ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের

মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার ::
সবে মাত্র ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে ইমন এখনো ঠিকমত  বেঞ্চের সাথেই সক্ষতা গড়ে উঠেনি। আর নতুন পরিবেশে কাউকে বন্ধু হিসাবে আপন করে পায়নি কিন্তু এর মধ্যে তার কাছে কড়া বার্তা এসেছে নির্দিষ্ট শিক্ষকের কাছেই প্রাইভেট পড়তে হবে। আবার অন্যদিক থেকে আরো কড়া সতর্কতা সেই শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়লে সামনের দিকে ভাল যাবে না। তাই অনেকটা হতভম্ভ সে। শুধু ইমন নয় তার মত অনেকে এই বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। এটা বলছিলাম কক্সবাজারের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্টান কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কথা। একই অবস্থা আরেক সেরা স্কুল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। এখানে নতুন ভাবে ষষ্ট শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া মেয়েদের ইতি মধ্যে ক্লাসেই কয়েকদফা নির্দেশনা সহ চাপ দেওয়া হয়েছে নির্দিষ্ট শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ার জন্য। আর এসব কাজ করছেন দুই বিদ্যালয়ের কোচিং বানিজ্যের সাথে জড়িত শিক্ষকরা। নিজেরা ক্লাসে ছেলে মেয়েদের বলার পাশাপাশি সিনিয়রদের নিয়ে এমনকি ভয়ভীতি দেখিয়েও প্রাইভেটে আসার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে। আর বিষয়টি ইতি মধ্যে স্কুলে কতৃপক্ষের নজরে এসেছে সে জন্য তাৎক্ষনিক সে বিষয়ে ব্যবস্থাও নিয়েছে স্কুল কতৃপক্ষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিবাবক জানান,আমার ছেলেকে অনেক শখ করে কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম,আল্লাহর রহমতে সে টিকে গেছে এবং কয়েক দিন আগে ভর্তিও হয়েছে এর মধ্যে কয়েক দিন ক্লাস ও করেছে। কিন্তু ২/৩ দিন ধরে দেখছি তার খুব মন খারাপ স্কুলে যেতে চাইছে না। আমি বিষয়টি জানতে চাইলে সে বলে স্কুলে শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়ার জন্য বাধ্য করছে। ইতি মধ্যে কয়েকজন শিক্ষক ক্লাসে এসে আমাদের প্রাইভেট পড়তে বলেছে। এখন চিন্তা করছি কোন স্যারের কাছে পড়বো।
আবার যদি একজন শিক্ষকের কাছে পড়ি সে কারনে অন্য শিক্ষক রাগ করছেন কিনা উনারা যদি আমাকে কোন খারাপ ভাবে দেখে? সে কারনে চিন্তাই আছি। পরে সেই অভিবাবকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেনীতে গিয়ে বেশ কয়েক জন ছাত্রের সাথে কথা বলে জানা গেছে মর্নিং শিফটের ষষ্ঠ শ্রেণী শিক্ষক জসিম উদ্দিন এবং মৈত্রি চক্রবর্তী তার স্বামী সুমন তালুকদার আর ডে শিফটের শ্রেণী শিক্ষক ইব্রাহিম খলিল সহ আরো কয়েক জন তাদের নিজেদের এবং অনেকে কোচিং বানিজ্যের সাথে জড়িত শিক্ষকদের পক্ষে নতুন আসা ছাত্রদেরকে প্রাইভেট পড়ানোর কথা বলেছে। অন্যদিকে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ডে শিফটে আবু সফিয়ান এবং এ্যলি বড়–য়া, আর মর্নিং শিফটে ইকবাল ফারুক আর ইয়াসমিন আক্তার নতুন আসা শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করছে বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে।
এদিকে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন,আমরা কয়েকদিন মাত্র ক্লাস করেছি এর মধ্যে শিক্ষকরা নিজে এবং অনেক সিনিয়ররা এসে আমাদের বিভিন্ন শিক্ষকের প্রাইভেট রেইট,সুবিধা এবং তাদের পড়ানোর বিভিন্ন বিষয়ে বলেছে। আবার অনেকে একটু ধমক দিয়েও বলেছে তাদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে সামনের দিনে সমস্যা হতে পারে।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ কালে কক্সবাজার সিটি কলেজের একজন অধ্যাপক বলেন,আমার ছেলে কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে এখন ঢাকার একটি কলেজে পড়ছে। সে স্কুলে পড়াকালিন আমি এই সমস্যার স্বীকার হয়েছিলাম। এবং একবার পরীক্ষায় আমার ছেলেকে ৬৬ নাম্বার দেওয়া হয়েছিল পরে আমি সেই খাতা আবারো মূল্যায়ন করতে দিলে ছেলে ৯৬ নাম্বার পেয়েছিল। এখন ছেলের শিক্ষক হিসাবে আমরা কিছু বলিনি আমি একজন শিক্ষক কিন্তু প্র্ইাভেট নোংরামির কারনে শিক্ষার্থীদের নিয়ে খেলা করা এটা মোটেও মেনে নেওয়া যায় না।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ নাছির উদ্দিন বলেন,বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আর সেটা শুনা মাত্র আমরা স্কুল কতৃপক্ষ থেকে তড়িৎ ব্যবস্থা নিয়েছি আশা করি এই বিষয়ে আর কোন অভিযোগ শুনবেননা। আর কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাম মোহন সেন বলেন,আগে থেকেই আমরা শ্রেণী কক্ষে সবাইকে বলেদিয়েছিলাম এধরনের কোন বিষয় থাকলে আমাকে জানানোর জন্য তবে এখনো পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। আর সত্যি যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে তা খুবই দুঃখ জনক।
এদিকে শুধু এই দুই উচ্চ বিদ্যালয় নয় শহরতলী সহ আরো অনেক স্কুলে ইতি মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের টার্গেট করেই কোচিং বানিজ্যরত শিক্ষকরা দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এ ব্যপারে কক্সবাজারের সিনিয়র আইনজীবি সাবেক পিপি এড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গির বলেন,শিক্ষক হচ্ছে জাতি গড়ার কারিগর। উনাদের নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক না তবে কোন অনিয়ম অব্যবস্থাপনা হলে সেটা নিয়ে আমরা সোচ্চার থাকবো। আর প্রাইভেট পড়াতে হলে নিজেদের যোগ্যতার বা সৃস্টিশীল কর্মকান্ড দেখলে ছাত্রছাত্রীরা এমনিতেই সেই স্যারের কাছে যাবে স্যারকে ছাত্রদের কাছে আসতে হবে কেন। আর কক্সবাজারে কোচিং বানিজ্য নিয়ে অনেক আগে থেকে সাধারণ অভিবাবকদের মাঝে বিরুপ ধারনা আছে সেই খারাপ ধারনা থেকে ফিরিয়ে আনা শিক্ষকদেরই দায়িত্ব। আর সব শিক্ষক এক নয় হাতে গুনা কয়েক জন শিক্ষক কোচিং বানিজ্যের সাথে জড়িত। আমরা আশা করি সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে।

পাঠকের মতামত: