ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

অবৈধ ইটভাটায় বিপন্ন পরিবেশ

এম. বেদারুল আলম, কক্সবাজার ::
জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ছে অবৈধ ইটভাটা। নিয়মনীতি না মেনেই অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। অবৈধভাবে কৃষি জমিতে ইটভাটা তৈরির কারণে  কমছে চাষাবাদের জমি। এছাড়া, ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহারে কমছে গাছ। ফলে বিরান ভূমিতে পরিনত হচ্ছে বনাঞ্চল। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে কক্সবাজারের ৬০ শতাংশ ইটভাটার পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। যদিও উচ্চ আদালতে রীট করে কিছু কাগজপত্র সৃজনের মাধ্যমে চলছে এ সব ইটভাটা।
পরিবেশ আইন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা প্রস্তুত আইন অনুযায়ি সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি ও কৃষিজমিতে ইটভাটা তৈরি করা যাবে না। এছাড়া, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা সদর এলাকায়ও ইটভাটা তৈরি করা যাবে না। অন্যদিকে ইট তৈরির জন্য কৃষিজমি, পাহাড়, টিলা থেকে মাটি কেটে কাঁচামাল হিসেবে এবং জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহারও নিষিদ্ধ।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মোঃ সাইফুল আশ্রাব জানান, কক্সবাজার ও বান্দরজেলায় ১৮১ টি ইটভাটার মধ্যে কক্সবাজারের ৮ উপজেলায় ১৩০টির মত ইটভাটা আছে। এদের মধ্যে ৪০ শতাংশের রয়েছে পরিবেশের ছাড়পত্র। ৬০ শতাংশের কোন পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। উক্ত ইটভাটার মালিকরা উচ্চ আদালতে মামলা করে চাঠলাচ্ছে এসব ইটভাড়া। এর মধ্যে কক্সবাজার সদরে ২৭টির মধ্যে ১৭টি, রামুর ৪০টির মধ্যে ২৫টি, পেকুয়ার ৭টির মধ্যে ৪টি, চকরিয়ার ৫২টির মধ্যে ৩৬টি, উখিয়া- টেকনাফের অধিকাংশ ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন অনুমতি নেই বলে জানা গেছে। এছাড়া কুতুবতিয়ার ১টি, মহেশখালীর ১টি ইটভাটা চলছে দায়সারাভাবে। এর মধ্যে অনেক ইটভাটার চিমনি এখনও উন্নত প্রযুক্তিতে রুপান্তর করা হয়নি। ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ ও অতিরিক্তি মাত্রার সালফারযুক্ত কয়লা ব্যবহার হচ্ছে। কাঠ ব্যবহারের ফলে গাছের সংখ্যা কমছে। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। পরিবেশ আইন  অমান্য গড়ে উঠা এসব ইটভাটার কারনে কমে যাচ্ছে পাখির অভয়ারণ্য, কৃষি জমি ও উজাড় হচ্ছে বিশাল বনভূমি। ফলে পরিবেশগত বিপর্যয়সহ জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে ফুসফুসের সমস্যা, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ হতে পারে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় বয়স্ক ও শিশুরা। ইটভাটার ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছে গাছের ফল ও  পাখির আবাস।
এদিকে চিমনিবিশিষ্ট ভাটা ২০০১ সাল থেকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। বেশির ভাগ ড্রাম চিমনিবিশিষ্ট ভাটা রয়েছে রামু, চকরিয়া এবং উখিয়ায়। এগুলো নির্মান করা হয়েছে নদীর কাছে, উপকূল,  পাহাড়ি ও জনবহুল এলাকায়। এসব ভাটায় জমির উপর স্তরের মাটি ব্যবহার করায় জমির উর্বিরা শক্তি হ্রাস পচ্ছে , কমছে ফসল উৎপাদন ক্ষমতা
বিশেষজ্ঞদের মতে, জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ফেলা হলে আগামী ২০ বছরেও সেই জমির প্রয়োজনীয় জৈব পদার্থের ঘাটতি পূরণ হবে না। ফসলি জমির মাটির উপরি অংশ কাটা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে জমির ফলন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকাংশে কমে যাবে। এতে হুমকির মুখে পড়বে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা।
অবৈধ ইটভাটা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের এডি সাইফুল আশ্রাব বলেন, অনেক ভাটায় মামলার কারনে মূলত আমরা অভিযান চালাতে পারছিনা। ভাটার মালিকরা ২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ইটভাটা প্রস্তুত আইনে হাইকোর্টে একটি নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রায় ৬০ শতাংশ ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে প্রতিদিনই আমরা বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ ভাটা চিহ্নিত করে আমাদের টিম অভিযান চালাচ্ছে। গতকাল ও (৪ নভেম্বর ) নাইক্ষংছড়িতে অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে শহরের তারাবনিয়ারছড়ার আসিফ মোঃ সাইফুল নামের মালিকানাধীন ইটভাটাটি বন্ধ করে দিয়েছি।
কক্সবাজারের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় আগামি প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে অনুমোদনহীন ইটভাটা বন্ধ জরুরি হয়ে দাড়িয়েছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সচেতনমহল।

পাঠকের মতামত: