ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

নাব্যতা হারাচ্ছে উখিয়ার ১৩ খাল

নিউজ ডেস্ক ::
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রায় ১৩টি খাল-নদী, ছড়া, জলাশয় শুকিয়ে গেছে। নির্বিচারে বালি উত্তোলন ও পাহাড় কাটা মাটিতে এসব খালগুলো মারাত্মকভাবে নাব্যতা হারানোর ফলে বোরোসহ অর্থকরী ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। চলতি বোরো উৎপাদন নিয়ে কৃষকদের মাঝে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে প্রায় ৬ হাজার ৪শ’ হেক্টর জমিতে বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাছাড়া ৪শ হেক্টর বেগুন, ৩শ হেক্টর মরিচ, ঢেঁড়শ, শিম, ফলুকপি, বাধাঁকপিসহ অন্যান্য অর্থকরী ফসল উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২শ’ হেক্টর জমিতে। কৃষকদের অভিযোগ-খাল, নদী, ছড়া থেকে উত্তোলিত পানি দিয়ে এসব শাক সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। কিন’ চলতি মৌসুমে এসব খাল, ছড়া, নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ার কারণে তারা হতাশ হয়ে পড়েছে। পশ্চিম ডিগলিয়ায় নবনির্মিত রাবার ড্যাম এলাকা ঘুরে খালের পাড়ে বসবাসরত বেশ কয়েকটি পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায় এমন এক সময় ছিল খালের পানি দিয়ে আশেপাশের জমিগুলোতে চাষাবাদ ও শাকসবজি উৎপাদন করা সম্ভব হতো। এখন ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র দিয়েও উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। যেহেতু খাল বিল, নদী নালা শুকিয়ে যাওয়ার কারণে পানির স্তর অত্যন্ত নিচে নেমে গেছে বলে তারা দাবি করেন। থাইংখালী খালের পাড়ে বসবাসরত মিয়া হোসেন (৫৫), কলিমুল¬াহ (৪৮)সহ একাধিক পরিবারের লোকজন জানান, থাইংখালী থেকে তেলখোলা জাহালিয়াপাড়া পর্যন্ত প্রায় ১৮টি স্পটে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। এসব বালি উত্তোলনের ফলে খালের পাড় ভাঙন, কৃষি জমি,বসতভিটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে এলাকার খাল সংলগ্ন জায়গাগুলোতে শাকসবজি,তরিতরকারি উৎপাদন করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। খালের পানি না থাকার কারণে কৃষকেরা গভীর নলকূপ স্থাপন করেও চলতি বোরো মৌসুমের জন্য বীজতলা তৈরি করতে পারছে না। এমন অভিযোগ এলাকার শত শত কৃষকের। তারা এ খালটি পুনর্খননের আওতায় এনে এলাকার রবিশস্য উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহিত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তাছাড়া উখিয়ার জোয়ার ভাটার রেজুখাল, দোছরী খাল, হরিণমারা খাল, হিজলিয়া খাল, পশ্চিম ডিগলিয়া খাল, কুমারপাড়া খাল, চাকবৈঠা খাল, বালুখালীর ছড়া, ইনানীর ছোট খালসহ প্রায় ১৩টি খাল, নদী, ছড়া এখন মরুতে পরিণত হয়েছে। কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সাইফুল আশরাফ জানান, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা আশ্রয়কে কেন্দ্র করে উখিয়ার বিভিন্নস্থানে প্রায় শতাধিক পাহাড় কেটে মাটি পাচার করা হয়েছে। পাশাপাশি পাহাড়ের শ্রেণি পরিবর্তন করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করলেও পাহাড়ের আশে পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় প্রতিয়মান মাটিগুলো ধরে রাখার কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
ফলে এসব মাটি বৃষ্টির পানির সাথে বিভিন্ন খাল ছড়া, নদীতে পড়ে নাব্যতা হারিয়েছে। তিনি বলেন, এসব খালগুলো পুর্নখননের আওতায় আনা না হলে চলতি বোরো মৌসুমেও এর প্রভাব পড়তে পারে। উপজেলা কৃষি অফিসার মো. শরিফুল ইসলাম জানান, বোরো উৎপাদনের পাশাপাশি শাকসবজি উৎপাদনের মাধ্যমে বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও স্থানীয়দের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে স্থানীয় কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্তা নেওয়া হয়েছে। সে সংকটের মাঝেও যাতে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত না হয় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্মকর্তা মো. ইব্রাহিম খলিল জানান, খাল, নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি অব্যবস্তাপনা ও সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকির অভাবকে দায়ী করছেন। তিনি বলেন, কৃষক বাঁচাতে হলে খাল নদী, ছড়া খনন করে পানির উৎস সৃষ্টি করার জন্য সংশি¬ষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।

পাঠকের মতামত: