ঢাকা,বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়া-পেকুয়া আসনে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি ?

আওয়ামীলীগের ২৫ নেতাসহ নৌকার হাল ধরতে জোটের ২৮ নেতার দলীয় মনোনয়ন জমা
নিজস্ব প্রতিনিধি, চকরিয়া :: বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১৪ সাল। এই সময়ে ১০টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্টিত হয়েছে। এ নির্বাচনে প্রথমবার ১৯৭৩ সালে অনুষ্টিত নির্বাচনে নৌকা প্রতিক নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন ডা.শামশুউদ্দিন চৌধুরী। অপর ৯টি নির্বাচনের ৮টিতে অংশ গ্রহণ করে একবারও নৌকা প্রতিকের প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেননি। তবে,সর্বশেষ ১০ম সংসদ নির্বাচনে মহাজোটগত কারণে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনটিতে নৌকা প্রার্থী দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করায় জাতীয় পার্টির মৌলভী মো.ইলিয়াছ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

নেতৃত্বের কোন্দলে জর্জরিত চকরিয়া-পেকুয়া আসনটিতে নৌকা প্রতিক পেতে এবার ২৫জন নেতা দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ পূর্বক জমা দিয়েছেন।এছাড়া নৌকা প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে জেপি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য এ এইচ সালাহউদ্দিন মাহামুদ ও ওয়ার্কাস পার্টির কক্সবাজার জেলা সভাপতি হাজী আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলমও নিজ দল থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। মহাজোটের এই ২৭নেতা তিনটি দল থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিলেও নৌকার হাল কে ধরবেন তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পক্ষান্তরে মহাজোটগত নির্বাচনে অংশ নেয়া জাতীয় পার্টির বর্তমান এমপি মোহাম্মদ ইলিয়াছও লাঙ্গন প্রতিক নিয়ে এই আসনটিতে মহাজোটের প্রার্থী হতে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে জোর লবিং করছেন।

আওয়ামীলীগ থেকে সংসদ সদস্য হয়ে নির্বাচন করার প্রত্যাশায় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব জাফর আলম, কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন,জেলা আওয়ামীলীগ নেতা অ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেন, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক লায়ন কমর উদ্দিন আহমদ, মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা উম্মে কুলছুম মিনু, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক খালেদ মোহাম্মদ মিথুন, শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম সজীব, সদস্য যথাক্রমে এটিএম জিয়া উদ্দিন চৌধুরী জিয়া, রাশেদুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, সহ-সভাপতি সরওয়ার আলম, যুগ্ন-সম্পাদক আজিমুল হক,চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক শফিকুল আলম বাহার, পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, মাতামুহুরী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহসিন বাবুল, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য জাহেদুল ইসলাম লিটু, ছাত্রলীগ নেতা অ্যাডভোকেট ফয়সাল সিদ্দিকী, চকরিয়া পৌরসভা যুবলীগের সহ-সভাপতি খলিল উল্লাহ চৌধুরী, সহকারী এটর্ণি জেনারেল জেসমিন সুলতানা শামসাদ ও যুবলীগ নেতা মোজাফ্ফর হোসনে পল্টু।

এসব প্রার্থীর প্রাথমিক দলীয় মনোনয়ন আজ বুধবার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনী বোর্ডের সাথে সাক্ষাতের পর প্রাথমিকভাবে দৃশ্যমান হতে পারে নৌকার মাঝি কে হচ্ছেন। দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পর এলাকায় আলোচনা হচ্ছে আওয়ামীলীগ থেকে জাফর আলম অথবা সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপির মধ্যে যেকোন একজন দলীয় মনোনয়ন পেতে পারে। জোট-মহাজোটকে আসনটি ছাড়া হলে সালাহউদ্দিন মাহামুদ অথবা মৌলভী মোহাম্মদ ইলিয়াছ প্রার্থী হতে পারেন।

নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, দলীয়ভাবে প্রথম পর্যায়ে প্রার্থী দেয়া হলেও পরে গণভবনে ফের সাক্ষাত হবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাথে শেখ হাসিনার।ওই বৈঠকে দল থেকে দেয়া প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার পত্রও সংগ্রহ করে রাখা হবে। যাতে জোট-মহাজোটের প্রার্থীকে আসনটি ছাড়লেও প্রত্যাহার নিয়ে ঝামেলার সৃষ্টি না হয়।

এদিকে, টানা ১০বছর ধরে নৌকা প্রতিক নিয়ে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করতে চকরিয়া-পেকুয়ার ২৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় বিরামহীন কাজ করে যাওয়া জাফর আলম একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্যে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকেও পদত্যাগ করেছেন।

জাফর আলম বলেন, একসময়ের বিএনপি ঘাটি খ্যাত কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনটিতে আরাম-হারাম করা কাজ করে এখন আওয়ামীলীগের ঘাটিতে পরিণত করেছি। তিনি দৃঢ় বিশ্বাস ও নেত্রীর উপর আস্তা রেখে বলেন, আমাকে মনোনয়ন দেয়া হলে দীর্ঘ ৪৫ বছর পর আলোচিত এই আসনটি শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারবো।

চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিন বাবুল, পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম ও চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু অভিন্ন বক্তব্যে বলেন, দলীয় নেতা-কর্মীদের দুর্দিনে কর্মীরা সর্বদা কাছে পেয়েছেন জাফর আলমকে। এছাড়াও জাফর আলম টানা ১০বছর সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কাজ করার পাশাপাশি সামাজিক সংগঠন ও সাধারণ মানুষের আস্তাও অর্জন করেছেন নিজ কর্মগুনে। তাই তাকে নৌকা প্রতিক দেয়া হলে এই আসনটিতে জয়লাভ করা সহজ হবে।

জেপির প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচ সালাহউদ্দিন মাহামুদ বলেন, আমার দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নির্বাচন কমিশনে লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছেন জেপি প্রার্থীরা নৌকা প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন। তিনি প্রার্থী হতে পারেন এমন সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলে দাবি করে বলেন, যদি কোন কারণে আমাকে মনোনয়ন না দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অন্য কাউকে মনোনয়ন দেয়া হলেও তার পক্ষে কাজ করবো।

জাপার (এরশাদ) মৌলভী মোহাম্মদ ইলিয়াছ এমপি বলেন,আমার দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে মহাজোট থেকে আমাকেই প্রার্থী দেয়া হবে। প্রার্থী দিলে এবং ভোটের মহাজোটের সকল নেতা-কর্মীদের নিরলস সহায়তা পেলে আবারো চকরিয়া-পেকুয়ায় জয়লাভ করবো।

পাঠকের মতামত: