ঢাকা,সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

ইটভাটায় বিনাশ সবুজ বনভূমি

বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি ::

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের সদর উপজেলায় রয়েছে প্রায় ১৫টির মতো ইটভাটা। এসব ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে পাহাড়ের সংরক্ষিত বনের লাখ লাখ টন গাছ।

যেখানে পরিবেশ অধিদফতরের তথ্যমতে, পুরো বান্দরবানে বৈধ ইটভাটা আছে একটি। আর পুরো বান্দরবান ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় ৫৫টি ইটভাটায় পুড়ছে পাহাড়ি বনের গাছ। ইট তৈরির কাঁচামাল হিসেবে মাটির জন্য কাটা হচ্ছে পাহাড় আর কৃষি জমি।

বান্দরবান সদর, লামা, আলী কদম, থানচি, ও নাইক্ষংছড়ি ঘুরে দেখা যায়, দুর্গম এলাকায় পাহাড়ি বন ও জনপদের মধ্যেই রয়েছে এসব অবৈধ ইটভাটা। কোনো কোনো ইটভাটা রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খুব কাছে।

ইট উৎপাদনের সিজন সাধারণত অক্টোবরের শেষ থেকে শুরু হয়। আর এ সময় উজাড় হতে থাকে পাহাড়ি বন।

শিবাতলী পাড়ার কৃষক চবা থুই চাকমা জানান, বংশ পরম্পরায় তারা এখানে বসবাস করেন। পাহাড়িদের কাছে বনের গাছ খুবই প্রিয় সম্পদ। এক সময় পূর্ব পুরুষরা এই গাছের ওপরই তাদের জীবিকা নির্বাহ করত। শতবর্ষী গাছকে তারা দেবতার মূল্য দিত। খুব প্রয়োজন না হলে তারা গাছ কাটত না। এখন তাদের সেই শতবর্ষী গাছ লুট করে নিয়ে গেছে চোরা কারবারীরা। পাহাড়ের কৃষকরা পাহাড়ি নদী বা ঝিরিতে ভেসে আসা বনের কাঠ, নিজেদের বাগানের গাছের ডালপালা আর বাজারের কাঠের ওপর নির্ভরশীল।

বনবিভাগের তথ্য মতে, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততায় তারা গড়ে তুলেছেন সংরক্ষিত বনাঞ্চল। আর ইটভাটার আগ্রাসনে এসব সংরক্ষিত বনাঞ্চল এখন উজাড়ের পথে। বনভূমি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় পাহাড়িদের মধ্যে আতংক থাকলেও প্রভাবশালী মহলের উদ্যোগেই ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে বনের গাছ। সবুজ সমৃদ্ধ পাহাড়ি বন ধ্বংসের ফলে অনেক বন্যপ্রাণীও এখন বিলুপ্ত প্রায়। যারা বনের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে তাদের জীবিকাও হুমকির মুখে।

ইটভাটার মাটির জন্যও কাটা হচ্ছে পাহাড়ের মাটি। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে পাহাড় আর কৃষি জমি। স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে হেনস্তার শিকার হন বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বান্দরবান কলেজের একজন শিক্ষক।

তিনি আরও বলেন, ‘হাজার বছর ধরে দেশের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের এসব জনপদে যে সব মানুষ বসবাস করেন তারা জানেন পাহাড়ের ধর্ম কী? তারা গাছকে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন। এই গাছই তাদের জীবিকার অন্যতম ভরসা। বনভূমি সৃষ্টিতে তাদের অনেক অবদান। তাদের যত্নে গড়া বন কেটে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালীরা। প্রতিবাদ করতে গেলে অনেক সমস্যা।’

পাহাড়ি জনপদের জ্বালানীর প্রধান উৎস কাঠ। এসব কাঠ মূলত গাছের ডালপালা। তাই পাহাড়ের বড় বড় গাছের ডালপালা ও মরে শুকিয়ে যাওয়া কাঠই এখানকার মানুষের জ্বালানির চাহিদা মেটায়। এজন্য পাহাড়ি জনগোষ্ঠি নিজেরা বনায়নের সঙ্গে যুক্ত।

অপরদিকে ইটভাটায় দেদারছে কাঠ পোড়ানোর জন্য উজাড় করা হচ্ছে পাহাড়ের সমৃদ্ধ বনভূমি। সচেতন মহলের দাবি, এখনই এর প্রতিকার করা না গেলে পুরো বনভূমি বিরান হওয়ার পাশাপাশি ভূমি ধ্বংসের মাধ্যমে পাহাড়ও ধ্বংস হয়ে যাবে। যা বয়ে আনবে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

পাঠকের মতামত: