম ও সচিব মো. মূসা পরিষদের দফাদার মোবারক হোসেনকে দিয়ে সড়কের দু’পাশের ভাল ও সুন্দর গাছ গুলো কেটে বিভিন্ন ব্রিকফিল্ড ও তামাকচুল্লীতে বিক্রি করে দিয়েছে। তারা প্রায় ৪ শতাধিক একাশি, বেলজিয়াম, কড়ই, রেন্ডি কড়ি ও অর্জুন গাছ কেটেছে। এছাড়া কিছুদিন আগে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা মো. ইদ্রিস কোম্পানী কম্পনিয়া এলাকা হতে কয়েক গাড়ি এবং আব্দুল আজিজ পিতা গুরা মিয়া আমতলী হতে বেশকিছু গাছ কাটে।

সড়কের আন্ধারী হিমছড়ি এলাকায় বড় বড় দুইটি একাশি গাছ আধাকাটা অবস্থায় দেখা যায়। পার্শ্ববর্তী লোকজন জানায় গাছগুলো চেয়ারম্যান ফরিদ উল আলম গাছের ব্যবসায়ী মোস্তফা সওদাগরকে বিক্রি করেছে। এই বিষয়ে মোস্তফা সওদাগর বলেন, আমি ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে চেয়ারম্যান ফরিদ উল আলম হতে রাস্তার পাশের ৫টি গাছ ক্রয় করি। বড় দুইটি একাশি গাছ কাটা অবস্থায় ইউএনও মহোদয় নিষেধ করলে গাছ কাটা বন্ধ করি।

সরই কেয়াজুপাড়া বাজারের দক্ষিণ পার্শ্বের আসমা বেগমের চা দোকানের সামনের রাস্তা হতে প্রায় ১০/১৫টি গাছ কাটা হয়েছে। দোকানদার আসমা বেগম বলেন, সচিব মূসা লোকজন দিয়ে গাছ গুলো কেটে নিয়ে গেছে। তারা গাছ গুলো কেটে নেয়ার পরে গোড়ায় মাটি চাপা দিয়ে দেয় যাতে বুঝা না যায়।

সড়কের সালাম মেম্বার পাড়া সংলগ্ন স্থানে অসংখ্য গাছ কাটা হয়েছে। রাস্তার পাশের বাসিন্দা আবুল বশর (৫৫), বাবুল দাশ (৩০), জাহেদ (২৫) সহ অনেকে বলেন, গাছ গুলো চেয়ারম্যান ও সচিব পরিষদের দফাদার মোবারক হোসেনকে দিয়ে কাটিয়ে বিক্রি করেছে। আমতলী পাড়াস্থ জনৈক মনসুর আলম বলেন, রাস্তার দু’পাশের সাড়িবদ্ধ গাছ গুলো হতে বড় গাছ গুলো কেটে নিয়ে গেছে চেয়ারম্যান ও সচিব।

দফাদার মোবারক হোসেন বলেন, আমাকে চেয়ারম্যান ও সচিব সাহেব গাছ গুলো কাটতে বলেছে। এই বিষয়ে সরই ইউপি সচিব মো. মূসা বলেন, আমি কোন গাছ কাটিনি। ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদ উল আলম বলেন, আমাকে লামা উপজেলা প্রকৌশলী কর্মকর্তা সড়কের দু’পাশের মরা গাছ গুলো কাটতে অনুমতি দিয়েছে। তাহলে ভাল গাছ গুলো কাটলেন কেন বা সড়কের গাছ বিক্রি করলেন কেন ? এমন প্রশ্নে করলে তিনি উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।

লামা উপজেলা প্রকৌশলী নাজিম উদ্দিন বলেন, আমরা সরই ইউপি চেয়ারম্যানকে রাস্তার পাশের কয়েকটি মরা গাছ কাটার জন্য চিঠি দিয়েছিলাম। তিনি ভাল গাছ কেন কাটলেন এবং কেন বিক্রি করেছেন তা আমি জানিনা। মরা গাছ গুলো কেটে রাখতে বলা হয়েছিল। পরে তা নিলাম দেয়ার কথা।

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ জান্নাত রুমি বলেন, জানা মাত্র ফরিদ চেয়ারম্যানকে গাছ কাটা বন্ধ করতে বলেছি। এই বিষয়ে লামা উপজেলা প্রকৌশলীকে জেনে আমাকে বিস্তারিত জানাতে বলেছি।

পাঠকের মতামত: