ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

লামায় তামাক চুল্লিতে অবাধে পুড়ানো হচ্ছে হাজার হাজার মন কাঠ, বনাঞ্চলে উজাড়

আবুল কালাম আজাদ, লামা ঃ
চলতি মৌসুমে বান্দরবানের লামা উপজেলায় বিভিন্ন এলাকার তামাক চুল্লি গুলোতে হাজার হাজার মণ জ্বালানি হিসাবে মূল্যবান বনজ সম্পদ কাঠ  পুড়ানো হচ্ছে। চলতি মৌসুমে তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণে এই সব তামাক চুল্লি গুলোতে পুড়বে প্রায় ২.৮৫ মে.টন জ্বালানি কাঠ। যার স্থানীয় বাজার মূল্য ৩ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। তামাক চুল্লি গুলোতে বিপুল পরিমাণ এ জ্বালানি কাঠ পোড়ানোর ফলে শ্রেণী ও অশ্রেণীভূক্ত সামাজিক ব্যক্তিমালিকানাধীন ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলসমূহে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে লামা উপজেলার সরই, ফাঁসিয়াখালী, ফাইতং, লাইনঝিরি, লামা সদর, সাবেক বমু বিলছড়ি এলাকায় তামাক কোম্পানী গুলোর তত্ত্বাবধানে প্রায় ৫/৬ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছে। এই সকল তামাক প্রক্রিয়া জাতকরণের কাজে ইতিমধ্যে নির্মিত করা হয়েছে হাজার হাজার টনডুল। তামাক কোম্পানীগুলো তামাক চাষের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চাষীদেরকে বীজ, সার, প্রয়োজনীয় অর্থ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। কিন্তু কিছু আনুসাংগিক সহযোগিতা করলে ও তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য তামাক চুল্লির জ্বালানি সরবরাহ করে না। যার ফলে চাষীদেরকে উপজেলা বিভিন্ন বনাঞ্চল থেকে জ্বালানী সংগ্রহের জন্য সম্পদ ধ্বংসের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে হচ্ছে।
লামা পৌরসভার কয়েকজন চাষী জানান, তামাক পাতার গ্রেড অনুযায়ী দাম ঠিক হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে ঠিকমত তামাকের শোধনের বিষয়টি গুরুত্ব পায়।
তামাক শোধন বা পোড়ানের জন্য কৃষকের বাড়ির আঙিনায় তৈরি করা হয় তামাক চুল্লি। তন্দুর নির্মাণে তামাক কোম্পানীগুলো চাষীদেরকে অগ্রিম টাকা প্রদান করে। একটি বেসরকারি সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি তন্দুরে প্রতি মৌসুমে ২ একর জমির তামাক পাতা শোধন করতে ৮ লোড তামাক পোড়াতে হয়। প্রতি লোডে তামাক পোড়ানোর জন্য গড়ে প্রায় ৩৫ মণ জ্বালানি কাঠের প্রয়োজন হয়। সে হিসেবে লামায় বিভিন্ন এলাকার প্রায় ০৫ হাজার একর জমির তামাক পোড়ানো বা শোধন করতে তামাক তন্দুরগুলোতে চলতি মৌসুমে ২৮৫ মে.টন জ্বালানি কাঠ পোড়াতে হবে। স্থানীয় বাজারে ১৩০ টাকা হিসেবে যার বাজার মূল্য ৩ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। এলাকার কৃষকরা জানিয়েছেন, পাতার গ্রেড ঠিক রাখার জন্য তাপমাত্রা ঠিক রাখতে হয়। এখানে জ্বালানি খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত জ্বালানি হিসেবে বনজ প্রজাতির গাছই বেশি ব্যবহৃত হয়।

এদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানিয়েছেন, তামাক চুল্লি­গুলোতে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ জ্বালানী কাঠ পোড়ানোর ফলে এলাকার বনাঞ্চলগুলো ক্রমশ বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়েছে। তামাক চুল্লি­তে ব্যবহারের জন্য বাগানের অপরিপক্ষ গাছ এবং কৃষকের বাড়ির আঙিনার দেশীয় বিভিন্ন ফলজ গাছও কেটে তামাক চুল্লিতে পোড়াতে হচ্ছে। জানা গেছে, তামাকের বীজ তলা তৈরির পূর্বে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের কাজ শুরু করে থাকে কৃষকেরা। কোম্পানীগুলো এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে কৃষকদেরকে অগ্রিম ঋণ দিয়ে থাকে। তামাক মৌসুমকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে উঠা জ্বালানি কাঠ ব্যবসায়ীদের সাথে পুলিশ বন বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যোগ সাজোশ ও একটি মৌখিক চুক্তি গড়ে উঠে। সে অনুযায়ী কাঠ ব্যবসায়ীরা তামাক চাষীদের থেকে অগ্রিম টাকা গ্রহণ করে নেমে পড়ে স্থানীয় বনাঞ্চলসমুহ উজাড় করে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের মহোৎসবে। এ ব্যাপারে লামা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ কামাল উদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, বন বিভাগের রিজার্ভ এলাকা থেকে কোন ধরনের কাঠ সংগ্রহ করার সুযোগ নাই। সেক্ষেত্রে বনবিভাগ সজাগ রয়েছে।

পাঠকের মতামত: