ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

শহরের কোচিং সেন্টার বন্ধে অভিযান জোরদার

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::
দীর্ঘ ৫ বছর পর কোচিং বানিজ্যে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন। নতুন শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ি পরিচালিত অভিযানে ১০ কোচিং সেন্টার বন্ধ করেছে জেলা প্রশাসন। শহরের ঝাউতলা গাড়ির মাঠ এলাকায় পরিচালিত অভিযানের খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে শহরের বিভিন্ন স্থানের কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দিয়ে পালিয়ে যান অনেক শিক্ষক। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ৬ ডিসেম্বর তৎকালীন শিক্ষা শাখার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সেলিনা কাজী শহরের বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে অভিযান চালিয়ে ৪ শিক্ষককে আটক করেন এবং বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করেন। মুচলেকা দিয়ে ওই ৪ শিক্ষককে সে সময় রাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
গতকাল সোমবার বিকেলে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সেলিম শেখ এ অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় শহরের কয়েকটি কোচিং সেন্টারে তালা ঝুলিয়ে দেন তিনি। তবে শহরের কোচিং সেন্টারের জন্য পরিচিত গোলদীঘির পাড়, মোহাজের পাড়া, ঘোনারপাড়া, বৌদ্ধ মন্দির সড়ক এলাকায় অভিযান চালালে অন্তত ২০টির মত কোচিং সেন্টার বন্ধ করা যেত বলে মনে করেন ভুক্তভোগিরা। নতুন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপুমনি ২৭ জানুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সকল কোচিং সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দেন। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষক সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কোচিং বানিজ্য চালিয়ে আসার খবরে প্রশাসন এ অভিযান পরিচালনা করেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন- এটি চলমান প্রক্রিয়া। কোচিং বানিজ্যকারি শিক্ষকদের চিহ্নিত করে অভিযান চলবে। যারা মানবেনা তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন এ্যাকশনে যাবে। তিনি কোচিং বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষকদের ক্লাসে মনোযোগি হওয়ার আহবান জানান।
এদিকে প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় শহরের অলিগলিতে কোচিং  বানিজ্য বহুগুণে বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে কোচিং বাণিজ্য নিয়ে যে চিত্র পাওয়া গেছে তা বর্ণানাতীত । সবচেয়ে বেশি কোচিং বাণিজ্যে লিপ্ত দুই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৮ জন । কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৪ জন, কক্সবাজার হলি চাইল্ড স্কুলের ৩ জন, বায়তুশ শরফের ৮ জন, কক্সবাজার মডেল স্কুলের ৬ জন, পৌর প্রিপ্যারাটরি  উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫ জন, সাহিত্যিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২ জন শিক্ষক বছর জুড়ে কোচিং বাণিজ্য করে আসছেন হরদম।
আলোচিত কোচিং বাণিজ্যকারি শিক্ষকগণ হলেন-কক্সবাজার সরকারি বালিকার শিক্ষকগণ যথাক্রমে আনসারুল হক চৌধুরী, উম্মে জাহেদা সুলতানা, আবদুর রহিম, আবু সুফিয়ান, আবু জুবাইর। সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের  জাকারিয়া মোঃ ইয়াহিয়া হাসান ও রফিকুল ইসলাম চৌধুরী তারা যৌথভাবে গোলদিঘির পাড়ের বাসায় পড়াচ্ছেন। শহরের ঘোনার  পাড়ায় বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সুমন দত্ত ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নারায়ন প্রসাদ দেব যৌথ ভাবে পড়াচ্ছেন। এছাড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল আমিন, জালাল উদ্দিন , সুরেশ বড়–য়া ৩ জনে মোহাজের পাড়ায় প্রশাসনের দৃষ্টি এড়িয়ে কোচিং বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।
শহরের রয়েল বোর্ডিং সংলগ্ন হুদা ম্যানশনে ২ জনে চালাচ্ছেন ভর্তি কোচিং বানিজ্য। এরা হলেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের রিয়াজুদ্দীন ফারুক এবং আবু জোবাইর। এ ছাড়া সুমন তালুকদার, সুমন দত্তসহ অনেকে কৌশলে কয়েক বছর যাবৎ কোচিং বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে বীরদর্পে। এছাড়া হলি চাইল্ড স্কুলের ইকবাল হোছাইন পড়াচ্ছেন যেন ডে কেয়ার স্কুল।
অপরদিকে শহরের আলোচিত কোচিং বানিজ্যকারি সাহিত্যিকা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জালাল উদ্দিন বছর জুড়ে কোচিং নিয়ে বেশ আলোচিত হলে ও ভর্তি কোচিং করাচ্ছেন ২শ জনকে জানিয়েছেন কতিপয় অভিভাবক।

পাঠকের মতামত: