ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

উখিয়ায় অবৈধভাবে পাহাড় কাঁটার সময় মাটি চাপায় এক শিশু শ্রমিক নিহত

ফারুক আহমদ, উখিয়া ॥ 

উখিয়ার হলদিয়াপালং বনবিভাগের পাহড়ের মাটি অবৈধভাবে কাটার সময় মাটি চাপা পড়ে মোহাম্মদ কালু (১৩) নামক এক শিশু শ্রমিক ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছে। তার লাশ উদ্ধার করা হলেও মাটি চাপা পড়ে এখনো নিখোঁজ রয়েছে ২ জন শ্রমিক। নিহত শিশু শ্রমিক হলদিয়াপালং ইউনিয়নের দক্ষিণ মৌলভী পাড়া গ্রামের মৃত মখলেছুরজ্জামান প্রকাশ মখলুর পুত্র বলে জানা গেছে। স্থানীয় মেম্বার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আবুল খায়ের জানান, এ ব্যাপারে হত্যা ও পরিবেশ আইনে মামলা দায়ের করা হবে।

এদিকে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম ঘটনাস্থলে (রাত ৯ টা) পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে বলে উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারী) সন্ধ্যায়।

অভিযোগে প্রকাশ হলদিয়াপালং ইউনিয়নের দক্ষিণ মৌলভী পাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিমের পুত্র বাহাদুর মিয়া, বেদার ও ফিরোজের নেতৃত্বে একটি মাটি খেকো সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে সরকারী পি.এফ পাহাড়ের মাটি অবৈধ ভাবে কর্তন করে ডাম্পার যোগে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে আসছিল।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিন ডাম্পার নিয়ে একদল শ্রমিক সরকারি পাহাড় কেঁটে মাটি পরিবহন করে আসছিল। শনিবার প্রতিদিনের ন্যায় ডাম্পার নিয়ে শ্রমিকরা এসে মাটি কেঁটে ডাম্পারের ভর্তি করার সময় মাটিতে চাপা পড়ে কয়েকজন শ্রমিক। তৎ মধ্যে জনগণ মোহাম্মদ কালু শিশু শ্রমিককে উদ্ধার করে কোর্টবাজার একটি ক্লিনিকে আনা হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রত্যেক্ষদর্শীরা আরও জানান, এখনো মাটি চাপা পড়ে অনেকেই নিখোঁজ রয়েছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। এছাড়াও পুলিশ নিহতের বাড়ীতে গিয়ে লাশ উদ্ধার করেছে।

এদিকে মাটি চাপা পড়ে হতাহতের ঘটনায় জড়িতরা গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। ঘটনাস্থল থেকে মাটি পরিবহনে ব্যবহৃত ডাম্পার পুলিশ জদ্ধ করেছে। অভিযোগে প্রকাশ মাটি খেকো সিন্ডিকেট বাহাদুর, বেদার ও ফিরোজের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ পাচারকারীরা হলদিয়াপালং বনবিট কর্মকর্তা মহিউদ্দিনকে টাকার বিনিময় ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি পাহাড় অবৈধ ভাবে কর্তন করে মাটি ডাম্পার যোগে পাশর্^বর্তী এমবিএম ব্রিক ফিল্ড সহ বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে আসছে। দিন দুপুরে প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে ডাম্পার যোগে মাটি সরবরাহ করলেও বিট কর্মকর্তা মহি উদ্দিন রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছে।

খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, হলদিয়াপালং বনবিট এলাকায় সাবেক রুমখাঁ ক্লাশ পাড়া নামক স্থানে পাহাড় কাঁটার সময় গেল বছর বদিউল আলমের ছেলে ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছিল।

####

উখিয়ার সোনার পাড়ায় মালয়েশিয়াগামী ২০ রোহিঙ্গা উদ্ধার, মানবপাচারের গডফাদার আটক

ফারুক আহমদ, উখিয়া ॥ 

সাগরপথে অবৈধভাবে ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য আবারো তৎপর হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গারা। মুঠোফোনে যোগাযোগ, নির্ধারিত বিকাশে টাকা পরিশোধের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট দালালের হেফাজতে ইতিমধ্যে বেশ কিছু রোহিঙ্গা পাচার হয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার আরো একটি ফিশিংবোটে প্রায় শতাধিক অবৈধ মালয়েশিয়াগামী পাড়ি জমাতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এমন খবরের ভিত্তিতে উখিয়া থানা পুলিশের একটি দল উখিয়ার উপকূলীয় এলাকার মানব পাচারের নিরাপদ রোড ডেইলপাড়া গ্রামের মৃত আজিজুল হকের ছেলে আব্দুল কাদেরের বাড়িতে অভিযান চালায়। সেখানে নারী, পুরুষ, শিশুসহ ২০জন মালয়েশিয়া গমনেচ্ছুক রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করে।

এদিকে শনিবার (২ফেব্রুয়ারী) সকালে ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোনার পাড়া বাজারে অভিযান চালিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত মানবপাচারের গডফাদার আব্দুল কাদেরকে গ্রেফতার করে। তিনি ডেইল পাড়া গ্রামের মৃত আজিজুল হকের ছেলে বলে জানা গেছে।

পুলিশ জানায়, মানবপাচারে গডফাদার ও বিভিন্ন মামলার আসামী আব্দুল কাদেরকে গ্রেফতার করে পুলিশ ভ্যানে তোলার সময় হাত কড়া অবস্থায় তিনি পালিয়ে যায়। পরে পুলিশের একটি দল তাকে ধাওয়া করে পাহাড়ের আস্তানায় আত্বগোপন অবস্থায় আব্দুল কাদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

আটককৃতরা হচ্ছে, বালুখালী ক্যাম্পের হামিদা বেগম (২০), তার মেয়ে শউকত আরা (৫), থাইংখালী ক্যাম্পের জুবাইদা (২৫) তার মেয়ে রেনেছা (৫), একই ক্যাম্পের হামিদা বেগম (২০), কুতুপালং ক্যাম্পের তাহমিনা বেগম (১৮), বালুখালী ক্যাম্পের শারমিন আকতার (১৬), কুতুপালং ক্যাম্পের ইয়াছমিন আকতার (১৮), তাজনিমারখোলা ক্যাম্পের মোঃ আমিন (২০), বালুখালী ক্যাম্পের ফয়েজুল ইসলাম (১৫), তাজনিমারখোলা ক্যাম্পের নুর কামাল (২৪), বালুখালী ক্যাম্পের মোঃ ইউনুছ (১৯), তাজনিমারখোলা ক্যাম্পের শফি আলম (২৫), বালুখালী ক্যাম্পের হেদায়েত উল্লাহ (১৫), কুতুপালং ক্যাম্পের ছলিমুল্লাহ (১৯), ইমাম হোসেন (২০), জাহিদ উল্লাহ (২৮), ছানা উল্লাহ (২০), লম্বাশিয়া ক্যাম্পের মোঃ আমিন (২০) ও বান্দরবান লামা দোলহাজারা গ্রামের আব্দুর রহিম (২০)।

আটককৃত কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‌’২০১২ সালের দিকে তাদের নিকট আত্মীয়রা সাগরপথে মালয়েশিয়া চলে গেছে। বর্তমানে তারা সেখানে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি কাজে নিয়োজিত। বাসাভাড়া নিয়ে তারা সুখে জীবন যাপন করছে। তারা মুঠোফোনে বারবার তাগিদ দেওয়ার কারণে বিকাশে টাকার লেনদেন করে ডেইলপাড়া গ্রামের লেং শামশুর ছেলে দালাল শাহজান, হিজোলীয়া গ্রামের জলু আহম্মদের ছেলে নুরুল্লার মাধ্যমে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য আব্দুল কাদেরের বাড়িতে ৪/৫ দিন ধরে অবস্থান করছে।’

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়ের জানান, ‌এ ঘটনায় শাহজান ও নুরুল উল্লাহ ৮ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করে উখিয়া থানায় মানবপাচার আইনে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। যার নং-৯, তারিখঃ ৮/২/২০১৯।’

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে সীমান্তের নাফনদী পার হয়ে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা কুতুপালং বনভূমির জায়গায় ঝুপড়ি বেধে আশ্রয় নেয়। এ সময় জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন পুলিশ বিজিবি ও বনকর্মীরা শত চেষ্টা করেও এসব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে পারেনি। এমতাবস্থায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক ফজলুল বারী অনুপ্রবেশকারী এসব রোহিঙ্গাদের কোন প্রকার সহায়তা প্রদান না করার জন্য সকল এনজিও প্রতিষ্টানকে নির্দেশ দেন।

এসব রোহিঙ্গা বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে উখিয়ার উপকুলীয় এলাকার সোনাইছড়ি বাদামতলীর, ঘাটঘর, রেজু মোহনা, ঘোয়ালিয়া, ছেপটখালী, মনখালীসহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে ফিশিংবোটে করে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় অনিশ্চিত যাত্রা শুরু করে। জালিয়াপালং ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক দালাল চক্র এসব রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়া পাড়ি জমাতে সহযোগিতা করে। যার ফলে মানব পাচারের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে।

২০১৪ সালে রোহিঙ্গা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সোনার হরিণ ধরার আশায় মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপকূলে ভিড় জমাতে শুরু করে। উখিয়া উপজেলা মানব পাচার প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ মানব পাচার প্রতিরোধে উপকূলীয় এলাকায় ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। তারা মানব পাচার প্রতিরোধে বাধা দিলে তৎকালীন মানব পাচারের অন্যতম হোতা সোনারপাড়া গ্রামের নুরুল কবিরের স্ত্রী রেবী ম্যাডাম তার স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে দিয়ে আব্দুল হামিদের বিরুদ্ধে একটি নারী নির্যাতন মামলা দায়ের করেন।

এ ঘটনা নিয়ে মানব পাচার প্রতিরোধে মানব বন্ধন, সভা সমাবেশ ও আইনশৃংলাবাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানের ভিত্তিতে মানব পাচার বন্ধ হয়ে যায়।

পাঠকের মতামত: