ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

বান্দরবানে সাংগ্রাই উৎসবকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি ::

নতুন বছরকে স্বাগত ও পুরাতন বছরকে বিদায় জানাতে প্রতিবছরই বান্দরবানে মারমা সম্প্রদায় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে উদযাপন করে সাংগ্রাই উৎসব। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টির পাহাড়ি জাতিসত্ত্বার মধ্যে মারমা জনগোষ্ঠী সাংগ্রাই নামে এ উৎসবটি পালন করে। পার্বত্য জেলা বান্দরবানের মারমা সম্প্রদায় নতুন বর্ষকে বরণ করে নিতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

সাংগ্রাই উৎসব উপলক্ষে বাজারে আসা উচাচিং মার্মা জানান, বাজারে এসেছি মা বাবার জন্য নতুন পোষাক ক্রয় করবো আর নতুন বছরের নতুন নতুন জিনিস পত্র দিয়ে বাড়ী ঘর সাজাবো। সামনে বাংলা নববর্ষ আর আমাদের সাংগ্রাই। ৪ দিন আমরা বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই নতুন বছরকে স্বাগত জানাবো।

নানা আয়োজন ও অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মারমা সম্প্রদায় এই বাংলা নববর্ষ পালন করে থাকে। মারমা ভাষায় এই উৎসবকে বলা হয় সাংগ্রাই উৎসব। মুলত তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবানেই মারমা সম্প্রদায়ের জনসংখ্য বেশি। তাই বান্দরবানে মুলত এই সাংগ্রাইকে ঘিরে কয়েকদিন চলে বর্ণিল আয়োজন। সন্নিকটে সাংগ্রাই উৎসব তাই নতুন পোষাক আর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে ভিড় পড়েছে স্থানীয় বাজারগুলোতে, জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং গ্রামের আদিবাসীরা ভিড় জমিয়েছে স্থানীয় মার্কেট গুলোতে। শেষ মুহুর্তের বেচাকেনায় দারুণ খুশি ক্রেতা বিক্রেতারা।

সাংগ্রাই উৎসব উপলক্ষে বাজার করতে আসা থুইনুচিং মার্মা জানান, সামনে নতুন বছর আসছে, তাই বাজার করতে এসেছি। পরিবার পরিজনের জন্য নতুন পোশাক ক্রয় করবো আর আনন্দের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে উদযাপন করবো।

বান্দরবান জেলা শহরের ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাঙ্গালীদের পহেলা বৈশাখ আর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টির নতুন বছরকে ঘিরে এখন জমজমাট আয়োজন চলছে পাহাড়ের প্রতিটি পরিবারে। এই সময়ে সারা বছরের চেয়ে একটু বেশি বেচাঁকেনা হয়। তাই দোকানে নানান ধরনের মালামাল সংগ্রহ করে রাখা হয়।

এদিকে প্রতিছরের ন্যায় এবারো ও নতুন বছরকে বরণ আর পুরানোকে বিদায় জানিয়ে সাংগ্রাই উৎসবকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলতে বিভিন্ন কর্মসুচী হাতে নিয়েছে বান্দরবান সাংগ্রাই উদযাপন কমিটি। সাংগ্রাই উৎসবের মধ্য দিয়ে উপজাতি সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বাঙ্গালীদের অংশগ্রহনে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের পূণ্যতা ঘটবে এমন আশা আয়োজকদের।

বান্দরবানের সাংগ্রাই উদযাপন কমিটি সাধারণ সম্পাদক কো কো চিং মার্মা জানান, প্রতিবারের মত আমরা এবারো ৪দিন ব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজনের করেছি। ১৩ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বান্দরবানে সাংগ্রাই উপলক্ষে আমরা মঙ্গল শোভাযাত্রা, মৈত্রী পানি বর্ষন, ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্টানের আয়োজন করেছি। আর অনুষ্টানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশেসিং এমপি।

পার্বত্য এলাকায় এই ধরণের বর্ণাঢ্য আয়োজনে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ও নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা। প্রতিটি অনুষ্টান পাহাড়ী ও বাঙ্গালীরা যেন সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারে তার জন্য উৎসবস্থলসহ পুরো বান্দরবানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে ।

বান্দরবান সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শহীদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, বান্দরবানের পরিবেশ সবসময় শান্ত। তারপরেও আমরা নিরাপত্তার জন্য সচেষ্ট রয়েছি। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি এবং অনুষ্টানস্থলের আশে পাশে পর্যাপ্ত পরিমান সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে অনুষ্টানের নিরাপত্তায় সজাগ রয়েছি।

এবারের আয়োজন আরো জমজমাট হবে আর নতুন বছর অতীতের সকল দুঃখ কষ্টকে মুছে দিয়ে সবার জীবনে বয়ে আনবে অনাবিল সুখ শান্তি এমনটাই প্রত্যাশা সকলের। নানা আয়োজনে ১৩ এপ্রিল সকালে বান্দরবান রাজার মাঠ থেকে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হবে সাংগ্রাই উৎসবের। শোভাযাত্রা শেষে অনুষ্টিত হবে বয়োজ্যেষ্ঠ পূজা। ১৪ এপিল বিকেলে পবিত্র বৌদ্ধ মূর্তি স্লান, রাতব্যাপী পিঠা তৈরি উৎসব, ১৫ এপিল বিকেলে মৈত্রী পানি বর্ষন, ঐতিহ্যবাহী নানা খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্টান আর সবশেষে ১৬ এপিল আলোকচিত্র প্রদর্শনী, সন্ধ্যায় বিহারে বিহারে সমবেত প্রার্থনার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে মারমা সম্প্রদায়ের এই ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই উৎসবের।

পাঠকের মতামত: