ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ক্ষতিকর তামাকের মাঝে আখের মিষ্টি হাসি

বান্দরবানে লামা ও আলীকদমে এ বছর ক্ষতিকর তামাক চাষের পাশাপাশি আখ চাষও করেছেন অনেক কৃষক।

নিজস্ব প্রতিবেদক, (বান্দরবান)  লামা ::

বান্দরবানের লামা ও আলীকদমে চলতি মৌসুমে ক্ষতিকর তামাক চাষের মাঝে আখের চাষও করেছেন কৃষকেরা। প্রয়োজনীয় সহায়তা ও বাজারজাতকরণের নিশ্চয়তা পেলে তামাক চাষের বিকল্প হিসেবে আখ চাষের মাধ্যমে লাভবান হতে পারবেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

প্রায় তিন যুগ ধরে চলতি মৌসুম এলেই লামা, আলীকদম ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবাদি জমিতে ক্ষতিকর তামাক চাষ হয়ে আসছে। তামাক কম্পানিগুলো উৎপাদিত তামাকের বাজারজাতকরণের শতভাগ নিশ্চয়তা প্রদান করে এবং বীজ, সার, কীটনাশক ও নগদ মূলধন সাহায্যের মাধ্যমে কৃষকদেরকে ক্ষতিকর তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করে আসছে। তামাক চাষে লাভ বেশি হলেও শারীরিক ক্ষতি, পরিশ্রম এবং মূলধন বেশি লাগার কারণে অনেক কৃষক সাম্প্রতিকালে ক্ষতিকর তামাক চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তাঁরা বিকল্প চাষাবাদের চেষ্টা করছেন। যেসব কৃষক ক্ষতিকর তামাক চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, তাঁদের অনেকে এখন আখসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।

কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইক্ষু গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় লামা ও আলীকদমে বিএসআরআই-৪২ রংবিলাস, চায়না-২৮, অমৃত-৮৪১, সিও-২০৮ ও বিএমসি-৮৬-৫৫০ জাতের আখ চাষ করেছেন কৃষকেরা। অনেক চাষি এ প্রকল্পের বাইরে ব্যক্তিগত উদ্যোগেও আখ চাষ করেছেন। কৃষকরা আখ ক্ষেতে সাথি ফসল হিসেবে আলু, গাজর ও ফরাশশিম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। আখ ক্ষেতে সাথি ফসল হিসেবে বাঁধাকপি, ফুলকপিসহ আরো কয়েকটি কৃষি ফসল চাষে লামা কৃষি বিভাগ প্রযুক্তি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট বান্দরবানের বৈজ্ঞানিক সহকারী বসন্ত তঞ্চঙ্গ্যা জানান, লামা ও আলীকদমে চাষিরা দিন দিন আখ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। চলতি মৌসুমে উপজেলার শিলেরতুয়া, দরদরী ইব্রাহিম লিডার পাড়া, সাবেক বিলছড়ি, হাফেজপাড়া, হরিণঝিরি, বগারঝিরি, মানিকজন ত্রিপুরাপাড়া, মধুঝিরি, লামামুখ ও আলীকদমের সিরাজ কারবারিপাড়া, আনোয়ার হোসেন পাড়া, ছাবের মেম্বারপাড়া এলাকায় প্রতিচাষি ৩৩ শতক জমিতে প্রদর্শনীর মাধ্যমে আখ চাষ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা চাষিদের বীজ, সার ও কীটনাশক ওষুধ দিয়ে সহায়তা করি। আগামীতে চাষ আরো বাড়ানো হবে। আখ চাষের শুরু থেকে ফলন উঠতে ৯ থেকে ১০ মাস সময় লাগে। আখের পাশাপাশি আমরা কৃষকদের সাথি ফসল হিসেবে মূলা, ফরাশশিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও গোল আলু করার পরামর্শ দিয়ে থাকি।’

লামা পৌরসভার হরিণঝিরি এলাকার কৃষক মো. আব্দুল হানিফ বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় আখ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আখের ভালো ফলন হয়েছে। ৮০ হাজার টাকা ব্যয় করে প্রায় লাখ টাকা লাভবান হয়েছি।’

সাবেক বিলছড়ি এলাকার কৃষক কাজী নজরুল ইসলাম জানান, তিনি ২০ শতক জমিতে আখ চাষ করেছেন। সাথি ফসল হিসেবে তিনি মরিচ, রঙিলা শিম ও সরিষাসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করে লাভবান হয়েছেন। তিনি নিজেই মিঠাই উৎপাদন করেন। মিঠাই দিয়ে নিজের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারেও বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘বাজারজাতকরণের নিশ্চয়তা পেলে এবং মিঠাই উৎপাদন করার সার্বিক সহায়তা পেলে আখ চাষের মাধ্যমে কৃষকেরা লাভবান হতে পারবেন। পর্যায়ক্রমে তাঁরা ক্ষতিকর তামাক চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন।’

লামা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সানজিদা বিনতে সালাম বলেন, ‘আখ চাষিদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হয়ে থাকে।’

প্রয়োজনীয় সহায়তা এবং বাজারজাতকরণের নিশ্চয়তা পেলে ক্ষতিকর তামাক থেকে মুখ ফিরিয়ে আখ চাষের মাধ্যমে লামা ও আলীকদমের শত শত কৃষক লাভবান হতে পারবেন বলে মনে করেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।

পাঠকের মতামত: