ঢাকা,রোববার, ১৯ মে ২০২৪

বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে দেশ সেরা রাজাখালী স: প্রা: বিদ্যালয়, লবণ মাঠে কাজ করা কিশোররাই ছিনিয়ে এনেছে সোনার কাপ

Cox Gold-00তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজার :::

একেই বলে অন্ধকারে আলো। যেখানে যোগাযোগেরই ভাল ব্যবস্থা এখনো পর্যন্ত গড়ে উঠেিেন, রিতীমত এক বন্ধুর এলাকা। যেখানে খেলাধুলার প্রশস্ত একটি মাঠের অভাব সর্বোপরি আধুনিক সুযোগ সুবিধাও নেই। এমন একটি অজপাড়া গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিশোর খেলোয়াড়গনই ছিনিয়ে এনেছে জাতীয় মানের বিজয়। তাও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় টুর্নামেন্ট-২০১৫ এর চ্যাম্পিয়নশীপ। সারা দেশের ৬০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে গোল্ডকাপ চ্যাম্পিয়নশীপের বিজয় ছিনিয়ে আনা প্রতিষ্টানটি হচ্ছে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুচ্ছফাহ গতকাল বুধবার কালের কন্ঠকে বলেন-‘বলতে আমার লজ্জা নেই। লবণ মাঠে কাজ করেই ক্লাশে আসা দীনহীন পরিবারের আমার কিশোরগুলো সোনার কাপ জিতেছে। সারা দেশের হাজার হাজার স্কুলের মধ্যে আমারই সোনার ছেলেরা নিয়ে এসেছে জাতীয় পর্যায়ের এই চ্যাম্পিশনশীপ।’ তিনি বলেন, গতকাল বুধবার কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের সংবর্ধনা অনুষ্টানে যোগ দেয়ার জন্য বিজয়ী কিশোর (শিক্ষার্থী) ১৭ জন খেলোয়াড়দের একত্রিত করতে গিয়েও আমার মাথায় বাজ পড়ার অবস্থা। কেননা ছেলেদের অনেকেই তখনও লবণ মাঠে কাজ করছিল। সেই লবণ মাঠ থেকেই আমি তাদের ডেকে ডেকে তুলে এনেছি। পিতার সাথে মাঠে কাজ না করলে ওরা খাবে কিভাবে। অনুরুপ অনেকেই পিতার সাথে পাহাড়ে যায় এবং ক্ষেত-খামারে পিতা-ভাইদের সাথে সহযোগি হিসাবে কাজ করে। আর এমন ছেলেগুলোই দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে চ্যাম্পিয়নশীপের গোল্ডকাপ নিয়ে ফিরেছে।

Cox Gold-01কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) আনোয়ারুল নাসের কালের কন্ঠকে জানান, সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিশোর শিক্ষার্থীদের ক্রীড়ামুখি করার লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষাঙ্গণে চালু করে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট। ২০১৫ সালের টুর্ণামেন্টের ফাইন্যাল খেলাটি অনুষ্টিত হয় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু ষ্টেডিয়ামে। টুর্নামেন্টের প্রতিযোগিতায় কক্সবাজারের পেকুয়ার রাজাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিম চ্যাম্পিয়নশীপ অর্জন করে। এদিনের খেলায় উপস্থিত পেকুয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাফায়াত আজিজ রাজু কালের কন্ঠকে বলেন-‘চমৎকার খেলা উপহার দিয়েছিল আমাদের উপক’লীয় এলাকার লবণ মাঠে কাজ করা কিশোর সোনার ছেলেরা। এই খেলায় কিশোর বিভাগে দিনাজপুরের মরিচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রানার আপ হয়।’

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা গতকাল চ্যাম্পিয়নশীপ গৌরব অর্জনকারি পেকুয়ার রাজাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গর্বিত ফুটবল দলের ১৭ জন কিশোর খেলোয়াড়কে সংবর্ধিত করেছে। এ উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্টানে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) আনোয়ারুল নাসের। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন। অনুষ্টানে অন্যান্যের মধ্যে স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক উপ সচিব আবুল ফয়েজ মোঃ আলাউদ্দিন খান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শাহজাহান, পেকুয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাফায়াত আজিজ রাজু, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অনুপ বড়ূয়া অপু, রাজাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোকতার আহমদ প্রমুখ বক্তৃতা করেন। যে রাজাখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিশোর ছাত্ররা প্রতিযোগিতায় লড়ে চ্যাম্পিয়নশীপ অর্জন করেছে সেই বিদ্যালয়টির খেলার মাঠের করুন বিবরণ শুনে জেলা প্রশাসক মাঠটি সংষ্কারের জন্য ২০ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেয়ার ঘোষণা দেন।

Cox Gold-02পেকুয়া উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দুরত্বের রাজাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় ১৯৪০ সালে। চট্টগ্রামের আনোয়ারার জমিদার ও রাজনীতিক মরহুম আতাউর রহমান খান কায়সারের পিতা মরহুম ইয়ার আলী খান চৌধুরী এটি সহ পার্শ¦বর্তী একটি উচ্চ বিদ্যালয় এবং আরো অনেক শিক্ষা প্রতিষ্টান স্থাপন করেন। বিদ্যালয়ের অপ্রশস্ত মাঠ এবং পার্শ্বের একটি ডোবার কারনে এখানে খেলাধুলারও তেমন পরিবেশ নেই। প্রধান শিক্ষক জানান, ২০১৩ সালে এই বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ সংলগ্ন সেই ডোবাতেই একজন কিশোর খেলোয়াড় প্রাণ হারায়। স্থানীয় ক্রীড়ামোদি সিরাজুল কবির কালের কন্ঠকে জানান-‘বিদ্যালয়ের কিশোর খেলোয়াড়দের প্র্যাকটিসের জন্য কোন কোচ নেই। আমি অস্থায়ী কোচ হিসাবে প্রতিযোগিতার আগে মাত্র তিন-চার মাস কিশোর খেলোয়াড়দের প্র্যাকটিস করিয়েছি। তাতেই এরকম চমক দেখানো বিজয় এনেছে আমাদের কিশোরের দল।’

রাজাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এমন বিজয় দেখে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বিদ্যালয়ের দলটি থেকে হুময়ায়ুন কবির রিয়াজ ও শাহীন আলম নামের দুইজন খেলেয়াড়কে বিকেএসপিতে ভর্ত্তি করানোর ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান শাহীন আলম জানান-‘আমি আজও (বুধবার) আমার বাবার সাথে লবণ মাঠে কাজ করতে গিয়েছিলাম। হেড মাষ্টার স্যার আমাকে ডেকে কক্সবাজার এনেছেন। আমি যদি বিকেএসপিতে ভর্ত্তি হতে পারি তাহলে আল্লাহর রহমাতে ভাল খেলতে পারব।’

পাঠকের মতামত: