ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

পেকুয়ায় বনকর্মীদের সহায়তায় পাচার হচ্ছে মাদার ট্রি-গর্জন: উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া-কুতুবদিয়া ::

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে নির্বিচারে পাচার ও হরিলুট হচ্ছে সরকারী অতি মূল্যবান বৃক্ষ মাদার ট্রি-গর্জন। স্থানীয় প্রভাবশালী গাছ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও বনকর্মীদের সহায়তায় মাদার ট্রি পাচার অব্যাহত রয়েছে। পেকুয়া উপজেলায় অবস্থিত চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের অধীন বারবাকিয়া বন বিট, পহরচাঁদা বিট ও টইটং বন বিটের অধীন রিজার্ভ ফরেষ্টের বিভিন্ন স্পট থেকে মাদার ট্রি গর্জন সহ নানা প্রজাতির গাছ বন বিভাগের স্থানীয় অফিসগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে দিনে ও রাতে বিভিন্ন কৌশলে সরকারি নিয়ম কানুনকে তোয়াক্কা না করে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পরিবহন যোগে পাচার করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বন বিভাগের সংরক্ষিত বনায়ন থেকে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা দিনেদুপুরে প্রকাশ্যে গাছ পাচার করলেও বন বিভাগ কোন দেখেও না দেখার ভান করে ‘কুম্ভকর্ণের’ মতো বসে থাকে।

জানা গেছে, বনায়ন থেকে পাচার রোধে বন কর্মকর্তাদেরকে বিশেষ কোন জায়গা থেকে গাড়ি নম্বর সহ জানানো হলে মাঝে মধ্যে দুই একটি গাড়ি লোক দেখানো ও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে খুশি করার জন্য আটক দেখানো হলেও মোটা অংঙ্কের টাকার বিনিময়ে এসব কাঠ ও গাছ ভর্তি গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়। ফলে সরকার হারাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিভাগের অধীন পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া রেঞ্জের অধীন বারবাকিয়া বন বিট, টইটং বনবিট ও পহরচাঁদা বন বিটের অভ্যন্তরের বিভিন্ন স্পট থেকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও সামজিক বনায়ন থেকে গত তিন মাসের ব্যবধানে বিপুল পরিমাণ গাছ নিধন করে পাচার করা হয়েছে। এসব গাছ পাচারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তা রয়েছে সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। গত কয়েক দিন পূর্বে বারবাকিয়া বন বিটের অধীন আবাদীঘোনা ও লাইনের শিরা এলাকা থেকে ট্রলিতে করে প্রায় ১০/১২ টি মাঝারি সাইজের মাদার ট্রি গর্জন দিনেদুপুরে প্রকাশ্যে পাচার করা হয়েছে। এসব গাছ পেকুয়া বাজার, রাজাখালী আরবশাহ বাজার ও বারবাকিয়া বাজার কেন্দ্রীক কিছু অসাধু কাঠ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বারবাকিয়া বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল গফুর মোল্লা গত ৭/৮ মাস পূর্বে যোগদান করার পর থেকে গাছ পাচারকারীরা তার সাথে আঁতাত করে দিনেরাতে সমানতালে সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে গাছ নিধন পাচার অব্যাহত রেখেছে। স্থানীয় গাছ চোর চক্র ও অবৈধ কাঠ ব্যবসায়ীদের সাথে বারবাকিয়ার রেঞ্জার আবদুল গফুর মোল্লার সাথে বিশেষ সখ্যতা গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি সময়ে পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া বন বিট, টইটং বন বিট ও পহরচাঁদা বন বিট থেকে বন বিভাগের গাছ পাচারের অতীতের সকল রেকর্ডকে ভঙ্গ করেছে। এসব বন বিটের ফরেষ্ট গার্ড ও বিট কর্মকর্তাদের সাথে স্থানীয় গাছ চোর সিন্ডিকেটের আঁতাত রয়েছে।

টইটং ইউনিয়নের ধনিয়াকাটা গ্রামের বাসিন্দা জহির উদ্দিন অভিযোগ করেছেন, ধনিয়াকাটা পূর্ব পাড়ার সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়তই সরকারী বনাঞ্চলের গাছ পাচার হয়। বন বিভাগকে গাছ পাচার রোধে ব্যবস্থা নিতে বললেও তারা কথা শুনেনা।

বারবাকিয়ার বাসিন্দা মো: ইলিয়াছ অভিযোগ করে জানান, বারবাকিয়ার রেঞ্জ কর্মকর্তার কারণেই বনাঞ্চল নিধনের পাশাপাশি জবর দখলও হচ্ছে। তিনি রেঞ্জারের অপসারণ করতে উর্দ্ধতন বন বিভাগের হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল গফুর মোল্লার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন‘ বন বিভাগের জনবল সংকটের কারণে দায়িত্ব পালন হিমশিম খাচ্ছি। মাদার ট্রি- গর্জন পাচারে গাছ চোরদের সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এসময় কোন ধরনের সদুত্তর না দিয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

পাঠকের মতামত: