ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

আলীকদমে উপজেলা চেয়ারম্যান কালামকে নিয়ে তুলকালাম কান্ড…

নিজস্ব প্রতিবেদক, আলীকদম ::

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা পরিষদের পুণঃনির্বাচিত চেয়ারম্যান আবুল কালামকে দেয়া সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানের কিছু আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে আপলোড করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই উপজেলায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এ অবস্থায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা সদরে সোমবার ২৫ মার্চ সকাল থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

গত ২৩ মার্চ উপজেলার নয়াপাড়া ইউনিয়নের মিরিংচর গ্রামে এই সম্বর্ধনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে তার নির্বাচনী কর্মী এবং এলাকাবাসী তাকে ফুল দিয়ে সম্বর্ধিত করে। কিন্তু ওই সম্বর্ধনার পরদিন ২৪ মার্চ আবুল কালাম তার ফেসবুক টাইম লাইনে বেশ কিছু ছবি আপলোড করেন। এতে ওই নারীর সাথে তার আপত্তিকর অবস্থার বেশ কিছু ছবিও রয়েছে। এর পরপরই বিষয়টি প্রথমে ফেসবুকে ভাইরাল হয়। পরে তা বেশ কয়েকটি মুলধারার সংবাদ মাধ্যমেও ঝড় তুলে।

এ ঘটনায় একজন ম্রো নারীকে ঝাপটে ধরে ছবি তোলা ও ফেসবুকে অশ্লীল ছবি আপলোড করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আলীকদম উপজেলা সদরে মানববন্ধন করেছে ম্রো স্টুডেন্ট কাউন্সিল। অন্যদিকে আলোচিত নারী সোমবার দুপুরে আলীকদম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তাকে নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালামের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে- তা নাকচ করে দিয়ে বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ আবুল কালামের সাথে তাদের পারিবারিক গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আবুল কালামকে তিনি বড় ভাইয়ের মত সম্মান করেন। আবুল কালামও তাকে ছোট বোনের মত স্নেহ করেন।

ম্রো নারী দাবি করেন সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে আবুল কালাম তার সাথে কোন অশ্লীল আচরন করেননি।

এদিকে আলোচিত নারীর ভাই এবং আত্মসমর্পন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা অধুনা বিলুপ্ত ম্রো ন্যাশনালিস্ট পার্টির (এমএনপি) কমান্ডার মেনরুন ম্রো সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আলীকদমে পাহাড়ি-বাঙালি নিজেদের মধ্যে সুসম্পর্ক রেখে জীবন যাপন করে আসছেন। এটি যাদের সহ্য হচ্ছে না, তারা সাম্প্রদায়িক উস্কানি সৃষ্টি করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করতে চাইছে।

এ ব্যাপারে আবুল কালাম সংবাদ মাধ্যমকে জানান, সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে তাকে গলায় মালা পরিয়ে দিতে এসে ওই নারী আবেগের বশে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় তিনি তাকে ধরে ফেলে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করেন। কিন্তু আবুল কালামের আপলোড করা ছবিগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি ছবিতে দেখা যায়- তিনি ওই নারীকে ঘনিষ্ঠভাবে আকড়ে ধরেছেন। পাশে বসিয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন, পাশাপাশি বসে ভাত খেয়েছেন এবং তার সাথে খুনসুঁটি করছেন।

আবুল কালাম জানান, গত ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে শত বাধা মোকাবেলা করে বিজয় লাভের পর স্থানীয় জনগণ এবং তার কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। নির্বাচনের পরে নয়াপাড়া ইউনিয়নের মিরির চর গ্রামে পৌঁছুলে পাহাড়ি-বাঙালি ও বিভিন্ন ক্ষদ্র নৃ-গোষ্ঠির জনগণ নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নির্বিশেষে তাকে সবাই জড়ি ধরে গলায় মালা পরিয়ে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, বেশ কয়েকজন বৃদ্ধা তাকে জড়িয়ে ধরে আদর করেছেন। কেউ কেউ তার গালে ও কপালে চুমুও খেয়েছেন।

তিনি দাবি করেন, তার বিজয়ে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল তার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। তারা একটি সাধারণ ঘটনার উপর রঙচং চড়িয়ে শান্ত পানি ঘোলা করার অপচেষ্টা করছে।

এদিকে স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, এর আগের মেয়াদে তিনি চেয়ারম্যান পদে থাকাকালে তার অধীনস্থ নারী ভাইস চেয়ারম্যান শিরিন আকতার তার বিরুদ্ধে অশ্লীলতার অভিযোগ এনে বান্দরবান জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ২০১০ সালে একটি মামলা দায়ের করেন। এবারের ঘটনার পর সেই অভিযোগ এখন সত্যে রূপ নিতে যাচ্ছে।

আবুল কালাম গত দু’মেয়াদে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে আলীকদম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বিজয় লাভ করেন। এবার বিএনপি নির্বাচন বয়কট করলে আবুল কালাম দলীয় শৃঙ্খলা ও নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচনে প্রার্থী হন। নানা প্রতিকুল অবস্থা স্বত্ত্বেও নির্বাচনে তিনি বিজয়ের হ্যাট্টিক রেকর্ড করেন।

এলাকার প্রবীণরা বলেছেন, আলীকদমে আবুল কালামের ব্যাপক জনসমর্থন আছে-এটি সত্যি। কিন্তু সে তুলনায় তার দুর্নামের পরিমাণও কম নয়।

পাঠকের মতামত: