ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

ঈদগাঁওয়ের ৯ গ্রামে চলছে অপহরণ আতংক ! ঘর ছেড়ে পালাচ্ছে নারীরা

শাহিদ মোস্তফা শাহিদ, সদর ::

কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও এবং পার্শ্ববর্তী রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নসহ প্রায় ১০ গ্রামের বসতবাসকারীদের মাঝে চলছে অপহরণ আতংক। ভয়ে সন্ধ্যার পর নিরাপদ স্থানে ছুটছে ২ গ্রামের শত শত নারী। প্রতিরাতে বিভিন্ন বসতবাড়ীতে হানা দিচ্ছে সশস্ত্র ডাকাত দল।ডাকাতিতে ব্যর্থ হলে বাড়ির গৃহস্থ কিংবা যাকে পায় ধরে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দিচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।প্রশাসনের রহস্যজনক ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সু নিদিষ্ট প্রমাণ সহকারে কেউ অভিযোগ অথবা মামলা না করায় সহজেই আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না।তারপরও পুলিশ সন্ধ্যার পর থেকে স্পর্শকাতর এলাকায় টহল জোরদার রেখেছে ।

সূত্রে জানা যায়, ২ জানুয়ারী গিয়াস উদ্দিন প্রকাশ মজুম তাহের ও ফরিদুল আলমকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর হতে বেপরোয়া হয়ে উঠে পাহাড় কেন্দ্রীক এ চক্রটি।এর দুইদিন পর গভীর রাতে কালির ছড়া এলাকার দেলোয়ারের বাড়ীতে হানা দেয়। যদিও বা ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায় চক্রটি।অনুরূপ দুইদিন পর রশিদ নগর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের বৃহত্তর পাহাড়তলী এলাকায় রাত ১০ টার দিকে প্রবেশ করলে স্থানীয় লোকজন তাৎক্ষনিক মসজিদের মাইকে প্রচার করে দিলে পিছু হটে ডাকাতদল।এভাবেই প্রতিনিয়ত অপহরণ ও ডাকাতির চেষ্টার ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে অজানা আতংক বিরাজ করছে বলে জানান কালির ছড়া এলাকার বাসিন্দা যুবনেতা জামিল উদ্দীন। তিনি আরো বলেন প্রতিদিন সন্ধ্যাঘনিয়ে আসলে  পূর্ব পাড়া এবং শিয়া পাড়া এলাকার শত শত  নারী নিরাপদেে ছুটে আসে।

সরেজমিন রশিদ নগরের পাহাড়তলী,ঈদগাঁওয়ের কালির ছড়া, ভূতিয়া পাড়া,পূর্ব পাড়া,শিয়া পাড়া, অফিসের মোরা,চান্দের ঘোনা,ভাদিতলা,ভোমরিয়া ঘোনাসহ বেশ কয়েকটি পাহাড় বেষ্টিত বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি গ্রামে সন্ধ্যার পর নেমে আসে অমাবস্যার রাত।এক মিনিট সময় যেন তাদের কাছে বছরের সমান হচ্ছে। আলী আকবর ফকির নামের এক বয়োবৃদ্ধ জানান,অতীতের চেয়ে এখন অনেক বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে পাহাড়ী অস্ত্রধারীরা।সুযোগ বুঝে হানা দিচ্ছে বিভিন্ন বসতবাড়িতে। চারদিন আগে তার বাড়িতেও হানা দিয়েছে বলে জানায় আলী আকবর।

ধরে নিয়ে যাচ্ছে অসহায় দরিদ্র লোকজনকে।মুক্তিপণ দিতে দেরী হলে চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন।এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে তিনি প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহযোগী চান।রশিদ নগরের ব্যবসায়ী এমদাদুল হক জানান,গত দু’দিন আগেই তার এলাকায় সশস্ত্র সজ্জিত হয়ে ১৪/১৫ জনের মুখোশ পরিহিত ডাকাত দল প্রবেশ করে।বিষয়টি স্থানীয়রা আচ করতে পেরে চারদিক থেকে মসজিদের মাইকে প্রচার করে দিলে পিছু হটে ডাকাতদল। পরে রামু থানাকে অবহিত করলে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। সরেজমিন আরকান সড়কের পুর্বে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে গহীন জঙ্গলে প্রবেশ করে এ প্রতিনিধি। সেখানে জীবিকার তাগিদে যুদ্ধ করা কাঠুরিয়াদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া যায় বাইশারী,ঈদগড়,রশিদ নগর,জোয়ারিয়া নালা,গর্জনিয়া,সদরের ঈদগাঁও,ভারুয়াখালীর উল্টা খালী ইসলামাবাদ ইউনিয়ন গজালিয়া এলাকার আনুমানিক ২০ মত অপহরণকারী চক্রের সদস্য সক্রিয় আছে। তারা পাহাড়ী জনপদ ঈদগড় সড়কের হিমছড়ি ঢালার পুর্বে,ভাদিতলার পুর্বে গহীন অরন্যে,হলহাজী ঘোনা,মুরুইঙ্গা কোনা,জইল্লার জোম,লইয়া ঘোনা,জোয়ারিয়ানালার পূর্বে বাহাতের ঝিরি,বাককলসহ বিভিন্ন পাহাড়ে সশস্ত্র অবস্থান করে থাকে।গহীন অরন্য আর অগনিত পাহাড় বেষ্টিত হওয়ায় তাদের অবস্থান নিশ্চিত করতে পারে না প্রশাসন। তারা প্রতিদিন, প্রতি ঘন্টায় স্থান বদল করেও বলে জানান অপহরনের শিকার ছৈয়দুল হক নামের এক ভিকটিম।

স্থানীয় কালির ছড়া এলাকার বাসিন্দাদের ধারণা বিগত দুই বছর আগে হলহাজী ঘোনা নামক একটি পাহাড় ঘেরাও করে পুলিশের সহযোগিতায় দুইজনকে আটক করা হয়েছিল। সেদিন গনধোলাইতে ইসলামাবাদ ইউনিয়নের গজালিয়া এলাকার লাল পুতু নামের এক ডাকাত মারা যায়। মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে ঐ চক্রটির টার্গেট করে বসে কালির ছড়ার জনগণের ওপর। সে থেকে অধ্যবদি ১০ জনের মত দরিদ্র শ্রমিককে অপহরণ করা হয়েছে। মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দিচ্ছে অপহৃতদের।এ প্রবণতা ক্রমশ বাড়তে থাকাই স্বাভাবিক চলাচল ও বসাবাস করতে অজানা আতংক বিরাজ করছে উপরোক্ত এলাকার বাসিন্দাদের।কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী নিয়ে বেকায়দায় পড়ছে অভিভাবক মহল।সচেতন এলাকাবাসীর অভিমত আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডাকাত ও অপহরণ চক্রের সদস্যদের আস্তানা শনাক্ত করা যেতে পারে।সে ক্ষেত্রে প্রশাসনকে এগিয়ে আসারও অনুরোধ জানান লোকজন। এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, পুলিশ সার্বক্ষনিক টহলে আছে,তাদের চিহ্নিত করনের চেষ্টাও চলছে। গহীন জঙ্গলে একাধিক বার অভিযান চালানো হয়েছে। মুহূর্তে মুহূর্তে স্থান পরিবর্তন করায় সহজেই আটক করা যাচ্ছে না।তিনি অপহরণ চক্রের সদস্যদের ধরতে স্থানীয় সাহসী ব্যক্তিদের সহযোগিতা কামনা করে আরো বলেন,রাত যতই গভীর হোক নিদিষ্ট স্থানে অবস্থানের সংবাদ পেলে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে অভিযানে ঢুকে পড়বে পুলিশ। রামু থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোঃ লিয়াকতের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু মুঠোফোনে সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজার সদর-রামু সার্কেলের এএসপি আদিবুল ইসলাম  বলেন,বিষয়টি নজরে আছে,এসব অপকর্মে কারা কারা জড়িত থাকতে পারে এমন ব্যক্তিদের বিষয়ে তদন্তও চলছে। জেলা পুলিশ প্রশাসন সার্বক্ষনিক প্রস্তুত আছে যত পরিমাণ ফোর্স প্রয়োজন হয় অভিযানে নামানো হবে।

পাঠকের মতামত: