ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় সরিষার বাম্পার ফলন: বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে হলুদের ছায়া

এম.মনছুর আলম, চকরিয়া:
চকরিয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকায় সরিষার ব্যাপক আবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন জনপদে প্রায় তিনশত হেক্টর জমিতে এ সরিষার আবাদ করা হয়। পুরো বিস্তৃর্ণ মাঠ জুড়ে হলুদের রংয়ে ছেয়ে গেছে । সরিষা ফুলের তেমন গন্ধ না ছড়ালেও সরিষা ক্ষেতের দৃশ্য যেন আকৃষ্ট করছে প্রকৃতি প্রেমিদের। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভাল ফলনের আশাও করছেন চাষিরা। ইতোমধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেতে সরিষার ফুলও ফুটেছে।

স্থানীয় কৃষক ও কৃষি বিভাগ সূত্রে জানাগেছে , প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সরিষা চাষে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এতে করে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে ফুটেছে হাসির ঝিলিক। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টদের মনিটরিংয়ের কারণে বর্তমানে সরিষা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কম খরচে স্বল্প সময়ে সরিষা চাষাবাদে লাভজনক হওয়ায় এ চাষের দিকে ঝুকছে প্রান্তিক কৃষকরা। গ্রামের বেশির ভাগ পতিত জমিতে সরিষা চাষ করে এবছর স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার সাহারবিল, ফাঁসিয়াখালী, কৈয়ারবিল, বিএমচর, পূর্ব বড় ভেওলা, কোনাখালী, বরইতলী, ডুলাহাজারা, চিরিংগা ইউনিয়ন ও চকরিয়া পৌরসভাস্থ শতাধিক স্থানে প্রায় তিনশত হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করেছেন প্রান্তিক কৃষকেরা।

বিএমচর এলাকার কৃষক দুলাল বলেন, তিনি এ বছর ৪০শতক জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন।এ সরিষা আবাদে সার, বিষসহ তার খরচ পড়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা। তিনি আশা করছেন আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবছর সরিষা ভাল ফলন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

এছাড়া সাহারবিল ইউনিয়নের প্রান্তিক কৃষক মো: সাকের উল্লাহ জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছরেও এই ইউনিয়নের বিভিন্ন জনপদে প্রায় ৪০-৪৫ জন কৃষক সরিষা চাষ করেছে। তাদের জমির পরিমাণ অন্তত ৭০ একরের বেশি হবে। সাহারবিল পরিষদ সংলগ্ন এলাকায় নিজের জমিতে কয়েকবছর ধরে উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা চাষ করছেন কৃষক সাকের উল্লাহ।

তিনি বলেন, কম খরচ ও অল্প দিনের পরিচর্যার মাধ্যমে অধিক লাভবান হওয়া যায় এ সরিষা চাষে। তাই অন্যান্য সবজি চাষের পাশাপাশি কৃষকরা জমিতে সরিষা চাষ করছেন।।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি বর্গাচাষী সমিতির সভাপতি মো.মহিউদ্দিন পুতু বলেন, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মাটির উর্বরতা ভাল। এ কারনে এখানে দেশি ও উচ্চ ফলনশীল দুই জাতের সরিষা চাষ বেশি হয়ে থাকে। তবে দেশী জাতের চেয়ে উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা চাষে লাভ বেশি হয়। তিনি বলেন, সরিষা চাষে খরচ কম ও বেশি পরিশ্রম এবং পরিচর্যা করা লাগে না। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় সরিষা চাষে এ বছর ফলনও ভালো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন,পরিবেশ বিধবংসী তামাকের বদলে কৃষকরা চাইলে কম খরচে অধিক লাভবান সরিষা চাষে আরো বেশি করে সম্পৃক্ত হতে পারে। এতে করে কৃষকরা লাভবান হবে। বন্ধ হবে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক তামাক চাষ।

জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো.আতিক উল্লাহ বলেন, মূলত এই উপজেলাটি কৃষি প্রধান একটি উপজেলা। এখানে নানা জাতের সবজি আবাদের পাশাপাশি সরিষারও আবাদ হয়। সরিষা চাষে বীজ বপন থেকে ফলন হওয়া পর্যন্ত মোট সময় লাগে ৭০ থেকে ৭৫দিন। প্রতিবছর নভেম্বর মাসের শুরুতে চাষ দিলে মধ্য জানুয়ারির মধ্যে ফলন ঘরে তোলা যায়।

তিনি বলেন, কম পরিশ্রমে মাধ্যমে লাভ বেশি হয় এ সরিষা চাষে। চলতি মৌসুমে কৃষকরা মাঠ পর্যায়ে এ বছর বেশি আবাদ করেছে উচ্চ ফলনশীল বিআর-চৌদ্দ ও পনের। সরিষা কৃষকের স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে । আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

পাঠকের মতামত: